‘আজি এ ঈদের দিনে হয়ে সব এক মনপ্রাণ/ জাগায়ে মোস্লেম সবে গাহ আজি মিলেনের গান/ ডুবিবে না তবে আর ঈদের এ জ্যোতিষ্মান রবি/ জীবন সার্থক হইবে, হইবে যে এ দরিদ্র কবি।’ খুশির বারতা নিয়ে এসেছে ঈদ। আজ চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল পালিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ছড়িয়ে পড়বে আনন্দের হাওয়া। উৎসবে মাতবে সবাই। স্বর্গের আলোকবার্তা নিয়ে আসা ঈদ আনন্দে ঘরে ঘরে বেজে উঠবে ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ, তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দিবি শোন আসমানি তাগিদ।’ ঈদ ইসলামী সংস্কৃতির অনন্য বহিঃপ্রকাশ। সম্প্রীতির অনন্য মেলবন্ধন তৈরি হয় ঈদের মাধ্যমে। ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আনন্দ। ধনী-গরিব, ছোট-বড় সকলে ভেদাভেদ ভুলে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠবে এদিন। ঈদ শব্দের আরেক অর্থ বারবার ফিরে আসা। আনন্দের বার্তা নিয়ে ঈদ প্রতি বছর মুসলিম সমাজে বারবার ফিরে আসে বলেই এ উৎসবের অন্য নাম ঈদ।
সেই প্রথম রমজান থেকেই ঘরে ঘরে শুরু হয় ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি। ১৫ রমজানের পর গতি পায় এতে। এবার বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতির কারণে ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে হাজির হচ্ছে ঈদ। এরপরও নানা দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও শিশু-কিশোর, যুবক-বৃদ্ধ, আবাল-বনিতা সবাই মেতে উঠবে আনন্দ উল্লাসে। যদিও কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ। একইসঙ্গে করোনাভাইরাসের কারণে সম্প্রীতির ভাববিনিময়ে ঈদ ঐতিহ্যের কোলাকুলি ও করমর্দন করতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। ইসলাম ধর্মের সূচনালগ্ন থেকেই ঈদের দিনে প্রত্যেকে নিজেকে উপস্থাপন করে ভিন্নভাবে। সবাই ভালো পোশাকে পরে। ঘরে ঘরে তৈরি হয় ঈদের বিশেষ খাবার। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। করোনার মধ্যে শপিংমলগুলোতে সকাল-সন্ধ্যা ক্রেতার ভিড় সেটাই ইঙ্গিত দিয়েছে।
ঈদ আনন্দে পূর্ণতা আসে স্বজনের সঙ্গে উদযাপনের মধ্য দিয়ে। তাই ইতোমধ্যে নগর ছেড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। লকডাউনের মধ্যেও যে যেভাবে পেরেছেন চলে গেছেন নিজ গ্রামে। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও কার-মাইক্রো, অ্যাম্বুলেন্স, পণ্যবাহী গাড়ি, সিএনজি টেক্সিতে করে নাড়ির টানে ছুটেছেন সবাই। আজও শহর ছাড়বেন অনেকে। এদিকে গত ২৬ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল সরকার। এতে ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে ঈদের জামায়াত নিকটস্থ মসজিদে আদায় করাসহ ১২ নির্দেশনা দেওয়া হয়। অন্য নির্দেশনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, প্রত্যেকে নিজ নিজ বাসা থেকে ওজু করে মসজিদে আসা এবং ঈদের জামাতে আগত মুসল্লিদের অবশ্যই মাস্ক পরে আসা। একইসঙ্গে মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়া বলা হয়, ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। শিশু, বয়োবৃদ্ধ, যেকোনো অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি ঈদের নামাজের জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
এবার নগরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রথম ও প্রধান জামাত সকাল ৮টায়, দ্বিতীয় জামায়াত সকাল ৯টায় জমিয়তুল ফালাহ্ মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ও প্রধান জামায়াতে ইমামতি করবেন মসজিদের খতিব আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দীন আল কাদেরী। দ্বিতীয় জামায়াতে ইমামতি করবেন জাতীয় মসজিদ জমিয়তুল ফালাহ্’র পেশ ইমাম মাওলানা নূর মুহাম্মদ সিদ্দিকী। এছাড়া লালদীঘি শাহী জামে মসজিদে প্রথম ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সোয়া ৭টায়। দ্বিতীয় জামায়াত হবে সকাল সোয়া ৮টায়। নগরে সকাল ৮টায় চসিকের তত্ত্বাবধানে সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, হযরত শেখ ফরিদ (র.) চশমা ঈদগাহ মসজিদ, চকবাজার সিটি কর্পোরেশন জামে মসজিদ ও মা আয়েশা সিদ্দিকী চসিক জামে মসজিদে (সাগরিকা জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সংলগ্ন) ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে।