ভিডিও কলে বিয়ে, সংসার শুরুর আগেই বিধবা

সৌদিতে আগুন

| সোমবার , ১৭ জুলাই, ২০২৩ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

নয় মাস আগে সৌদি আরবে বসেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রেমিকা মরিয়মকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেছিলেন রাজশাহীর বাগমারার রুবেল হোসাইন। কথা ছিল, রুবেল দেশে এলে আনুষ্ঠানিকতা হবে, হবে নিজের সংসার। কিন্তু রুবেলমরিয়মের সেই স্বপ্ন আগুনে পুড়ে শেষ হয়েছে। গত শুক্রবার সৌদি আরবের আল আহসা শহরের হুফুফ শিল্প এলাকার একটি সোফা কারখানায় আগুনে পুড়ে নিহত হন ৯ বাংলাদেশি। যার মধ্যে ছিলেন রুবেলও। খবর বিডিনিউজের।

বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে দেখা হওয়ার আগেই বিধবা হলেন মরিয়ম আক্তার। এই মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি, থামছে না তার আহাজারি। গত শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার বারইপাড়া গ্রামের রুবেলের হোসাইনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় মরিয়ম আক্তার মোবাইল ফোনে স্বামীর ছবি দেখছেন আর বিলাপ করছেন। ‘আমার স্বামীকে একটার বার হলেও দেখতে চাই রে। আমার স্বামীক আমি কাছ থেকে দেখিনি রে। আপনাদের পায়ে ধরি রে…; আমার স্বামীক একনা এনে দেনরে ভাই। আমার স্বামীক কোনো দিন চোখের কাছ থেকে দেখিনি রে। যা দেখেছি দূরে থ্যাকারে। যত কথা কছে দূরে থ্যাকাই কথা কছে রে।’

স্বামীর সঙ্গে কথোপকোথনগুলোই এখন তার একমাত্র স্মৃতি। মোবাইলে ছবি দেখতে দেখতে তিনি বলেন, আমার রুবেল বড় বড় চুল রাখত। ঈদের আগে আমি বলে চুল কাটিয়েছি। এটা শুনে সবাই তাকে বলেছিল, মায়ের কথায় চুল কাটেনি, বউয়ের কথায় ঠিকই কাটল।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১২টার দিকে রুবেলের সঙ্গে শেষবার কথা হয় বলে জানান মরিয়ম। সেসময় দেশে আসার জন্য শুক্রবার কাগজপত্র জমা দিয়ে কারখানায় যাওয়ার কথা স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন তিনি। ‘রাতে বাসায় ফিরে আবার কথা বলবে বলেছিল, কল দিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করেনি। রাত নয়টা পর্যন্ত ফোন বেজেছে। এরপর ফোন আর বাজেনি।’ শনিবার সকাল ৮টার দিকে রুবেলের প্রবাসী বড় ভাই ফোন করে মৃত্যুর খবর জানান।

তিন ভাইয়ের মধ্যে রুবেল সবার ছোট। স্থানীয় দালালকে ১৬ কাঠা জমি লিখে দেওয়া ছাড়াও দেড় লাখ টাকা দিয়ে ২০১৬ সালে সৌদি আরব পাড়ি জমান তিনি। বড় দুইভাইও প্রবাসী, একজন সৌদি আরবে এবং অন্যজন দুবাই থাকেন।

একই আগুনে পুড়েছেন বারইপাড়া গ্রামের শাহাদাত হোসাইনের একমাত্র ছেলে আরিফ হোসেন রুবেল। তিনি সৌদি আরব যান আট মাস আগে। দেশটিতে থাকা চাচা সাজেদুল ইসলাম আরিফকে নিয়ে যান, কাজের ব্যবস্থাও করেন একই কারখানায়। সোফা কারখানার আগুনে পুড়ে মারা গেছেন চাচাভাতিজা। স্বামী হারিয়ে সাজেদুলের স্ত্রী শোকে পাথর। ছেলে হারানোর শোক সইতে পারছেন না আরিফের মা। তার আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে বারইপাড়া গ্রামের বাতাস।

নিহত আরেকজন ফিরোজ আলী সরদারের বাড়ি পাশের গ্রাম মাধাইমুরি। তিনি আনিসুর রহমানের ছেলে। সাড়ে তিন বছর ধরে সৌদি আরব প্রবাসী তিনি। একই এলাকায় নিহত চারজনের পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দিতে তাদের বাড়িতে যান স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

ঝিকড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, চার প্রবাসীর মৃত্যুতে শুধু পরিবারের ক্ষতি হলো তা নয়। এটি দেশেরও ক্ষতি। আমরা চাই নিহতদের লাশ পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হোক। নিহতদের পরিবার যেন ক্ষতিপূরণ পায় সে ব্যাপারেও সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। সৌদি আরব থেকে লাশ ফেরত আনার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বাগমারা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ইউএনও (চলতি দায়িত্ব) সুমন চৌধুরী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা আরও এক মাস বাড়ল
পরবর্তী নিবন্ধনিবন্ধন পাচ্ছে না গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, এবি পার্টি