যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে গিয়ে ভুল সিদ্ধান্তে স্বপ্ন ভাঙে, আর সঠিক পথে থাকলে ভবিষ্যৎ বদলে যায়। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আবেগময় সতর্কবার্তা, আজকাল প্রায়ই খবর আসে–অমুককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে, তমুককে বিমানবন্দরেই আটকে দিয়েছে, কারও শিক্ষাভিসা বাতিল হয়েছে, আমরা হতবাক হয়ে ভাবি–কি এত বড় ভুল হলো? কিন্তু সত্যিটা হলো–ভুল হয় আমাদের সিদ্ধান্তে, ভুল হয় তখনই যখন আমরা স্বপ্নের লোভে অল্পের দিকে দৌড়াই, হাজারো পরিবার বাবা–মায়ের সঞ্চয় ভেঙে, মা–বাবার গয়না বন্ধক রেখে, আত্মীয়–স্বজনের কাছ থেকে ধার করে সন্তানকে পাঠিয়েছে যেন সে পড়াশোনা করে মানুষ হয়, কিন্তু অনেকেই ভুলসঙ্গ, ভুল প্রলোভন, অপরাধ, পারিবারিক ঝগড়া রাজনৈতিক গল্প বানানো, অনুমতি ছাড়া কাজ, মিথ্যা আশ্রয়–এসবের ফাঁদে পা দিয়েছে এবং মুহূর্তেই পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে যায়। যাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে তাদের অনেকেরই শিকার–শিক্ষার্থী হয়েও পড়াশোনা করা হয়নি, ভুল বন্ধুত্বে অপরাধের দিকে ধাবিত হয়েছে, পারিবারিক ঝগড়া রাজনৈতিক নির্যাতনের গল্পে রূপ পেয়েছে, মিথ্যা আশ্রয় বা ভুয়া তথ্যের ফাঁদে পড়েছে, অনুমতি ছাড়া কাজ করার কারণে ধরা পড়েছে, কাগজপত্রে অসঙ্গতি ধরা পড়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি বলে–তুমি আমাদের বিশ্বাস ভেঙেছ, এখন দেশে ফিরে যাও। শিক্ষার্থী হিসেবে জীবনের সুযোগ হারিয়েছে, সবচেয়ে হৃদয়বিদারক হয় যখন দেখি, বাবা–মায়ের কাঁধ থেকে মালপত্র নামাতে না পারা ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে এসে নিজের ভুলের কারণে জীবনের বোঝা হয়ে গেছে, স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি মেয়ে ভুল প্রলোভনে নিজের ভবিষ্যৎ লুটিয়ে দিয়েছে, রাত জেগে পড়ার জন্য আসা ছেলে রাত জেগে ভুল পথে হাঁটতে শুরু করেছে, একদিন জানে না–স্বপ্নটা কোন মোড়ে হারিয়ে গেছে, সবচেয়ে ভয়ংকর ভুল হলো–শিক্ষার্থী হয়েও রাজনৈতিক আশ্রয়ের নামে ভুয়া গল্প বানানো। মনে রাখবেন, যে দেশে মাসখানেক আগেও স্বাভাবিক চলাফেরা করেছেন, সেখানে হঠাৎ ‘আমি নির্যাতিত’ বলে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করবে না, ভিসা বাতিল হবে, দেশে ফেরত যেতে পারবে না, যুক্তরাষ্ট্রেও থাকার সুযোগ নেই, এক জীবন মাঝপথে ঝুলে থাকে, কিন্তু যারা স্বপ্ন নিয়ে আসে, বুকভরা দায়িত্ব নিয়ে আসে, নিয়ম মেনে পড়ে, পরীক্ষা দেয়, পরিশ্রম করে, দক্ষতা বাড়ায়, তাদের প্রতিটি দিন সংগ্রাম হলেও সেই সংগ্রাম ভবিষ্যৎ গড়ে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের থামায় না, বরং সুযোগ দেয়, কাজ দেয়, সম্মান দেয়, স্থায়ীভাবে থাকার পথ খুলে দেয়, কারণ যুক্তরাষ্ট্র কখনো সৎ, পরিশ্রমী, দায়িত্ববান শিক্ষার্থীকে ফেরত পাঠায় না। ভুল, মিথ্যা, অপরাধ, প্রতারণা –এসবকে ফেরত পাঠায়। যারা বিপদে পড়েছে তারা নিজেদের হাতে আগুন ধরিয়েছে, যারা সফল তারা আলোর পথ তৈরি করেছে, তাই এই লেখা প্রতিটি ছাত্রছাত্রী, পরিবার, অভিভাবকের জন্য স্বপ্নকে ভুল সিদ্ধান্তের হাতে দেবেন না, সন্তানকে শর্টকাটে পড়তে দেবেন না, সৎ পথে চললে যুক্তরাষ্ট্র আজও স্বপ্ন দেখার দেশ, ভুল পথে হাঁটলে যুক্তরাষ্ট্রই জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন। আপনার ভবিষ্যৎ আপনার হাতে–উজ্জ্বল করবেন, না অন্ধকারে নষ্ট করবেন, সিদ্ধান্ত আপনার, অন্যদিকে শিক্ষার সঠিক পথ অনুসরণ করলে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে ভবিষ্যৎ গড়ার অনেক সুযোগ এখনো আছে, ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর যদি একজন শিক্ষার্থী মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে, ভালো ফলাফল করে, দক্ষতা অর্জন করে এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করে–তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাকে কাজের সুযোগ দিতে আগ্রহী হয়, বড় প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেলে তারা কর্মনির্ভর ভিসা (যা অনেকেই এইচওয়ানবি নামে চেনে) স্পন্সর করতে পারে, আবার উচ্চশিক্ষা, দক্ষতা, গবেষণা বা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিভিন্ন কর্মশ্রেণীর মাধ্যমে স্থায়ী আবাসন বা গ্রিন কার্ড পাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে, যেগুলোকে সাধারণভাবে কর্মভিত্তিক প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণী বলা হয়, এসব সুযোগ মূলত তাদের জন্য যারা সঠিকভাবে পড়াশোনা করে, দক্ষতা অর্জন করে, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে, সৎভাবে পড়াশোনা করা, ভালো ফল করা, ভালো প্রতিষ্ঠান বেছে নেওয়া, অভিজ্ঞতা অর্জন করা এবং সত্যিকারের ছাত্র হিসেবে জীবন গড়ে তোলা–এই পথই ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করে, শর্টকাট, ভুয়া কাগজপত্র, ভিসায় গিয়ে আশ্রয় প্রার্থনা–এসব পথ কখনোই স্থায়ী সমাধান নয়। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সিদ্ধান্ত হোক সততা, দূরদৃষ্টি এবং বাস্তবতার ভিত্তিতে দেশের নাম উজ্জ্বল করে, নিজের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করে।
লেখক : যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আইটি স্পেশালিস্ট












