অধ্যাপক পবিত্র সরকার (২৮ মার্চ ১৯৩৭-) একজন বরেণ্য ভাষাবিজ্ঞানী, পণ্ডিত, সাহিত্যিক, নাট্যসমালোচক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক। বিভিন্ন বিষয়ে মননশীল প্রবন্ধ রচনায় খ্যাতিমান এই বাঙালি ব্যক্তিত্ব দুই বাংলায় শিশুসাহিত্যিক, রবীন্দ্র–সংগীত শিল্পী ও নাট্যব্যক্তিত্ব হিসাবেও সুপরিচিত। বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (২০১১) বইটি বাংলাদেশ ও ভারতের যে–একত্রিশজন ভাষাবিজ্ঞানী–গবেষকের প্রবন্ধে সমৃদ্ধ পবিত্র সরকার তাঁদের অন্যতম। শুধু তাই নয় বইটি সম্পাদনা করেন রফিকুল ইসলাম ও পবিত্র সরকার। এটি প্রকাশের পর মাত্র দু’বছর সময়ের মধ্যেই অসীম অধ্যবসায় আর একনিষ্ঠতা নিয়ে রফিকুল ইসলাম ও মাহবুবুল হককে সাথে নিয়ে তিনি সম্পাদনা করেন প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণ (২০১৪)। বলা বাহুল্য প্রথম গ্রন্থটি পণ্ডিত ও গবেষকগণের উপযুক্ত হলেও সাধারণ পাঠক, ভাষা ব্যবহারকারী ও শিক্ষার্থীদের উপযোগিতার ভিত্তিতে প্রণীত হয় দ্বিতীয় গ্রন্থটি; সম্পাদকত্রয় ‘এ গ্রন্থটি মূলত তিনজনের রচিত’ বললেও– এঁরা সকলেই প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ–এর মূল লেখকদের কাছে ঋণ স্বীকার করেন। স্মরণ করিয়ে দেন যে, বইটি পূর্ববর্তী বইয়ের হুবহু অনুসরণ নয়। এখানে ভাষাবিজ্ঞানী পবিত্র সরকারের বিজ্ঞানমনস্ক ভাবনার বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। অন্য সকল পরিচয় ছাপিয়ে পবিত্র সরকার প্রতিষ্ঠা পান ভারতীয় উপমহাদেশের একজন বিজ্ঞ বৈয়াকরণ ও ‘প্রসিদ্ধ ভাষাবিজ্ঞানী’ অভিধায়।
পবিত্র সরকারের আজকের এ–প্রতিষ্ঠার পেছনে কতোটা প্রতিকূলতা পেরোতে হয়েছে তা বোঝা যায় তাঁর আত্মস্মৃতি পাঠে। সেখানে তিনি লেখেন, ধমক দিয়েই শুরু ছেলেটার স্বাধীনতার ‘স্বাদ’ বুঝে নেওয়ার পর্ব! ব্রিটিশ–ভারতের অবিভক্ত বাংলায় ঢাকা জেলার ধামরাই শহরের কাছে এক প্রত্যন্ত গ্রামে ছেলেটার জন্ম। ১৯৪৭–র ১৫ আগস্ট রাতে আনন্দ করেই পটকা ফাটিয়েছিল ছেলেটি। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে বড়দের ধমক। কয়েকদিনের মধ্যেই মা–কাকার হাত ধরে নিরাপদ আশ্রয় ছাড়ল এগারোর ছেলেটা। ধামরাই থেকে মানিকগঞ্জ হয়ে গোয়ালন্দে গেল স্টিমারে। সেখান থেকে রাত ন’টায় চাপতে হল একটি মানুষ ঠাসা ঘুটঘুটে অন্ধকার ট্রেনের কামরায়। … অন্য এক সময়খণ্ডে যাত্রা শুরু হল ছেলেটার। যে সময়খণ্ডে স্বাধীনতা মানে কারও কাছে দেশভাগ, কারও কাছে ক্ষমতার সুচতুর বোঝাপড়া আর কারও কাছে রবার ঘষে শৈশব মুছে কৈশোর আঁকতে থাকা। এভাবেই পবিত্র সরকার দেশভাগের পর ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ছিন্নমূল হয়ে কলকাতায় পৌঁছান। উচ্চশিক্ষা কলকাতা শহরেই। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম মেধাবী ও সেরা শিক্ষার্থী হিসেবে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর কিছুদিন তিনি কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজে শিক্ষকতা করেন। পরে ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে অধ্যাপনা করেন। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে আমেরিকায় যান। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। শেষের দুবছর তিনি মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। দেশে ফিরে (১৯৭৫ খ্রি.) পুনরায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।
