ভুয়া পরোয়ানায় গ্রেপ্তার ঠেকাতে হাই কোর্টের ৭ দফা নির্দেশনা

| বৃহস্পতিবার , ১৫ অক্টোবর, ২০২০ at ৫:১৪ পূর্বাহ্ণ

ভুয়া পরোয়ানায় গ্রেপ্তার ঠেকাতে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসরণ করে সঠিক ও সুস্পষ্টভাবে পরোয়ানা জারি ও কার্যকর করার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছে হাই কোর্ট। এক রিট আবেদনে রুলের শুনানির সময় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ বুধবার এসব নির্দেশনা দেয়। রিট আবেদনকারীর আইনজীবী এমাদুল হক বসির বলেন, এখতিয়ার পরিবর্তন হওয়ায় নির্দেশনা দিয়ে রুলটি রিট এখতিয়ারাধীন বেঞ্চে উপস্থাপন করে শুনানি করতে বলেছেন আদালত। খবর বিডিনিউজের।
হাই কোর্টের ৭ দফা নির্দেশনা : ১. গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রস্তুতকারী ব্যক্তিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৭৫ এর বিধান অনুয়ায়ী নির্ধারিত ফরম সঠিক ও সুস্পষ্টভাবে পূরণ করতে হবে- ১.(ক) যে ব্যক্তি বা যে সকল ব্যক্তি পরোয়ানা কার্যকর করবেন, তার বা তাদের নাম, পদবী ও ঠিকানা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। ১.(খ) যার প্রতি পরোয়ানা জারি করা হচ্ছে তার নাম ও ঠিকানা মামলার নম্বর ও সুনির্দিষ্ট ধারাসহ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
১.(গ) সংশ্লিষ্ট জজ বা ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষরের নিচে নাম ও পদবীর সিলসহ সংশ্লিষ্ট আদালতের সুস্পষ্ট সিল ব্যবহার করতে হবে। ১.(ঘ) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রস্তুতকারী ব্যক্তির (অফিস স্টাফ) নাম, পদবী ও মোবাইল নম্বরসহ সিল ও তার সংক্ষিপ্ত স্বাক্ষর ব্যবহার করতে হবে; যাতে পরোয়ানা কার্যকরকারী ব্যক্তি পরোয়ানার সঠিকতা সম্পর্কে কোনো সন্দেহের উদ্বেগ হলে পরোয়ানা প্রস্তুতকারীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে নিশ্চিত হতে পারেন।
২. গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রস্তুত হলে স্থানীয় অধিক্ষেত্র কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট পিয়ন বহিতে তা এন্ট্রি করে বার্তাবাহকের মাধ্যমে পুলিশ সুপারের কার্যালয় কিংবা সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠাতে হবে। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের বা থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা পিয়ন বহিতে স্বাক্ষর করে তা বুঝে নিতে হবে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রেরণ ও কার্যকর করার জন্য পর্যায়ক্রমে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার কাজে লাগানো যেতে পারে।
৩. স্থানীয় অধিক্ষেত্রের বাইরের জেলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করার ক্ষেত্রে পরোয়ানা জারি করা কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সিলগালা করে এবং অফিসের সিলমোহরের ছাপ দিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পাঠাতে হবে।
৪. সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকতা সিলমোহরের ছাপ দেওয়া খাম খুলে প্রাপ্ত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। তবে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ক্ষেত্রে সন্দেহ হলে পরোয়ানা প্রস্তুতকারীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।
৫. গ্রেপ্তারি পরোয়ানা গ্রহণকারী কর্মকর্তা পরোয়ানা কার্যকর করার আগে পুনরায় পরীক্ষা করে যদি সন্দেহ পোষণ করেন, তবে পরোয়ানা প্রস্তুতকারীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়ে পরোয়ানা কার্যকর করবেন।
৬. গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অনুযায়ী আসামি বা আসামিদের গ্রেপ্তারের পর সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিকটস্থ আদালতে পরোয়ানাসহ হাজির করতে হবে। এবং ম্যাজিস্ট্রেট বা জজ গ্রেপ্তার করা আসামি বা আসামিদের জামিন না দিলে আদেশের অনুলিপিসহ জেল হাজতে পাঠাতে হবে। প্রয়োজনে সম্পূরক নথি তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা আদালতে পাঠাতে হবে।
৭. সংশ্লিষ্ট আসামি বা আসামিদের কোন থানার কোন মামলায়, কোন আদালতের আদেশে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে তা সংশ্লিষ্ট জেল সুপার কিংবা অন্য কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিকারী আদালতকে জানাবেন। পরবর্তীতে আর কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পেলে তা নিশ্চিত হয়ে কার্যকর করবেন জেল সুপার।
আদেশ বাস্তবায়নের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব, আইন সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, মহা-কারা পরিদর্শক ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে বলা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাহাত্তারপুলে ফুটপাত থেকে সরানো হলো গাছের গুঁড়ি
পরবর্তী নিবন্ধঅবৈধ সম্পদ অর্জনে বাবরের মামলা ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