নানা আয়োজনে নগরে বরণ করা হয় ঋতুরাজ বসন্তকে। এদিন ছিল আবার ভালোবাসা দিবস। ভালোবাসার আবেশ এবং বসন্তের রং; এ দুইয়ের সম্মিলনে অনন্য মাত্রা পায় দিনটি। গত শুক্রবার ছিল পহেলা ফাগুন। ভালোবেসে বসন্তের প্রথম দিনটিকে বরণে সকাল থেকে নগরের পাহাড়তলী আমবাগান সংলগ্ন রেলওয়ে জাদুঘর পার্ক ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মিউনিসিপ্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মিলনায়তনে ভিড় করেন নানা শ্রেণির মানুষ।
পাহাড়তলী আমবাগান রেলওয়ে জাদুঘর সংলগ্ন পার্কে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করে বোধন আবৃত্তি পরিষদ। ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান, দিগন্তে ঐ ফুলের আগুন লাগলো বসন্তে সৌরভে সেথা জাগলো–এমনি নানা গান, নাচ, আবৃত্তি, ঢোলবাদন, কথামালা, শোভাযাত্রা, যন্ত্রসংগীতসহ নানা আয়োজনে বসন্তকে বরণ করেছে বোধন আবৃত্তি পরিষদ।
‘নিবিড় অন্তরতর বসন্ত এলো প্রাণে’ শিরোনামে বোধনের বসন্ত উৎসব সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হয় ভায়োলিনিস্ট চিটাগাংয়ের যন্ত্রসংগীতের মধ্য দিয়ে। বোধন আবৃত্তি পরিষদের সভাপতি সোহেল আনোয়ারের সভাপতিত্বে এ সময় কথামালায় অংশ নেন বাসুদেব সিনহা, নিপ্পন পেইন্টের সিনিয়র ম্যানেজার মানব কুমার সাহা ও সিনিয়র সহসভাপতি সুবর্ণা চৌধুরী। এরপর বসন্তের হাওয়ায় দলীয় নৃত্যে অংশ নেন স্কুল অব ক্ল্যাসিক্যাল অ্যান্ড ফোক ডান্স, ওডিসি অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার, নৃত্যরূপ একাডেমি, মাধুরী ডান্স একাডেমি, সুরাঙ্গন বিদ্যাপীঠ, নৃত্য নিকেতনের শিল্পীরা। এরপর নানান ভাব–বন্ধনের গাঢ়তায় গানে অংশ নেন সুরপঞ্চম, ধ্রুপদ সংগীত নিকেতন, আর কে মিউজিক একাডেমি, আন্তর্জাতিক বিশ্বতান ও নন্দিনী রায়। বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করেন বোধন আবৃত্তি পরিষদের আবৃত্তি শিল্পীরা।
বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার দিয়ে শুরু হয় বিকালের আয়োজন। ঢোলবাদনের মধ্য দিয়ে বসন্ত শোভাযাত্রাটি পাহাড়তলীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে বসন্ত মঞ্চে যন্ত্র সংগীত পরিবেশন করে মোহন সংগীত বিদ্যালয়। সংগীত পরিবেশন করে বাগেশ্বরী সংগীতালয়। নৃত্য পরিবেশনায় ছিলেন নৃত্যেশ্বর নৃত্যালয়ের শিল্পীরা। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশনায় ছিল বোধন। পুরো অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন গৌতম চৌধুরী, পল্লব গুপ্ত, পলি ঘোষ, সুচয়ন সেনগুপ্ত, ঋত্বিকা নন্দী, ফাতেমা তুজ জোহরা, ইভান পাল ও অংকিতা ভট্টাচর্য।
বোধন : বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রাম বসন্ত উৎসব চসিক মিউনিসিপ্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। বোধন পরিষদ চট্টগ্রামের সহসভাপতি আবৃত্তি শিল্পী সুমন নন্দীর উদ্বোধনী আবৃত্তির দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে সদারঙ্গ উচ্চাঙ্গ সংগীত পরিষদ। একে একে অংশ নেয় যন্ত্র সংগীতে তালতীর্থ তবলা শিক্ষাকেন্দ্র, দলীয় সংগীতে নজরুল সংগীত শিল্পী সংস্থা, দলীয় নৃত্যে নটরাজ নৃত্যাঙ্গন একাডেমি, কৃত্তিকা নৃত্যালয়, ওডিসি অ্যান্ড টেগর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার, আলোড়ন ডান্স একাডেমি, নৃত্য নিকেতন, সঞ্চারি নৃত্যকলা একাডেমি, দ্যা একাডেমি অফ ক্লাসিকাল অ্যান্ড ফোক ডান্স, একক সংগীতে মহিমা দেব ত্রয়ী, নীপা চৌধুরী এবং বৃন্দ আবৃত্তিতে বোধন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন জাভেদ হোসেন, তৈয়বা জহির আরশি, লাভলী আক্তার নিশাত ও মোহিনী সংগীতা সিংহ। সাধারণ সম্পাদক প্রণব চৌধুরী ও সহসভাপতি অ্যাডভোকেট নারায়ণ প্রসাদ বিশ্বাসের বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সভাপতি সুজিত রায়, মাইনুল আজম চৌধুরী, সৌরভ দে, অসীম দাস, রিমা দাস, পৃথুলা চৌধুরী, জাহিদ, নিউটন ঘোষ, নিশি চৌধুরী, সুতপা মজুমদার, সন্দীপন সেন একা, হোসনে আরা নাজু, অনিমেষ পাল, সত্যজিৎ চক্রবর্তী, স্মরণ ধর, ফারজানা আক্তার মলি, ঋতু দে প্রমুখ।
প্রমা : আবৃত্তি সংগঠন প্রমার আয়োজনে নগরের সিআরবির শিরীষতলায় গতকাল শনিবার বসন্তকে বরণ করা হয়। সকালে প্রিয়তোষ বড়ুয়ার পরিচালনায় দি ভায়োলিনিস্ট চিটাগংয়ের যন্ত্রসঙ্গীত বাদনের মধ্য দিয়ে সূচনা হয় উৎসবের। প্রমা অবন্তীর পরিচালনায় ওডিসি অ্যান্ড ডান্স মুভমেন্ট সেন্টারের শিল্পীদের পরিবেশনায় দলীয় নৃত্য শুরুতেই উৎসবকে মুখর করে। এছাড়া নটরাজ নৃত্যাঙ্গন, নৃত্যানন্দ, নৃত্যরূপ একাডেমি, কৃত্তিকা নৃত্যালয়ের শিল্পীরাও দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন। ফাঁকে ফাঁকে একক গান পরিবেশন করেন শিল্পী সোমা রায়, রোজী বিশ্বাস, মাহফুজ আহমেদ, মশিউল আনোয়ার খান। বৃন্দ আবৃত্তিতে অংশ নেন প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের শিল্পীরা। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন বোধনের গৌতম চৌধুরী, ইব্রাহিম খলিল মাসুদ, সুমিষ্টা বড়ুয়া পপি, কলি দাশ, ফয়েজ হোসেন, রোমেনা আফাজ রুমি, স্নিগ্ধ চৌধুরী, চৈতী কুন্ডু, তপতী মজুমদার, সাফাত জামিল, প্রতিমা দাশ, তন্বী বড়ুয়া, অর্পিতা বড়ুয়া, তানজিয়া নওরিন ও ফাল্গুনী সিকদার।
এদিকে বিরতির পর বিকালে আবারও অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রেলওয়ে শিরীষতলা ব্যবহারের অনুমতি বাতিল করে। তাই বিকালের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে পারেনি প্রমা।