তখন পশ্চিমবঙ্গে পবিত্র সরকার অধীত রূপান্তরমূলক সৃষ্টিশীল ব্যাকরণচর্চার কতোটা প্রতিকূল প্রতিবেশ তা দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ণনা করেছেন চমৎকারভাবে। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞানচর্চার সাথে কোলকাত্তাইয়া ভাষাতত্ত্বচর্চার প্রতিবেশ মেলে না। এখানে ভাষাতত্ত্ব নয়, চর্চা হতো শুধু শব্দবিদ্যার, এমনকি জনপরিসরে যে ভাষাতত্ত্বের ধারণা কাজ করে, তা আদতে ব্যুৎপত্তি–উৎপত্তি নির্ভর ফিললজি বা শব্দবিদ্যার চর্চা। এমন প্রতিকূলতায় দেশান্তরী হতে হয় আরেক ভাষাবিজ্ঞানীকে। তিনি পূণ্যশ্লোক রায়। জার্মান অস্তিত্ববাদী দার্শনিক য়েসপার্সের ভাষাদর্শন নিয়ে তাঁর গবেষণা। এখানকার শব্দবিদদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁকে ঠাঁই দেওয়া হয়নি। পরে তিনি হয়ে যান নজরুলের মতো নির্বাক। এমন পরিস্থিতিতে পবিত্র সরকার বেছে নিলেন ‘এক অভূতপূর্ব রণকৌশল’। তিনি ছোটদের পত্রপত্রিকা ও খবরের কাগজে নবীন স্যোসুর–উত্তর ভাষাতত্ত্বের আখ্যান ব্যাখ্যা করতে শুরু করলেন। রূপান্তরমূলক সৃষ্টিশীল ব্যাকরণ ও বিশ্বব্যাকরণ ধারণার প্রবক্তা ভাষাবিজ্ঞানী নোয়াম চমস্কি’র তত্ত্বগুলো সহজভাবে মাতৃভাষায় শুধু প্রচার করলেন না, এগুলোকে প্রয়োগ করলেন মাতৃভাষায়। এভাবে ব্যাকরণের নিরস বিজ্ঞানকে বাঙালি শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে গিয়ে ভাষাবিজ্ঞানী পবিত্র সরকারকে হতে হয় শিশুসাহিত্যিক ও পাঠ্যপুস্তক প্রণেতা।
পনেরো বছর পরে তিনি ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ হতে টানা সাত বৎসর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে ছিলেন। এরপর তিনি ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট কাউন্সিল অফ হায়ার এডুকেশন তথা পশ্চিমবঙ্গ উচ্চশিক্ষা সংসদের সহ–সভাপতি হন এবং ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন। ভারতীয় ভাষা পরিষদ ও বঙ্গীয় সাহিত্যপরিষদের সভাপতি ছিলেন। এছাড়া তিনি দেশের বিভিন্ন সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত আছেন। এখনও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং নানা কলেজে এমএ–র ক্লাস নিয়ে অক্লান্ত থাকছেন। দেশে–বিদেশে সভা–সমিতি–সেমিনারে সরব–সক্রিয় উপস্থিতির পাশাপাশি লেখাতেও অক্লান্ত ও বহুমুখী। ভাষাবিজ্ঞান ও ব্যাকরণ, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব, লোকসংস্কৃতি, ইংরেজি শিক্ষা, রম্যরচনা, শিশুদের জন্য ছড়া–গল্প–উপন্যাস রবীন্দ্রসংগীত, আত্মজীবনকথা– সব মিলিয়ে তাঁর নিজের বাংলা ও ইংরেজিতে শতাধিক বই, সম্পাদিত পঞ্চান্নটি।
