জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করতেই বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চায় বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এখন আমরা নির্বাচন করতে গেলেই বলবে যে– বিএনপি শুধু নির্বাচন চায়। নির্বাচন কেন চাই– সে দিকটা কেউ ভালো করে চিন্তা করার অবকাশ পায় না। নির্বাচন না হলে আমি প্রতিনিধি নির্বাচন করব কী করে? আর প্রতিনিধি নির্বাচিত না হলে সে পার্লামেন্টে যাবে কী করে? আর পার্লামেন্টে না গেলে জনগণের শাসনটা প্রতিষ্ঠিত হবে কোত্থেকে? কয়েকজন ব্যক্তিকে দেশ–বিদেশ থেকে ভাড়া করে নিয়ে এসে কি দেশ চালানো যায়? যায় না। এই যে সহজ–সরল কথা, আমাদেরকে উপলব্ধি করতে হবে। গতকাল শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জিয়া পরিষদ আয়োজিত ‘ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার পতন ও জুলাই–আগস্ট অভ্যুত্থানে বর্ষপূর্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন মির্জা ফখরুল। খবর বিডিনিউজের।
তার ভাষ্য, দেশে এখন সংখ্যানুপাতিক হারে ভোটের নামে জগাখিচুড়ি চলছে। বাংলাদেশে এখন একটা জগাখিচুড়ি ঘটনা চলছে। কিছু কিছু লোক, কিছু কিছু রাজনৈতিক দল তারা বিভিন্ন রকম কথা বলতে শুরু করেছেন এবং যে বিষয়গুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্কই নেই। যেমন আপনি দেখুন– খুব জোর করে বলছে, জোর গলায় বলছে যে– সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন। অর্থাৎ আনুপাতিক হারে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের সাধারণ মানুষ তো বোঝেই না যে– আনুপাতিক হারে নির্বাচনটা কী? তারা (জনগণ) জানে যে– একজন প্রার্থী দেবে পার্টি, সেই প্রার্থীর যেই মার্কাই হোক– ধানের শীষ অথবা দাঁড়িপাল্লা অথবা কুলা, পাতা যাই হোক– সেখানে গিয়ে সে ভোটের দিন ভোট দেবে, ভোট দিয়ে নির্বাচন করবে। এখন ইনারা বলতে শুরু করেছেন আনুপাতিক হারে নির্বাচন হবে।
ফখরুল বলেন, আনুপাতিকটা কী জিনিস? সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করেন, তারা বলতে পারবে না। আমরা যারা রাজনীতি করি, কিছুটা বোঝার চেষ্টা করি… তাতে করে ভোট হবে, জনগণ ভোট দেবে; যে দলটি সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে, তারা তাদের নমিনেশন দেবে পার্লামেন্টে যাওয়ার জন্য। এতে করে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ যারা, তাদের এলাকায় একজন নেতা চায়, প্রতিনিধি চায়; তাদের কাজগুলো করার জন্য একজন নেতৃত্ব খোঁজে; সেটা কোনো মতেই এই পদ্ধতিতে সম্ভব হবে না। আমরা এই কারণেই বলেছি যে, নিম্নকক্ষের যে পার্লামেন্ট, সেই পার্লামেন্টে আমরা আনুপাতিক হারে নির্বাচনের কথা চিন্তা করি না।
২০১৬ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভিশন–২০৩০ এর মাধ্যমে সংস্কার কর্মসূচি এবং ২০২২ সালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফার রাষ্ট্র কাঠামোর আমূল সংস্কার কর্মসূচি তুলে ধরে ফখরুল বলেন, এখন এটা রাতারাতি সম্ভব না। অনেকে বলছেন যে, কজন লোক সংস্কার যারা করছেন, তারা কতগুলো বৈঠক করে সংস্কারের কতগুলো বিষয় নিয়ে এসে জনগণকে এগিয়ে দিলেন, আর সংস্কার হয়ে গেল; সেইভাবে সংস্কার হয় না। সংস্কার হতে হবে একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে… ইটস এ কনটিনিউয়াস প্রসেস। আপনি চাইলেন আর কালকে পুলিশ ঘুষ খাওয়া বন্ধ করে দেবে– এটা মনে করার কোনো কারণ নাই। কাঠামোটা তৈরি করতে হবে এমনভাবে– যাতে করে সে ঘুষ না খায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ঠিক একইভাবে আমাদের যে আমলাতন্ত্র, এই আমলাতন্ত্র– এটা আমাদের উন্নয়নের পথে একটা বড় বাধা; ইটস এ নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসি। এই নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসিকে পজেটিভ ব্যুরোক্রেসি করতে হলে তার জন্য যা যা করা দরকার, অর্থাৎ মূল কাজ হচ্ছে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা– সেই বিষয়গুলো করতে হবে। অর্থাৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত জনগণের কাছে চলে যাওয়া। জনগণের কাছ থেকে তাদের কী প্রয়োজন, তাদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সেটাকে নিয়ে এসে দেশ পরিচালনা করার ব্যবস্থা করা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজ গোটা জাতি একটা ক্রান্তিকালে পৌঁছেছে। এখন আমরা অপেক্ষা করছি ট্রান্সজিশনাল পিরিয়ড– গণতন্ত্র উত্তরণের একটা পথ খুঁজছি আমরা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যে ফ্যাসিস্ট শক্তি, তারা যে ক্ষতিটা বাংলাদেশের করে দিয়ে গেছে– সেই ক্ষতিটা পূরণ এতো সহজে হবে না। তারা সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। শুধুমাত্র বিচার বিভাগ, প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু ধ্বংস করেনি; তারা রাজনৈতিক দলগুলোকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।