ভিক্টর হুগো। বিখ্যাত কবি, নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক। ফরাসি এই সাহিত্যস্রষ্টা ঊনিশ শতকের সবচেয়ে প্রভাববিস্তারকারী লেখক হিসেবে সুপরিচিত।
হুগোর জন্ম ১৮০২ সালের ২৬ শে ফেব্রুয়ারি। বাবা ছিলেন সম্রাট প্রথম নেপোলিয়নের অধীনে একজন সেনা কর্মকর্তা। সেই সুবাদে অল্প বয়সেই বাবার সাথে ইতালি, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন। প্যারিসের একটি প্রিপারেটরি স্কুলে তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছিল। সেই স্কুলটিতে মাত্র তিন বছর লেখাপড়া করেছেন হুগো। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন বলতে এটুকুই। হুগোর সাহিত্য জীবনের সূচনা কবিতা দিয়ে। প্রথম কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৮২২ সালে। প্রকাশের পরপরই এটি ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এরপর একে একে রচিত হয় ট্রাজেডি, অপেরা, অনুবাদসহ নানান সৃষ্টি। সাহিত্যে ফ্রান্সের প্রচলিত ধারা ভেঙে নতুন ধারার সূচনা করেন হুগো। তাঁকে ফ্রান্সের রোমান্টিক কাব্য আন্দোলনের পথিকৃৎ বলা হয়ে থাকে। গীতি কবিতায় ছন্দের সুষম প্রয়োগ ঘটিয়ে তিনি ফরাসি কাব্য জগতকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর রচনার অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ ছিল মানুষের মুক্তি। ফ্রান্সের জনগণকে অন্ধকার আর গ্লানি থেকে মুক্তির আলোয় আলোকিত করে সমাজ রূপান্তরের স্বপ্ন দেখিয়েছেন তিনি। এ জন্যে হুগোকে সমাজ সংস্কারকও বলা হয়ে থাকে। সম্রাটের স্বেচ্ছাচারিতা তাঁকে ভীষণভাবে পীড়া দিত। হুগো রাজা লুইস নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে তীব্র শ্লেষ জানান তাঁর লেখনির মাধ্যমে। এরপর স্বেচ্ছায় দেশ ছেড়ে চলে যান।
গারনসি দ্বীপে দীর্ঘ ঊনিশ বছর নির্বাসিত জীবনযাপনকালে তিনি রচনা করেন বিখ্যাত গ্রন্থ ‘লা মিজােেরবল’, ‘দ্য ম্যান হু লাভস’, এবং ‘টয়লার্স অব দ্য সি’। স্বদেশে ফেরার পর জনগণ তাঁকে বিপুল সম্মানে অভিষিক্ত করে। তাঁর অন্যান্য বিখ্যাত রচনাসমুহের মধ্যে রয়েছে ‘হ্যাঞ্চব্যাক অব নতরদাম’, ‘এর্নানি’, ‘রুই ব্লা’, ‘রিগোলেত্তো’ ইত্যাদি। ১৮৮৫ সালের ২২শে মে ৮৩ বছর বয়সে হুগো প্রয়াত হন।