গত দশ বছরে চট্টগ্রামে পানির উৎপাদন অন্তত চারগুণ বেড়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে নদীর পানির ব্যবহার আশাব্যঞ্জকভাবে বেড়েছে। বেড়েছে পানির মান। কিন্তু নগরীর বহু এলাকায় এখনো পানি পৌঁছেনি। পানির উৎপাদন বাড়লেও নগরীর হাজার হাজার মানুষ পানি না পাওয়ার অবর্ণনীয় দুর্ভোগে রয়েছেন। ওয়াসার পক্ষ থেকে নগরীর প্রতিটি ঘরে পানি পৌঁছানোর জন্য প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন একটি প্রকল্প গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। তবে এজন্য আরো বছর কয়েক অপেক্ষা করতে হবে।
সূত্র জানিয়েছে, বছর দশেক আগে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির উৎপাদন ছিল ১৫/১৬ কোটি লিটার। পরিবেশ এবং প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর হলেও নগরবাসীর চাহিদা মেটানোর জন্য ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করতো ওয়াসা। ৯৬টি ডিপ টিউবওয়েলের মাধমে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পানি উত্তোলন করা হতো। এর পাশাপাশি মোহরা পানি শোধনাগার থেকে ৯ কোটি লিটার পানি পাওয়া যেত। নগরজুড়ে পানির হাহাকার ছিল চোখে পড়ার মতো।
দিনকাল পাল্টেছে। ওয়াসার পানি উৎপাদন ক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ওয়াসা দৈনিক ৫০ কোটি লিটারের মতো পানি উৎপাদন করে। এরমধ্যে মোহরা পানি শোধনাগার থেকে ৯ কোটি লিটারের পাশাপাশি রাঙ্গুনিয়ার শেখ হাসিনা–১ এবং শেখ হাসিনা–২ পানি শোধনাগার থেকে ২৮ কোটি লিটার এবং মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগার থেকে ৯ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হয়। এই ৪৬ কোটি লিটার পানির পুরোটাই তোলা হচ্ছে নদী থেকে। ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলন কমাতে ডিপ টিউবওয়েল বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। ৯৬টি টিউবওয়েলের মধ্যে বর্তমানে ৪৪টির মত চালু রয়েছে। তাও খুব জরুরি না হলে চালু করা হয় না। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার প্রত্যাশিতভাবে কমিয়ে আনা হয়েছে।
চারটি পানি শোধণাগার এবং ৪৪টি ডিপ টিউবওয়েল থেকে ওয়াসা প্রতিদিন গড়ে ৫০ কোটি লিটার পানির উৎপাদন এবং সরবরাহ দেয়া হলেও নগরীর পতেঙ্গা এবং হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা পানি পান না। পতেঙ্গার বিস্তৃত এলাকার মানুষ বহুবছর ধরে নানাভাবে আবেদন নিবেদন করলেও তাদের কাছে ওয়াসার পানি নেই। তাদেরকে স্থানীয়ভাবে টিউবওয়েল বসিয়ে লবনাক্ত পানির উপর নির্ভর করতে হয়। হালিশহর এবং লালখান বাজারের মতো এলাকায়ও পানির কষ্ট রয়েছে।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, চট্টগ্রামে পানির উৎপাদন অনেক বেড়েছে। বর্তমানে ৫০ কোটি লিটার পানি সরবরাহে রয়েছে। আরো ৬ কোটি লিটার পানির উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ভান্ডালজুরী পানি শোধণাগার আগামী মাস কয়েকের মধ্যে চালু হবে।
ওয়াসার পানির মান অত্যন্ত সন্তোষজনক বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশের সবচেয়ে ভালো মানের পানি চট্টগ্রাম ওয়াসা সরবরাহ দেয়। আমরা আইএসও ৯০০১ সার্টিফাইড।
পানির সংকট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ নগরীর কিছু কিছু এলাকার মানুষের পানির কষ্টের কথা স্বীকার করে বলেন, কিছু টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে ওসব এলাকায় পানি দেয়া যায় না। কোথাও উঁচু এলাকায় পানি সরবরাহ দেয়া সম্ভব হয় না। পাম্প হাউজ বসানোর মতো জায়গা না থাকায় কিছু কিছু এলাকায় পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। পানির প্রেসার বাড়ানো সম্ভব না হওয়ায় কিছু কিছু এলাকায় পানির অভাব রয়েছে। এসব সংকট ঘুচানোর জন্য বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় একটি বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরীর প্রতিটি ঘরেই পানি পৌঁছানো সম্ভব হবে। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হতে আরো কিছু সময় লাগবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।