ভালো নেই চট্টগ্রামের শিল্পীরা

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উন্মুক্ত করার দাবি

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ৫:২৭ পূর্বাহ্ণ

শিল্পী হয়ে জন্ম নেওয়াটা কি অভিশাপ, নাকি পেশাদার শিল্পী হওয়াটা অপরাধ? প্রশ্নটা চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পেশাদার শিল্পীদের। যারা সংস্কৃতির কোনো না কোনো শাখাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন, করোনা বিপর্যয়ে তাদের অবস্থা শোচনীয়। তারা না পারছেন কারো থেকে ত্রাণ-ভিক্ষা নিতে, না পারছেন শুয়ে বসে দিন কাটাতে। কেননা অনুষ্ঠান হলেই তারা পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন, না হলে নয়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাস্কৃতিক অনুষ্ঠান উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের তিন কৃতী। এদেরই একজন দেশবরেণ্য জাদুশিল্পী রাজীব বসাক। তার জীবন-যৌবন পুরোটাই কেটেছে মঞ্চে; দর্শকদের মোহিত করার কাজে। করোনাকালীন সময়ে কেউ খোঁজ নেয়নি এ শিল্পীর। তাই অনেকটা ক্ষোভ থেকে জানালেন পেশা ছেড়ে দেয়ার কথা। অন্যথায় তার দাবি, পেশাদার শিল্পীদের অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া হোক।
তিনি বলেন, ছয় মাস কাটিয়ে দিলাম, এখন সাত মাস চলছে। কেউ খবর নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। আমার মতো যারা শিল্পকে ধ্যান-জ্ঞান মেনে জীবিকা নির্বাহ করছেন, আমাদের জন্য সরকার অন্তত কিছু করুক। আমি বলছি না, মন্ত্রণালয়ে চাকরি দিন। কিন্তু বিকল্প আয়ের পথটা অন্তত করে দিক। তিনি বলেন, রাস্তায় আজকাল কেউ যখন অটোগ্রাফ চায়, জিজ্ঞেস করে, কেমন আছি? শুনে মনে হয় রসিকতা করছে আমার সাথে। চট্টগ্রামে পেশাদার শিল্পী বেশি নেই। কারণ পেশাদার হলেই তিনি ঢাকায় চলে যান। কিন্তু চট্টগ্রামকে ভালোবেসে যারা রয়ে গেছে তাদের জন্য কি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কিছুই করার নেই?
একরাশ হতাশা ঝরে পড়ে রাজীব বসাকের কথায়। তিনি বলেন, এসব দুঃখ কারো সাথে শেয়ার করতে পারি না। মাঝে মধ্যে ঘর থেকে ইচ্ছে করে বের হয়ে যাই। রাত করে ফিরি। কারণ ঘরে থাকলে আমার সন্তান যদি কোনো কিছুর বায়না করে, আমি মেটাতে পারবো না। আমরা কিছুই চাই না। শুধু চাই আয়ের পথটা খুলুক। শিল্পীরা নাকি দেশের দর্পণ, এখন মনে হচ্ছে এদেশে শিল্পী হওয়াটা অপরাধ।

সঙ্গীতশিল্পী আলাউদ্দিন তাহের চট্টগ্রাম তথা দেশে শুদ্ধ সঙ্গীত চর্চায় জনপ্রিয় মুখ। তিনি বলেন, যারা সঙ্গীতকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন, তারা অর্থ সংকটে আছে। আমাদের তো জমা অর্থ তেমন থাকে না। যেটুকু আছে, তা দিয়ে চলেছি এ কয়েকমাস। তারপর কি হবে? কি করবো? কোথায় যাবো? গার্মেন্টস, রেস্টুরেন্ট, বিনোদন কেন্দ্র, অফিস-আদালত সব খুলে দিয়েছে; তাতে করোনার কোনো প্রভাব পড়ছে না। শুধু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অনুমতি দিলেই কি করোনা বেড়ে যাবে?
তিনি বলেন, আমার মনে হচ্ছে, সরকারে দায়িত্বরতদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। শিল্পী বলে একটা কিছু যে সমাজে আছে, তারা হয়তো ভুলে গেছেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় যেকোনো অনুষ্ঠানে শিল্পীদের অগ্রণী ভূমিকা থাকে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পর্যালোচনা করলেই বিষয়টি বোঝা যাবে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন, আমরা যারা সঙ্গীতকে পেশা হিসেবে নিয়েছি, তাদের কথা একটিবার চিন্তা করুন। কারণ আপনিই শিল্পীদের একমাত্র ভরসা।

আলাউদ্দিন তাহের আরো বলেন, গত সাত মাস শিল্পীদের কোনো রোজগার নেই। কিন্তু বাসা ভাড়া, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ, সামাজিক পদ মর্যাদা ঠিকই মেনে চলতে হচ্ছে। বর্তমানে শিল্পীরা একদম নিঃস্ব বলা চলে। তিনি এ সময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানান।
একই দাবি আঁখি মজুমদারেরও। মঞ্চ উপস্থাপনায় আঁখি বর্তমান সময়ের পরিচিত মুখ। পাশাপাশি আবৃত্তিও করেন তিনি। আঁখি বলেন, শুধু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই কি করোনা ছড়াবে? গণপরিবহন, শপিংমলসহ সবকিছুই যে খুলে দেওয়া হলো, তাতে কি সংক্রমণের ভয় নেই? কাকে দোষারোপ করবো? আমরা যারা ইভেন্ট অর্গানাইজার, তারা সরকারি কোনো অনুদান পাইনি। আমি জানি না, শিল্পীদের মধ্যে কারা অনুদান পেয়েছেন। আমি অন্তত পাইনি। আমরা এখন ভীষণ দুঃসময় পার করছি। দীর্ঘদিন ধরেই এই সেক্টরটা অবহেলিত। এই সেক্টরের দিকে সরকার যদি তাকায়, তাহলে ভালো হয়। শিল্পীরা এ সময়ে কীভাবে সারভাইব করবে, কাজের ক্ষেত্রটা কী হবে-এ ব্যাপারগুলো দেখা দরকার। স্বল্প পরিসরে হলেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, জীবিকার সংস্থানের পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তিরও প্রয়োজন। এটা ভীষণ জরুরি হয়ে পড়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্দরের নিয়োগে চট্টগ্রামের প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দাবি
পরবর্তী নিবন্ধহাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে সরিয়ে নেয়া হল আল্লামা শফীর মালামাল