আমাদের ভাষা বাংলা ভাষা, মুখের ভাষা মাতৃভাষা। আমাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা ভাষা। ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে পেয়েছি আমাদের এই বাংলা ভাষা। ত্রিশহাজার মা বোনের চোখের জলে ভিজেছিলো এই দেশের মাটি ১৯৭১সালে। লজ্জায়, ঘৃণায়, ক্ষোভে ছটফট করেছিল এই বাংলার আকাশ,বাতাস। ১৯৫২সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে রক্ত দিয়েছিল ছাত্রনেতা সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, শফিউরসহ আরো অনেকেই। ১৯৭১সালে ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সাহসী ভাষণে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়ে সব ধর্ম বর্ণ মানুষের মনে সাহস যুগিয়েছিলেন মাতৃভাষা বাংলাকে পাকিস্তানের কুনজর থেকে বাঁচানোর জন্য।
পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে এই বাংলাদেশ নামের সুজলা সুফলা দেশটা আমাদের লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিলো। সেই শোকাবহ দিনটিকে স্মরণ করে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি আমরা জাতীয় শহিদ দিবস পালন করি বাংলাদেশে।এছাড়াও ২০১০সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। সেই থেকে সারা বিশ্বে একুশে ফেব্রুয়ারি সকলের মাতৃভাষার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বিভিন্ন দেশের মানুষ। পৃথিবীতে একমাত্র বাংলাদেশই প্রথম জাতি যে জাতি ভাষার জন্য যুদ্ধ করেছেন ও নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। প্রতি বছর অমর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বহিঃপ্রাঙগনে অবস্থিত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে হাজার হাজার মানুষ খালি পায়ে হেঁটে ফুলেল শ্রদ্ধা জানায়। “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি” এই গানটা গেয়ে আমাদের বাংলাদেশের মানুষ ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানায়। মনে হয় নতুন করে গানটা শুনি আমরা। এই দেশটা আমাদের। বাংলা বর্ণমালার প্রতিটি অক্ষর অ, আ,ই ঈ আমাদের এক একটা স্বাধীনতা। বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষের এই সোনার বাংলাদেশ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে উপজাতি,বাঙালি সকলে মিলেমিশে রক্ষা করবো আমাদের এই দেশের মাটি। শুদ্ধ উচচারণের নিয়মিত চর্চা, বাংলা ভাষার আধিক্য ও আধিপত্য, বাংলাগান, বাংলার লোক সংস্কৃতি, দেশীয় পোশাক ও দেশীয় সম্পদকে নতুনভাবে তৈরি করে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করাই হোক এই অমর একুশের বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন।