ছোট ভাইয়ের সম্পত্তি গ্রাস করতেই ভাসুর ও তার স্ত্রী মিলে গৃহবধূ রোখসানা আক্তারকে (২৩) হত্যা করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মাহমুদুল হক, আবদুল্লাহ খান ও ফারদিন মুস্তাকিম তাসনিমের পৃথক আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে নিহত গৃহবধূর ভাসুর গোলাম মোস্তফা ও জা স্বপ্না আক্তার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এছাড়া প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশী হোসনেয়ারা বেগমও জবানবন্দি দিয়েছেন।
গত বুধবার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের রহমতের পাড়া গ্রামে মো. আনোয়ার হোসেন কিবরিয়ার বসতঘর থেকে তার আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রোখসানা আক্তারের আগুনে পোড়া লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রোকসানার পিতা নুরুল আলম বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে তার ভাসুর মোস্তফা ও জা স্বপ্না আক্তারকে আসামি করা হয়। সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ জানান, তারা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এর মাধ্যমে বাঁশবাড়িয়া রহমতের পাড়া এলাকায় আনোয়ার হোসেন কিবরিয়ার বসতঘরে রোকসানা আক্তার নামে এক গৃহবধূ আগুনে পুড়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানতে পারেন। এরপর ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় এলাকাবাসীকে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি মরদেহের সুরতহাল করি। এসময় নিহতের মাথায় তিনটি ক্ষত চিহ্ন পরিলক্ষিত হয় এবং তা থেকে অঝোরে রক্ত ঝরতে দেখা যায়। গৃহবধূর মরদেহ খাটের উপরে পড়ে থাকার ধরন দেখে এটি একটি পূর্ব পরিকল্পিত হত্যা বলে নিশ্চিত হন তিনি। সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোকসানা আক্তারের স্বামী আনোয়ার হোসেন কিবরিয়া, ভাসুর গোলাম মোস্তফা ও জা স্বপ্না আক্তারকে আটক করা হয়।
ওসি তোফায়েল আহমেদ আরো জানান, জিজ্ঞাসাবাদকালে মোস্তফা ও তার স্ত্রী স্বপ্নার কথায় ব্যাপক গরমিল পরিলক্ষিত হয়। এক পর্যায়ে তারা দুজনেই হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে নেন। তারা জানান, ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন কিবরিয়া ও তার স্ত্রীর সাথে দীর্ঘদিন ধরে তাদের সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ জেরে হত্যাকাণ্ডের পাঁচ দিন আগে বাড়ির উঠানে মোস্তফার করা পানি নিষ্কাশনের ড্রেন বন্ধ করে দেয় কিবরিয়ার স্ত্রী রোকসানা আক্তার। ঘটনাটি নিয়ে উভয়ের মধ্যে তুমুল বাক–বিতণ্ডাও হয়। এরপর তারা রোকসানা ও তার স্বামী কিবরিয়াকে মারার পরিকল্পনা করেন। প্রথমে তারা সিদ্ধান্ত নেন রোকসানাকে মারবে, পরে সুযোগ বুঝে মারা হবে তার স্বামীকেও। পরিকল্পনা অনুযায়ী বুধবার দুপুরে বাঁশবাড়িয়া বাজারের ছোট্ট সওদাগরের দোকান থেকে ৯০ টাকার কেরোসিন ও স্বপনের ফার্মেসি থেকে ৩০ টাকার হ্যান্ডগ্লাভস কিনে নেন। এরপর মোস্তফা নিজ বসতঘরে ঢুকে হাতে গ্লাভস লাগিয়ে নেন এবং একটি কাঠের টুকরো নেন। স্ত্রীর হাতে তুলে দেন কেরোসিন তেলের বোতল। দুপুরে গোলাম কিবরিয়ার অনুপস্থিতে মোস্তফা ও তার স্ত্রী ঘরে ঢুকে পেছন থেকে রোকসানার মাথায় কাঠের টুকরো দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করেন এবং মৃত্যু নিশ্চিতের পর লেপ–কাঁথা দিয়ে মুড়িয়ে দেন। ঘটনাটি প্রতিবেশী হোসনেয়ারা দেখে ফেলায় তা কাউকে না জানাতে হুমকি দেন। জানালে তাকে ও তার প্রতিবন্ধী মেয়েকে মেরে ফেলবে বলে তাকে ঘরের ভেতরে ঢুকিয়ে বাইর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন। এর ঘণ্টাখানেক পর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সাজাতে তারা ফের কিবরিয়ার বসতঘরে ঢুকে রোকসানার মরদেহের উপর কেরোসিন তেল ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এরপর বাইরে এসে আগুন আগুন বলে চিৎকার করতে থাকেন। পরে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে আগুন নেভান।
ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় নিহতের পিতা বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় দু’জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।