ভাষা আন্দোলনে মূল প্রেরণা জুগিয়েছে ছাত্রছাত্রীরা। পুরান ঢাকা ও তৎকালীন নতুন ঢাকার ছাত্রঐক্যের শক্তি ছিল ইস্পাতের মতো। আর এটা একদিনে ঘটেনি। ছাত্রছাত্রীরাই এই মেলবন্ধন ঘটিয়েছে দিনের পর দিন। ‘একুশের দিনলিপি’ গ্রন্থে ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক বলেন, ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসে পুরান ঢাকার মতিগতি সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়ে ওঠে এবং তা জনাকয় মহল্লা সরদারের সহযোগিতার কারণে। অনুকূল হাওয়া বেশ জোরেশোরে বইছে। আন্দোলনে সক্রিয় বা সংশ্লিষ্ট পুরান ঢাকার তরুণদের মধ্যে একুশে সময়পর্বের উল্লেখযোগ্য গোলাম মর্তুজা বা ফজলুল হক এবং নারিন্দার হালিম ও আশরাফের মতো একাধিক কর্মী। এরা সবাই প্রগতিশীল ঘরানার। একুশের বিস্ফোরক দিনটির পর মহল্লাবাসী, তরুণ–যুবকরাই তো আন্দোলনের বড় কারিগর হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে ঢাকার বাইশ পঞ্চায়েতের প্রধান মীর্জা আবদুল কাদের তথা কাদের সরদারের উল্লেখযোগ্য ভূমিকার কথা না বলা অসঙ্গত হবে। একুশের আন্দোলনে তার ইতিবাচক ভূমিকার কারণে তরুণদের নিজ নিজ মহল্লায় কাজ করা সহজ হয়ে ওঠে। বুড়িগঙ্গার তীরে মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা তখন সংক্ষিপ্ত কোর্সে ডিগ্রি শিক্ষার সুবিধাসহ নানা দাবিতে ধর্মঘট পালন করছে। তা সত্ত্বেও সেখানকার ছাত্র নেতানেত্রীরা একুশের ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। যেমন মাহবুব, মুজিবর, জাফর প্রমুখ ছাত্রনেতার পাশাপাশি একইভাবে সক্রিয় নার্গিস, বীথি, ফাতেমা চৌধুরী প্রমুখ বাম ঘরানার ছাত্রীরা। এভাবে উত্তর থেকে দক্ষিণ অর্থাৎ নতুন ঢাকা ও পুরান ঢাকার ছাত্রছাত্রী ও নেতাকর্মীদের মধ্যে কর্মতৎপরতার বন্ধন তৈরি হয়, যা একুশের সফল সমাপনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে ইডেন কলেজ ও কামরুন্নেছা গার্লস স্কুলের জ্যেষ্ঠ ছাত্রীরা নেতৃত্ব বিশেষভাবে সক্রিয় ছিল।