ভিসার খবর ভারতই দেবে, জটিলতা বাংলাদেশ সৃষ্টি করেনি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

| বুধবার , ৫ মার্চ, ২০২৫ at ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশিদের জন্য ভারতের ভিসা চালুর বিষয়ে কোনো খবর দেওয়ার থাকলে সেটার এখতিয়ার শুধু দেশটির সরকারের বলে মনে করছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এই রকম খবরতো ভারতীয় পক্ষ থেকে দিতে হবে। কারণ ভিসা জটিলতা আমরা সৃষ্টি করি নাই। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভারত যেকোনো কারণে হোক তাদের ভিসাতো সার্বভৌম অধিকার, কোনো দেশ কাউকে যদি ভিসা না দেয় বা কোনো গোষ্ঠীকে ভিসা না দেয়, এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা যায় না। এটা তাদের সিদ্ধান্ত। খবর বিডিনিউজের।

আমরা আশা করব, তারা সিদ্ধান্ত জানাবেন আমাদেরকে বা তাদের কার্যকলাপ বাড়াবেন, যাতে করে লোকজন যারা ভিসা চায় তারা ভিসা পেতে পারে। বাংলাদেশ থেকে ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, প্রজননস্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিতে ভারতে যান অনেক বাংলাদেশি নাগরিক। প্রতিবছর কত লোক ভারতে চিকিৎসা নিতে যায় সেটির সঠিক পরিসংখ্যান বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাওয়া যায়নি। তবে ভারত সরকারের তথ্যের বরাতে দ্য প্রিন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে বাংলাদেশিদের জন্য প্রায় ১৬ লাখ ভিসা ইস্যু করেছিল ভারত। এর মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ ছিল মেডিকেল ভিসা। অনেকে ভ্রমণ ভিসায় গিয়েও ভারতে চিকিৎসা করিয়ে আসেন। ফলে চিকিৎসা নেওয়া বাংলাদেশিদের প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হওয়ারই কথা। ২০২৪ সালের অগাস্ট পর্যন্ত ১৫ ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশিদের জন্য ৮ লাখ ভিসা ইস্যু করা হয়েছিল, যার মধ্যে মেডিকেল ভিসা ছিল ২ লাখ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে সরকার পতন পরবর্তী প্রেক্ষাপটে মেডিকেল বা জরুরি ভিসা বাদে অন্য কোনো ভিসা দিচ্ছে না ভারত সরকার। মেডিকেল ভিসাও দেওয়া হচ্ছে সীমিত আকারে। এর মধ্যে আবার ৫ ভিসা আবেদন কেন্দ্রে সীমিত পরিসরে কাজ চলায় মেডিকেল ভিসাপ্রত্যাশীদেরও অনেকে পাচ্ছেন না ভিসা আবেদন জমা দেওয়ার অ্যাপয়েন্টমেন্ট। সমপ্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে ইতিবাচক বার্তা দেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, খুব ভালো। আমাদের সম্পর্কের কোনো অবনতি হয় নাই। আমি যেভাবে ব্যাখ্যা করে এসেছি আমাদের সম্পর্ক সবসময় ভালো থাকবে। এখনও ভালো আছে, ভবিষ্যতেও ভালো থাকবে। বাংলাদেশভারতের সম্পর্ক ভালো না থেকে উপায় নেই। আমাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ, আমাদের পরস্পরের ওপর নির্ভরশীলতা এত বেশি এবং ঐতিহাসিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে আমাদের এত ক্লোজ সম্পর্ক, সেটা থেকে আমরা বিচ্যুত হতে পারব না। ‘মাঝখানে কিছু কিছু দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে’ মন্তব্য করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমি বলেছি মেঘ দেখা দিয়েছে। এই মেঘগুলো মোটামুটি এসেছে অপপ্রচার থেকে।

