যৌন নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদিন হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ। তাকে গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে তদন্ত কর্মকর্তা লালবাগ থানার এসআই ফাইয়াজ হোসেন সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে মহানগর হাকিম জাকী আল ফারাবী দুদিন রিমান্ডের আদেশ দেন। খবর বিডিনিউজের।
এ সময় আইনজীবী শফিকুল ইসলাম দীপু ও আরও কয়েকজন তার রিমান্ড আবেদন বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদনের ওপর শুনানি করেন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ বলে, বাবা–মার পরই শিক্ষকের অবস্থান। পরিবারে বাবা–মা আর সামাজিক জীবনে শিক্ষকই হলেন বাবা–মা। তারা যদি এ কাণ্ড করেন তাহলে তাকে কী বলা যায়? সে শিক্ষক নামের কলঙ্ক। রক্ষক এ ক্ষেত্রে ভক্ষকের ভূমিকায় নেমেছে।
অন্যদিকে আসামিপক্ষ থেকে বলা হয়, মুরাদ হোসেন শিক্ষক হিসেবে পুরস্কারপ্রাপ্ত। আজীবন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি ওই স্কুলের শিক্ষক রাজনীতির নোংরা শিকার মাত্র। ঘটনার দিন অভিযোগকারী মেয়ের মা স্কুলের বাইরে প্রবেশপথে অবস্থান করছিলেন। কখন এ ঘটনা ঘটল? এমন প্রশ্ন তুলে আসামীপক্ষ বলে, কথিত ঘটনার তদন্ত হয়েছে। সেখানে অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। গত ২২ তারিখে তিন সদস্যের কমিটি লিখিত প্রতিবেদন দেয়, যেখানে মুরাদকে নির্দোষ বলা হয়। শুনানির সময় কাঠগড়ায় দাঁড়ানো মুরাদকে বিমর্ষ দেখা যায়।
রিমান্ড শুনানিতে বলা হয়, ওই শিক্ষক কোচিং সেন্টারে প্রায়ই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ, প্রাপ্তবয়স্কদের কৌতুক শোনাতেন। দীর্ঘদিন থেকে তিনি ছাত্রীদের সঙ্গে এমন আচরণ করে আসছেন। এরই এক পর্যায়ে ২০২৩ সালের ১০ মার্চ প্রথম বাদীর ১৩ বছর বয়সী কন্যা তার যৌন নির্যাতনের শিকার হন। ভয় দেখিয়ে ও কৌশলে দিনের পর দিন ওই শিক্ষকের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ওই ছাত্রী বলে আদালতে অভিযোগ করা হয়।
অন্য কোনো ছাত্রী এ রকম ঘটনার শিকার হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে এবং তথ্য যাচাই–বাছাইয়ে শিক্ষক মুরাদকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি বলে শুনানিতে আবেদন করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামির কাছ থেকে তার ঘটানো এ রকম আরও ঘটনার কথা জানা যায়। তিনি একেক সময়ে একেক কথা বলতে থাকেন, যে কারণে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ দরকার।
ভিকারুননিসার শিক্ষকরা কোচিং করাতে পারবেন না : কোচিং সেন্টারে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার পর শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠানের বাইরের এই পাঠদান কর্মকাণ্ডে রাশ টানছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। রাজধানীতে মেয়েদের নামী এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা আপাতত কোনো ধরনের কোচিং করাতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী। গতকাল তিনি বলেন, আমাদের সব শিক্ষকের কোচিং করানো আপাতত বন্ধ। সব শিক্ষককে এ বিষয়ে নোটিস দেয়া হয়েছে। কেউ এর ব্যত্যয় ঘটালে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া অভিযুক্ত শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।