বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। গতকাল সন্ধ্যায় ট্রেনটির পরিচালক (গার্ড) এস এম নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আসামিদের অজ্ঞাতনামা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ঢাকা জেলা রেলওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার (আরএসপি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, রেলওয়ে পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট হামলাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে কাজ করছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) লালবাগ বিভাগ। তারা হলেন ঢাকা দক্ষিণ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ নবী উল্লাহ নবী, মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য মোহাম্মদ মনসুর আলম, কামরাঙ্গীচর থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাসেল, ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান, দেলোয়ার, কবির, কামরাঙ্গীচর থানার যুগ্ম আহ্বায়ক সালাউদ্দিন ও লালবাগ থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন স্বপন। খবর বাংলানিউজ ও বিডিনিউজের।
ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের জানান, বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুনের পরিকল্পনা হিসেবে বিএনপির হাইপ্রোফাইল নেতারা ভিডিও কনফারেন্স করেন। কনফারেন্সে প্রথমে আসেন মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক খন্দকার এনাম। এরপর আসেন সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন, যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ গাফফার, ইকবাল হোসেন বাবলু, একজন দপ্তর সম্পাদক ও কাজী মনসুর। তারা ভিডিও কনফারেন্সে এসে বৃহত্তর ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী ট্রেনে বিশেষ করে নরসিংদীর কাছে সুবিধাজনক স্থানে অগ্নিসংযোগ করার কথা বলেন। আরেকটি স্থান কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ লাইনে আপ–ডাউনে সুবিধাজনক স্থানে যাত্রীবাহী ট্রেনে আগুন লাগিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করার কথা বলা হয়।
তিনি বলেন, দক্ষিণ যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম নয়নের তত্ত্বাবধানে যুবদলের কয়েকটি টিম লালবাগের কয়েকজন দাগি সন্ত্রাসী দিয়ে বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন লাগানো হয়। ভিডিও কনফারেন্সে বলা হয়, ট্রেনে কে আগুন লাগাবেন? কনফারেন্সে থাকা ১০–১২ জনের একজন বলেন তিনি আগুন লাগাতে পারবেন। তবে তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে তার নামটি আমরা বলব না। এছাড়া ভিডিও কনফারেন্সে থাকা আরও তিনজন আগুন লাগাতে পারবে বলে জানান। তারা ২০১৩–১৪ সালে বিভিন্ন এলাকায় বোমা নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগ করেছিলেন। তারা মিলে যাত্রাবাড়ীর আশপাশের এলাকা থেকে ট্রেনটিতে অগ্নিসংযোগ করেন। ডিবিপ্রধান বলেন, যে মোবাইল থেকে ভিডিও কনফারেন্স করা হয়েছিল সেই মোবাইলটি উদ্ধার করেছে ডিবি। মোবাইলটি কাজী মনসুরের। তিনি আমাদের কাছে গ্রেপ্তার আছেন। যারা একসময় জেলখানায় দাগি আসামি হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তারাই এই অগ্নিসংযোগ করেন। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের রিমান্ডে আনা হবে।
বিএনপি নেতা নবী রিমান্ডে : বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন লাগিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার পর গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা মোহাম্মদ নবী উল্লাহ নবীকে (৬৬) যাত্রাবাড়ী থানার পুরনো এক মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। গতকাল বিকালে তাকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চান মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী জোনাল টিমের উপ–পরিদর্শক মো. আশরাফুল আলম।
অন্যদিকে নবীর পক্ষে রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী মো. সেলিম। শুনানি শেষে ঢাকার বিচারক ফারজানা শাকিল সুমু চৌধুরী তিন দিন হেফাজতে নিয়ে নবীকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। নবী যাত্রাবাড়ী থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং বর্তমানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। তাকে ছাড়াও যুবদলের সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
যাত্রাবাড়ী থানার বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের এই মামলার রিমান্ড আবেদনের শুনানিতে পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই আসাদুজ্জামান বলেন, নবী উল্লাহ নবী ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর যাত্রাবাড়ী থানাধীন যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে ধোলাইপাড়গামী রাস্তার সড়কে বিজিবি মার্কেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর অবস্থান করে বেআইনি জনতাবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, ইট–পাটকেল, বাঁশ–লাঠি ও ককটেল নিয়ে সজ্জিত হয়ে বিভিন্ন প্রকার সরকারবিরোধী উসকানিমূলক ও অবমাননাকর স্লোগান দিতে থাকেন এবং রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি করেন।
জুরাইনে বাড়ি ঘিরে রেখেছে র্যাব : ট্রেনে আগুনে চারজনের প্রাণহানির পর জুরাইন রেলগেট সংলগ্ন বস্তির একটি বাড়ি ঘিরে রেখেছে র্যাব। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ ককটেল, পেট্রোল বোমা ও বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম পাওয়া গেছে বলে পুলিশের বিশেষ এ ইউনিট জানিয়েছে। র্যাবের বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট সেখানে পৌঁছে কাজ করছে। তবে কী পরিমাণ ককটেল, বোমা, বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে তা জানায়নি র্যাব। কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিনা সে বিষয়েও কিছু বলা হয়নি।