পবিত্র সরকার প্রণীত ভাষাবিজ্ঞান ও শৈলীবিজ্ঞান বিষয়ক কয়েকটি বইয়ে চোখ বুলানো যাক। ভাষা দেশ কাল (১৯৮৪) বইয়ে সরকার সমাজভাষাবিজ্ঞানের কিছু মূল বিষয় নিয়ে আলোচনাসূত্রে মার্কসবাদ ও ভাষা, গোপন ভাষা, মাতৃভাষায় শিক্ষা, ভাষাপরিকল্পনা, শিশুর প্রথম ভাষা, সমাজভাষাবিজ্ঞান ও বিশ্বভাষা ইত্যাদি বহুবিধ বিষয়ের বিশ্লেষণ করেছেন। এসব আলোচনা বিদেশি মতের চর্বিতচর্বণ নয়, মৌলিক বক্তব্য ও দৃষ্টিভঙ্গিতে সমৃদ্ধ। কোনো ভারতীয় ভাষায় এরকম বই আরেকটি আমাদের নজরে আসেনি। বাংলাদেশ–ভারতের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে বইটি সহায়ক পাঠ্যগ্রন্থের মর্যাদা পায়। লোকভাষা সংস্কৃতির নন্দনতত্ত্ব (১৯৯১) বইয়ে আছে ‘লোকভাষা’ ও ‘সংস্কৃতি’ কথাদু’টির বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা। বাংলাভাষার প্রবাদ, গালাগাল, ফেরিওয়ালার ডাক, লৌকিক ভাষাতত্ত্ব ও গ্রাম্যভাষা বিষয়ক বিচার–বিশ্লেষণ। সর্বোপরি লোকসংস্কৃতির নন্দনতত্ত্ব নিয়ে মৌলিক আলোচনায় সমৃদ্ধ এমন বই ইংরেজিতেও দুর্লভ। ভাষামনন: বাঙালি মনীষা (১৯৯২) বইটিতে ভাষাতত্ত্বচর্চায় বাঙালি মনীষীগণের অবদান মূল্যায়ন করেছেন পবিত্র সরকার সম্পূর্ণ স্বাধীন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে। হাসতে হাসতে ইংরেজি (১৯৯৬) পবিত্র সরকারের শিশুসাহিত্য ও পাঠ্যপুস্তক এ–দুয়ের মিশ্ররীতিতে রচিত। ছোটদের ভাষাশিক্ষার জন্যে লেখা বইটা খানিকটা ‘রেফারেন্স গ্রামার’–এর মতো। গদ্যরীতি পদ্যরীতি (২০০২) বইয়ে পবিত্র বাংলা গদ্যভাষা ও কাব্যভাষাকে বিশ্লেষণ করেছেন শৈলীবিজ্ঞানের আলোকে। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, নজরুল, জীবনানন্দ প্রমুখের ভাষাশৈলী বিশ্লেষণের পাশাপাশি শৈলীবিজ্ঞানের তত্ত্বগুলিও এ–বইয়ে আলোচিত হয়েছে উদাহরণসমেত সহজ ভাষায়।
ভাষাপ্রেম ভাষাবিরোধ (২০০৩) ভাষা আর সমাজ সংক্রান্ত প্রসঙ্গ নিয়ে পবিত্র সরকারের দ্বিতীয় বই। এ–বইয়ে নানান দেশে ও অঞ্চলে, ভারতে, পশ্চিমবঙ্গে, বাংলাদেশে, কখনও–বা আমেরিকায় ভাষার সামাজিক–রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত টানাপোড়নের সূত্রগুলি পরীক্ষা করেছেন পবিত্র সরকার। বইটির কেন্দ্রীয় এবং দীর্ঘতম প্রবন্ধ ‘বাংলাভাষা, পূর্বপাকিস্তান, বাংলাদেশ’। বাংলাভাষা কিংবা যে–কোনো মাতৃভাষাকে যাঁরা ভালোবাসেন তাঁদের বইটি ভালো না লেগে পারে না। বাংলা ব্যাকরণ প্রসঙ্গ (২০০৬) বইয়ে ধ্বনিতত্ত্ব অংশে মৌলিক স্বরধ্বনি, দ্বিস্বরধ্বনি,অক্ষর, ধ্বনি পরিবর্তনের বিভিন্ন রীতি এবং রূপতত্ত্ব অংশে তিনি অব্যয়, কারক, বিভক্তি, বচন, বাচ্য ইত্যাদি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। পবিত্র সরকারের পকেট বাংলা ব্যাকরণ (২০১১) একটি ভাষা শিক্ষার বই। বাংলা ভাষার উচ্চারণ, কথা বানানোর নিয়ম ও কথা সাজিয়ে ঠিক–ঠিক অর্থ করে বাক্য তৈরির নিয়ম দেওয়া আছে বইটিতে। এতে বাংলা ভাষার ধ্বনি ও তাদের ব্যবহার, রূপতত্ত্ব, শব্দ নিয়ে ভাবনা, পদসহ ব্যাকরণের নানা বিষয় সাবলীলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া প্রমিত বাংলায় কথা বলার রীতি