অপপ্রচারের সূত্র কারা সেটা অন্যরা বিচার করবে। কিন্তু এই অপপ্রচারের ফলে আমাদের সঙ্গে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গেছে। সেই ভুল বোঝাবুঝি থেকে আমরা উত্তরণের চেষ্টা করছি। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে সম্পর্ক স্বাভাবিকের দিকে নিয়ে যাওয়ার এক প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যে কথা বলেছেন, এটা একেবারেই আমাদের অবস্থান এটা। আপনারা জানেন, আমি নিজেও বিভিন্ন সময়ে বলেছি যে, আমরা ভালো কর্মসম্পর্ক চাই, পারস্পরিক আদানপ্রদান ও মর্যাদার ভিত্তিতে। এই অবস্থানটাই প্রধান উপদেষ্টাও বলেছেন। এটা আমাদের যে একটা স্পষ্ট অবস্থান প্রথম থেকে আছে, তারই প্রতিফলন। বাকিটুকু দেখা যাক, দুপক্ষের স্বার্থ আছে, কে কীভাবে সেই স্বার্থকে দেখে, সে বিবেচনা করে সম্পর্ক আগাবে।

ট্রাম্পের বক্তব্যে ‘সম্পর্কে এদিকওদিক’ হবে না: দুই ব্যক্তির দ্বারা পরিচালত ‘কেউ নাম শোনেনি’ এমন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইউএসএআইডির ২৯ মিলিয়ন ডলার খরচের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে দুদেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন না পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। মঙ্গলবার এ বিষয়ক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, যেটা বলছেন, এটা নিয়ে সম্পর্কে এদিকওদিক হবে কি না, মনে হয় না। বিষয়টা হল, তারাওতো শুধু প্রেসিডেন্ট বলেছেন একটা, কোনো বিস্তারিত দেননি বা কাউকে অভিযুক্তও করেন নাই। আমরাও দেখেছি, এই রকম কোনো কিছু নেই। কাজে এটা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কোনো কারণ আমি দেখি না। অনুসন্ধান চালিয়ে ওই অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ার যে বক্তব্য সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিয়েছে, সে বিষয়ে এক প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, এটা কোনো তদন্ত করা হয় নাই, অনুসন্ধান বলতে আমরা খোঁজ নিয়েছি যে, এটা কী? আমরা এখানে দুই ব্যক্তির প্রতিষ্ঠান এমন কিছু আছে কিনা যেসব জায়গা থেকে খোঁজ নেওয়া যায়, অনানুষ্ঠানিকভাবে খোঁজ নিয়ে দেখেছি যে, আসলে মার্কিন একটা প্রতিষ্ঠানকে এই টাকা দেওয়া হয়, মার্কিন সরকার মার্কিন একটা প্রতিষ্ঠানকে দেয়, তারা এখানে বিভিন্ন এনজিও’র সাথে কার্যকলাপ করে, গণতন্ত্রের পক্ষে যারা কাজ করে তাদের সাথে কাজ করে। ২৯ মিলিয়ন ডলার যথাযথ মাধ্যমে আসার কথা তুলে ধরে তৌহিদ হোসেন বলেন, টাকা পয়সাগুলো যথাযথ মাধ্যমে এসেছে, এমন কোনো দুই ব্যক্তি না যাদেরকে টাকাটা দেওয়া হয়েছে। আর যদি থাকত, এটা খুব সহজে জানা যেত।

মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ডেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে জানানোর বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা কোনো উস্কানিমূলক বক্তব্য বলে আমি মনে করি না, এটা একটা বক্তব্য দিয়েছেন, আমরা দেখছি যে, এটার তেমন কোনো ভিত্তি দেখা যাচ্ছে না। উনিতো স্পষ্ট করে এ কথাও বলেননি যে, বাংলাদেশের একটা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই রকম কথাও কিন্তু বলেননি। দুই ব্যক্তির প্রতিষ্ঠান বলতে কাকে বুঝিয়েছেন, আমরা তা জানি না। কাজে, এটা নিয়ে এরপরে বাড়াবাড়ি করার কোনো প্রয়োজন নাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমিথ্যা ঘোষণায় বিদেশি মদ আমদানি খালাস চক্রের দুই সদস্য গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধমব জাস্টিস ও মোরাল পুলিশিংয়ের সুযোগ নেই : রিজওয়ানা হাসান