কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের (কুতুবদিয়াপাড়া–নাজিরারটেক) উচ্ছেদ পরিকল্পনা বাতিল এবং স্থায়ী বন্দোবস্ত পাওয়ার দাবিতে শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ওই এলাকার অন্তত ২০ হাজার বাসিন্দা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বর থেকে শহরের প্রধান সড়কের বিশাল স্থানজুড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা।
কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণের জন্য সিভিল এভিয়েশনের নেয়া উচ্ছেদ প্রকল্প বাতিল চেয়ে কুতুবদিয়াপাড়া–নাজিরারটেকের শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত নারী–পুরুষ সর্বস্তরের লোকজন এই বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন। তারা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে শুয়ে–বসে এবং দাঁড়িয়ে অবস্থান নেন। অন্যদিকে আরো বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারী প্রধান সড়কের হলিমোড় থেকে লালদিঘি পাড় পর্যন্ত স্থানে অবস্থান নিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। বিক্ষোভকারীরা জানান, জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া থেকে এসে ৪০ বছর আগে এই ১ নম্বর ওয়ার্ডে ঠাঁই নিয়েছিলেন লক্ষাধিক মানুষ। তারা এই এলাকাকে আবাদ করে বসবাসের উপযোগী করে জীবন–যাপন করছেন। এই জমি ছাড়া তাদের আর কোথাও মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই।
তারা অভিযোগ করে বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের নামে লুটপাট করতে সিভিল এভিয়েশনকে দিয়ে আমাদের ভিটেবাড়ি উচ্ছেদের প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। এই প্রকল্প থেকে আওয়ামী লীগের নেতারা হাজার হাজার টাকা লুট করেছে। এখন আওয়ামী লীগ সরকার নেই। তাই তাদের জনবিরোধী এই প্রকল্প বাতিল করতে হবে। একই সাথে এই জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত দিতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
অস্তিত্বের প্রসঙ্গ টেনে তারা বলেন, এই ভিটেবাড়িতে আমাদের অস্তিত্ব ও রক্তের স্পর্শ মিশে আছে। এই জমিতে আছে ৩০ হাজার স্বজনের কবর। আমরা এই কবর পেলে কোথাও যেতে পারব না, যাব না। এই উচ্ছেদ পরিকল্পনা বাতিল করতে হবে।
এতে কঙবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল, কঙবাজার পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল হুদা, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জিসান উদ্দিন এবং ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আকতার কামালসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কঙবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য ১ নম্বর ওয়ার্ডের পুরো এলাকা সিভিল এভিয়েশনকে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে ওই এলাকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের জন্য শহরের অদূরে খুরুশকুলে একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ২০টি এপার্টমেন্টে ৬০০ পরিবারকে ফ্ল্যাট দেয়া হয়েছে। আরো ১১৭টি এপার্টমেন্টের নির্মাণ কাজ শেষের পথে। এগুলো তৈরি হলে সবমিলে ১৩৭টি ফ্ল্যাটে ঠাঁই পাবে ৪ হাজার ৪০৯ পরিবারের অন্তত ২০ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু মানুষ। তবে বাসিন্দারা বলছেন, উচ্ছেদ করা হলে আরো অন্তত অবশিষ্ট ৮০ হাজার মানুষ বাস্তুহারা হবে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. সালাহ উদ্দীন বলেন, এই প্রকল্পের সাথে একাধিক মন্ত্রণালয় সম্পৃক্ত। বিক্ষোভকারীদের দেয়া স্মারকলিপি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সুপারিশ করব।