ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প হিমাগারে

২০১৭ সালের উদ্যোগ, বন্দরের খরচ ৮ কোটি টাকা প্রকাশ করা হয়নি সমীক্ষা রিপোর্ট

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরে দিন দিন কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ বাড়ছে। বন্দরের গতি নিশ্চিত করতে বহির্নোঙরে ফ্লোটিং (ভাসমান) টার্মিনাল নির্মাণের একটি উদ্যোগের পেছনে ৮ কোটি টাকার বেশি খরচ করা হলেও প্রকল্পটি হিমাঘারে চলে গেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেত বলে সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্বমানের বন্দরে ধারণক্ষমতার বেশ কিছু অংশ অব্যবহৃত রাখা হয়। বন্দরের ইয়ার্ডেরও অন্তত ৪০ শতাংশ জায়গা ইকুইপমেন্ট মুভমেন্টসহ নানা প্রয়োজনে খালি রাখা হয়। কিন্তু দিন দিন চট্টগ্রাম বন্দর সক্ষমতার পুরোটাই স্পর্শ করতে যাচ্ছে। বন্দরের ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতার ৪৯ হাজার টিইইউএস কন্টেনার রাখার জায়গা প্রায়ই ছুঁয়ে ফেলে। বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেনার জট, বহির্নোঙরে জাহাজ জট, রাস্তায় গাড়ির জট মিলে প্রায়শ ভয়াবহ অবস্থায় পড়তে হয় চট্টগ্রাম বন্দরকে। তাই বন্দরের গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে উন্নত বিশ্বের আদলে বন্দরের বহির্নোঙরে ফ্লোটিং টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়।
২০২১ সালের মধ্যে এই টার্মিনাল নির্মাণ করে কন্টেনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং কার্যক্রম শুরু করার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছিল। এই টার্মিনাল নির্মাণের ব্যাপারে ২০১৭ সালে ৮ কোটি টাকার বেশি অর্থ খরচ করে ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়। ফিজিবিলিটি স্টাডি হলেও প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি।
ওই সময় কর্তৃপক্ষ বলেছিল, ফিজিবিলিটি স্টাডির মাধ্যমে প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেলে দ্রুত ফ্লোটিং টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এই ধরনের টার্মিনাল নির্মাণ করতে হয় না, বিদেশ থেকে এনে ভাসিয়ে দেয়া হয়। ভাসমান টার্মিনালের উপর স্বাভাবিক নিয়মে কন্টেনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে ফিজিবিলিটি স্টাডি করলেও সেই সমীক্ষার রিপোর্ট আজ পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি।
চট্টগ্রাম বন্দরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ‘টেকনো-ইকোনমিক ফিজিবিলিটি স্টাডি অব এ ফ্লোটিং হার্বার অ্যাট দ্যা আউটার অ্যাঙ্কারেজ এরিয়া (বে অব বেঙ্গল) ইন চিটাগং পোর্ট’ শীর্ষক সমীক্ষা কাজের জন্য ২০১৭ সালের ২ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক দরপত্র (ইওআই) আহ্বান করা হয়। ওই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি টেন্ডার বঙ খুলে মোট ২৪টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের দরখাস্ত পাওয়া যায়, যারা প্রকল্পটির ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। উক্ত ২৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ৫টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে একটি শর্ট লিস্ট করা হয়।
পরে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নেদারল্যান্ডসের পাবলিক ডোমেইন আর্কিটেক্টটেনকে ফ্লোটিং টার্মিনালের ফিজিবিলিটি স্টাডির দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রায় এক বছরের নানা প্রক্রিয়া শেষে ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর এ ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষর করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে বন্দর কর্তৃপক্ষের তৎকালীন চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. খালেদ ইকবাল ও পাবলিক ডোমেইন আর্কিটেক্টটেনের প্রধান নির্বাহী পিটার বিগডর নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন। ওই সময় বলা হয়েছিল, ছয় মাসের মধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন করে রিপোর্ট প্রদান করা হবে। এজন্য প্রতিষ্ঠানটিকে ওই সময় প্রায় পৌনে ১০ লাখ মার্কিন ডলার বা ৮ কোটিরও বেশি অর্থ পরিশোধ করা হয়।
প্রকল্পটি নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। জোয়ার-ভাটা নির্ভর চট্টগ্রাম বন্দরে রাতের বেলায় জাহাজ ভিড়ানো সম্ভব হয় না। শুধু দিনে কন্টেনারবাহী জাহাজ ভিড়ানো ও বহির্নোঙরে নিয়ে যাওয়ার কাজ পরিচালনা করা সম্ভব হয়। কিন্তু বহির্নোঙরে ফ্লোটিং টার্মিনাল নির্মিত হলে জোয়ার-ভাটার নির্ভরতা থেকে বন্দর বহুলাংশে নিস্তার পেত। রাতে ফ্লোটিং টার্মিনালে জাহাজ বার্থিং দিয়ে কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হতো। বহির্নোঙরে ফ্লোটিং টার্মিনাল নির্মিত হলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ওখানে বছরে প্রায় ৮ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছিল। এর মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে নদী পথে কন্টেনার পরিবহনও গতিশীল হতো।
এ ব্যাপারে বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে একটি ফিজিবিলিটি স্টাডি হয়েছিল। এরপর প্রকল্পটি নিয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসম্মেলনের ৯ মাস পরও হয়নি নতুন কমিটি
পরবর্তী নিবন্ধসব দোষ ইসিকে দিলে মানব না : নতুন সিইসি