মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনসহ রোহিঙ্গাদের সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে তুরস্ক ‘আশ্বাস দিয়েছে’ বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল শনিবার রাতে সচিবালয়ে বাংলাদেশ সফররত তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলাইমান সয়লুর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। খবর বিডিনিউজের।
তিনি জানান, তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কঙবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের সহায়তা করার কথাও জানিয়েছেন। এমনকি তারা কাল ভাসানচরে লোক পাঠিয়ে দেবেন। ভাসানচরে তারা কী করতে পারেন, সেটা যাচাই করে সেখানেও তারা সহযোগিতা করবেন। ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর কঙবাজারের আশ্রয় শিবিরগুলো থেকে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরের কার্যক্রম শুরু হয়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তুরস্কের অবস্থানের বিষয়ে কামাল বলেন, তারা আগেও যেমন ভূমিকায় ছিলেন, এখনও তেমন শক্ত ভূমিকায় আছেন, আমাদের নিশ্চয়তা দিয়ে গেছেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য তো বটেই, যেসব রোহিঙ্গা আছে তারা তাদের সহযোগিতা করে যাবেন। তারা রোহিঙ্গাদের জন্য হাসপাতাল স্থাপন করেছে, তারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগাস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক, প্রধানমন্ত্রী তাদের থাকার জায়গা দিয়েছেন। তারা এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে যা করণীয় তা করবেন। রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়াও তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সন্ত্রাস দমন, নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং মাদক চোরাচালান রোধে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে বলে জানান কামাল।
তিনি বলেন, তুরস্ক আনসার ও পুলিশকে বিভিন্ন পর্যায়ে ট্রেনিং দিয়ে আসছে, এটা অব্যাহত থাকবে। আমাদের সঙ্গে একটি এমওইউ সই হয়েছে। এর মূল বিষয় ছিল কাউন্টার টেরোরিজম, সিকিউরিটি কো-অপারেশন ও মাদক চোরাচালান রোধ। এই এমওইউর পর তারা সহযোগিতা আরও বাড়াবে বলে তুরস্কের মন্ত্রী আমাদের জানিয়ে গিয়েছেন। এই ছিল আজকের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলাইমান সয়লু বাংলাদেশের আমন্ত্রণে এ সফরে এসেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তার সঙ্গে আজ (গতকাল) সকাল থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। এখন আমরা দ্বিপাক্ষিক যে আলোচনা সেটা শেষ করলাম। এটা তুরস্কের সঙ্গে দ্বিতীয় বৈঠক। এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল আঙ্কারায় গিয়েছিলেন ২০১৯ সালে। সয়লুর সঙ্গে সেদেশের দুজন প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা বৈঠকে যোগ দিয়েছেন বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার সব বিভাগেই তাদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করবেন এবং কোনো প্রয়োজন থাকলে সেগুলোও তারা দিয়ে সহযোগিতা করবেন। গতকাল শনিবার সকাল ৮টায় বিশেষ বিমানে ইস্তাম্বুল থেকে কঙবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান সুলাইমান সয়লু। প্রতিনিধি দলটি রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবির পরিদর্শন করেন।