ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রজন্ম এবং কিছু ভাবনা

মৃন্ময়ী ধর | মঙ্গলবার , ১৬ মার্চ, ২০২১ at ১০:১৮ পূর্বাহ্ণ

মাতৃভাষার জন্য আমাদের দেশে প্রথম আন্দোলন করে শহিদ হয়েছেন সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত সহ আরও অনেকেই। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই প্রজন্মের কাছে সেই চেতনা হৃদয়ে আগুন জ্বলার মত জ্বলে উঠে না। অনেকেই জানেও না ২১শে ফেব্রুয়ারি কী এবং কেন হয়েছিল। নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের অনেক দায়িত্ব আছে। নিজ ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতিকে ওদের হৃদয়ের মাঝে বীজ বপন করে দেওয়ার এবং সেই বীজ যাতে অঙ্কুরোদগম হয়ে ওদের মননে, ধ্যানে, জ্ঞানে বিকশিত হতে পারে তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার দায়িত্ব আমাদের। কিন্তু যখনই পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেই দায়িত্ব পালনে অপারগ হয় একটা ব্যবধান তৈরী হয়ে যায় অগোচরে। সেখানে এসে অনায়সে ঢুকে পড়ে চারপাশের মাল্টিকালচার। আস্তে আস্তে করে হারিয়ে যেতে থাকে নিজস্ব স্বকীয়তা, ধীরে ধীরে কমে যায় নিজ সাহিত্য, সংস্কৃতির অনুশীলন ও চর্চা। অনেকেই হতাশ হয়ে বলতে শুনি এই ডিজিটাল যুগে বাচ্চাদের সম্পূর্ণ বাঙালি সংস্কৃতির ধারক-বাহক করে গড়ে তোলা অসম্ভব। কিছুই করার নেই।আমি বলবো, আমাদেরই কিছু করার আছে,আমরাই পারি আমাদের প্রজন্মকে নিজ সাহিত্য,সংস্কৃতির ধারক ,বাহক করে এগিয়ে নিয়ে যেতে। চলুন শুরু করি এভাবেই….. সব বিশেষ দিনগুলিতে উপহার তো দেনই, হোক না সেটা দামী কোন জিনিষের পরির্বতে কোন ভাল লেখকের কয়েকটা বই, দিন না টিভি চ্যানেল ঘুরিয়ে বাংলা অনুষ্ঠানের কোন চ্যানেল, করুন না অবসর সময়ে আপনার কোন প্রিয় কবির কবিতা আবৃত্তি বা গান অথবা কোন লেখকের রচনা নিয়ে আলোচনা আপনার আত্মজকে সাথে নিয়ে, ছুটির দিনে নিয়ম করে দেন অন্তত ১ ঘন্টা পাঠ্য বইয়ের বাইরে কোন ভাল বাংলা বই পড়তে হবে। সে কবিতা,প্রবন্ধ,গল্প,আত্মজীবনী বা ভ্রমণ কাহিনী যাই হোক। আপনাকেও কিন্তু সাথী হতে হবে এই সব নিয়মের, আপনি হিন্দি সিরিয়ালে কিংবা ফেসবুক এ মজে গিয়ে সন্তানদের এসব করাতে পারবেন বলে মনে করার কোন কারণ নাই কিন্তু! এক-দুদিন প্রাইভেট পড়া বা কোচিং মিস দিয়ে নিয়ে যান সন্তানকে বই মেলায়, কিনে দেন ভাল লেখকের কিছু বই। আলোচনা করুন বইগুলো নিয়ে। তা না করে আপনি নিজেও যদি বই কেনাতে আগ্রহী না হোন কিংবা পিয়ার প্রেসারে পড়ে কয়েকটা বই কিনে বাড়ি গিয়ে ঘরের এককোণে কিংবা বসার ঘরের আলমারীতে সাজিয়ে রাখেন আপনার সন্তানটিও তা অনুকরণ করবে বৈকি! স্কুলগুলোতেও ব্যাপক ভূমিকা পালন করা যায়। বিদেশে লাইব্রেরী উইক পালন করে বাচ্চাদের বই পড়া প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। যে বাচ্চা যত বেশী বই পড়তে পারে তাকে সে হিসাবে পুরস্কৃত করা হয়। বাচ্চারা বই পড়ার পর বুক রিভিউ করে। তাতে ছোটবেলা থেকেই বাচ্চার চিন্তাশক্তি ও মননশীলতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও সেশন এর মাঝখানে স্বল্লকালীন ব্রেক থাকে রিডিং উইক নামে। সে সময়ও বাচ্চারা লাইব্রেরী থেকে বই নিয়ে পড়ে ও পর্যালোচনা করে। আমাদের স্কুলগুলোতে এধরনের কোন ক্রিয়াকলাপ করায় কিনা আমি জানি না। যদি করে তাহলে সাধুবাদ জানাই, না করে থাকলে করা উচিত বলে আমি মনে করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমরা ক্ষমা করি, কিন্তু ভুলে কি যাই ক্ষমার কারণটা?
পরবর্তী নিবন্ধবিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম