রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবিপ্রবি) উপাচার্য (ভিসি) নিয়োগের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার দুপুরে রাঙামাটি জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র বনরূপা বাজারের (চৌরাস্তা) মুখে রাঙামাটি–চট্টগ্রাম সড়কে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা।
এ সময় তারা জেলা শহরের ব্যস্ততম সড়কটি অবরোধ করে দ্রুততম সময়ে ভিসি নিয়োগের দাবি নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং ভিসি নিয়োগে ৭২ ঘণ্টার সময় বেধে দেন। পরে রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (সার্বিক) আশ্বাসে ৭২ ঘণ্টা আল্টিমেটাম দিয়ে বনরূপা থেকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রধান ফটক পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করে সড়ক ছাড়েন রাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত রাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে ক্যাম্পাসে ভিসি (উপাচার্য) না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। এতে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম, প্রশাসনিক কার্যক্রম ও শিক্ষক নিয়োগসহ নানান ধরনের জটিলতা দেখা দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এখন শিক্ষা উপদেষ্টা যদি আমাদের দাবি মেনে না নিয়ে বৃহস্পতিবারে মধ্যে ভিসি নিয়োগ না করেন তাহলে ডিসির কার্যক্রম বন্ধ রাখার পাশাপাশি রাঙামাটি–চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে রাবিপ্রবি ছাত্রদলের সংগঠক মো. জসিম উদ্দিন, শিক্ষার্থী আব্দুস সাত্তার, আব্দুল্লাহ আল বাদশা মতিনসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব দেন। এ সময় জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার দীপু, জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেনসহ বিএনপির অন্যান্যরা নেতারা। জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার দীপু বলেন, ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটালের মধ্যে (বুধবার পর্যন্ত) যদি রাবিপ্রবিতে ভিসি পদে কাউকে নিয়োগ দেয়া না হয় সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে থাকবে বিএনপি। এদিকে, শিক্ষার্থীদের ভিসি নিয়োগ নিয়ে আশ্বাস দিয়ে রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, তাৎক্ষণিক শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। আমাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ফোন করে জানানো হয়েছে আজকে (সোমবার) বিকালে মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টার কার্যালয়ে ভিসি নিয়োগে ফাইল যাবে। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় হয়ে আশা করছি কাল বা পরশুর মধ্যে শিক্ষার্থীরা নতুন ভিসি পেয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান করে ‘জোর করে’ পদত্যাগ করানোর হিড়িক দেখা যায়। রাবিপ্রবিতেও শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের একটি অংশ ‘জোর করে’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. সেলিনা আখতার ও প্রো–ভিসি ড. কাঞ্চন চাকমাকে পদত্যাগ করান। তৎকালীন ভিসি সেলিনা আখতারের আপত্তির মুখে ভাষাগত কারণে প্রো–ভিসি কাঞ্চন চাকমাকে দুইবার পদত্যাগ করান শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকে কার্যত অভিভাবক শূন্য পাহাড়ের এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রশাসনিক, একাডেমিক ও সংশ্লিষ্ট কাজের ক্ষেত্রে রাবিপ্রবির বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষককে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েই চলছে রাবিপ্রবি। শিক্ষার্থীদের ভিসি নিয়োগ নিয়ে আক্ষেপ আর হতাশা থাকলেও গতকাল অবশেষে রাজপথে নামল তারা। অভিভাবক শূন্য পাহাড়ের এই বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বিএনপি ও জামায়াত পন্থী দুই শিক্ষকের ভিসি পদে তদবিরের খবর জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।