উল্লেখ করা হয়েছে বইটিতে। ব্যাকরণের খুঁটিনাটি বিষয়েও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। চম্স্কি ব্যাকরণ বাংলা বানান (২০১৩) বাংলা ভাষাবিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়ে লেখা বাইশটি প্রবন্ধের সংকলন। ব্যাকরণ মানে কী, খাঁটি বাংলা ব্যাকরণের বিন্যাস কী হবে, নোয়াম চম্স্কি ও তাঁর ভাষাতত্ত্ব, অভিধানের সীমা ও সম্ভাবনা, উপভাষা চর্চার ভূমিকা, জাতপাতের ভাষা ভাষার জাতপাত, হিন্দি–উর্দুর উচ্চারণ ইত্যাদি প্রবন্ধগুলো ঠাঁই পাওয়াতে ভাষা নিয়ে উৎসাহী পাঠকের জন্য প্রয়োজনীয় বই এটি। বাংলা লিখুন: নির্ভুল, নির্ভয়ে (২০১৯) কথাপ্রকাশ, ঢাকা থেকে প্রকাশিত বইটি–ভূমিকা, এবার প্রয়োগ, বানানের নীতি ও বর্ণক্রমিক শব্দবিন্যাস এই চারটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত। এই বইয়ে পবিত্র সরকার লিখেছেন:
‘সাংবাদিকদের ভাষার একটা কায়দা শিখতে হয় যার নাম প্রমুখণ। প্রমুখণ ভাষাটাকে তার মামুলি খবর দেওয়া–নেওয়া কাজ থেকে বের করে এনে একটু আকর্ষক করে তোলা, একটু অন্যভাবে বলা যাতে পাঠক বাধ্য হয় ভাবতে, ‘আরে খবরটাতো জানি, কিন্তু এমন করে বলছে, সেটাতো মন্দ লাগছে না। লোকটার ভাষার কায়দা আছে বটে।’ ফলে ভাষার একটু কায়দা চাই। স্কুলের রচনায় ‘গোরু একটি লাঙ্গুলবিশিষ্ট চতুষ্পদ জন্তু। গোরুরা মানুষের অনেক উপকার করে’ গোছের পথ ধরে এগোনো চলবে না। বরং, ‘চতুষ্পদ জন্তু হলে লাঙ্গুল থাকবে এটাই প্রকৃতির নিয়ম বলে মনে হয়। কাজেই গোরু জীবটি যেহেতু চতুষ্পদও বটে, সেহেতু তার লাঙ্গুলও আছে, এ ঘটনায় কোনো বিস্ময় নেই’ গোছের আরম্ভ অন্যরকম। এখানে মনে হয় ভাষার একটু প্রমুখণ ঘটল’ (পৃ.১৬)।
এভাবে ভাষাবিজ্ঞানের প্রতিটি নতুন পরিভাষা পবিত্র সরকার উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করেন। এতে করে তাঁর ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ক রচনাও শিশুসাহিত্য কিংবা সাহিত্য পদবাচ্যতা পায়। এটা পবিত্র সরকারের ভাষাচর্চার বিশিষ্ট শৈলী বা রীতি। বলাবাহুল্য বাংলা ভাষার সাহিত্য আলোচনায় শৈলীবিজ্ঞান বা রীতি বিজ্ঞানের বিস্তার ঘটে পবিত্র সরকারের হাতে। তাই তিনি অনায়াসে লিখতে পারেন: হাসতে হাসতে বানান, বানানের ক্লাস, ব্যাকরণের হাসিখুশি, গল্পে গল্পে উচ্চারণ ইত্যাদি ভাষাশিক্ষা বিষয়ক বই। তবে তাঁর বানান নিয়ে যেমন বাংলাদেশে বিতর্ক আছে, তেমনি বিতর্ক আছে আঞ্চলিক ভাষাকে উপভাষা অভিধা নিয়ে। পবিত্র সরকার ও অন্যান্য সম্পাদিত প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (২০১১) বইটি রবীন্দ্রনাথ নির্দেশিত প্রকৃত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ কি না এ–নিয়েও বিতর্ক বিস্তর। তবে ভুলে গেলে চলবে না বিতর্কের যুক্তি দিয়েই বিজ্ঞান তার বিজয়ের পথ নির্মাণ করে। পবিত্র সরকারের ভাষাবিজ্ঞানচর্চা বাংলাভাষাকে বিজয়ের পথ দেখাবে, সকল আঞ্চলিক ভাষাকে আলিঙ্গন করে বাংলাদেশে বাংলাভাষা অচিরেই বাঙালির সর্বস্তরের ভাষা হবার গৌরব অর্জন করবে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কলেজ