ভার্চুয়াল লাইব্রেরি : শিক্ষার ক্ষেত্রে বয়ে আনবে নবযুগের সূচনা

ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম | সোমবার , ১১ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ

ভার্চুয়াল লাইব্রেরি মূলত কম্পিউটারের মাধ্যমে একটি সমন্বিত ব্যবস্থা। যেখানে একটি গ্রন্থাগারের সমস্ত কার্যক্রম অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীগণ যেন খুব সহজে ব্যবহার করে পারেন। এক্ষেত্রে একজন ব্যবহারকারী একটি গ্রন্থাগার সম্পর্কে সকল সুযোগ-সুবিধা এবং বাস্তব জ্ঞান লাভ করতে পারেন। এখানে ভিডিও কনফারেন্সে মাধ্যমেও ব্যবহারকারীগণ গ্রন্থাগারের সুবিধাদি উপভোগ করতে পারেন এবং অনেকের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন অতি সহজে। এটি এমন একটি শিমূলেশন ব্যাবস্থা যা বাস্তব গ্রন্থাগারের মতই। ভার্চুয়াল লাইব্রেরিগুলি গবেষক, বিজ্ঞানী, সম্পদ পরিচালকদের নীতি নির্ধারক, স্টেকহোল্ডার এবং সাধারণ জনসাধারণের জন্য বিজ্ঞান সম্মত ব্যবস্থাপনা এবং নীতি সম্পর্কিত তথ্য ও সংস্থাপনের প্রবেশ দ্বার হিসাবেও কাজ করতে পারে।
অন্যভাবে বলা যায় যে, ভার্চুয়াল লাইব্রেরি হলো ডিজিটাল স্থান। যা ভার্চুয়াল বই এবং তাদের সম্পর্কিত নথিগুলিকে সংরক্ষণ করে এবং সংগঠিত করে। এটি এমন একটি স্থানকেও উল্লেখ করতে পারে। যেখানে বই পড়া থেকে শুরু করে সকল সুবিধা বিদ্যমান থাকে। এই স্থানগুলির মধ্যে কম্পিউটার, মোবাইল ডিভাইস এবং ইন্টারনেট অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। ইলেকট্রনিক লাইব্রেরি এবং ডিজিটাল লাইব্রেরির মতো শব্দগুলি সমার্থকভাবে ব্যবহৃত হয়। ডিজিটাল লাইব্রেরিগুলি আমাদের জ্ঞান সমাজে একটি মৌলিক ভূমিকা অর্জন করছে। সর্বপ্রথম ১৯৮৩ সালে এ ধরনের ভার্চুয়াল লাইব্রেরি নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং ১৯৯৪ সালে ভার্চুয়াল লাইব্রেরির প্রথম কাজ শুরু হয়। তবে ভার্চুয়াল লাইব্রেরিকে ডিজিটাল লাইব্রেরিও বলা যায়। এটি নিজে কোনো সামগ্রী বহন করে না বা ধারণ করে না। এটি শুধু কিছু তথ্যের পোর্টালকে সংরক্ষণ করে। ভার্চুয়াল লাইব্রেরির এই শব্দটিকে গ্রন্থাগারিকরা একটি দশক বা তারও বেশি সময় ধরে এমন একটি গ্রন্থাগারকে নির্দেশ করার জন্য ব্যবহার করেন। যা স্থানীয়ভাবে প্রদান করা পয়েন্টগুলির মাধ্যমে বৈদ্যুতিন বিন্যাসে বিতরিত তথ্যগুলিকে সরবরাহ করে থাকে।
গ্যাপেন ভার্চুয়াল গ্রন্থাগার সম্পর্কে বলেন-“এটি দূরবর্তী Access এর ধারণা”। তিনি বিষয়টিকে এমনভাবে সংজ্ঞায়িত করেন যে, এটি হচ্ছে মূলত একটি বিষয়, গ্রন্থাগার ও অন্যান্য তথ্য সংস্থার সেবা প্রদান করে। এটি একটি ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্ক যা বাইরে থেকে বিভিন্ন ধরনের ডাটা সরবরাহ করতে পারে। এটি বিশ্বব্যাপী একটি গ্রন্থাগার এবং বাণিজ্যিক তথ্য ও জ্ঞানের উৎস। গ্রন্থাগারিকগণ প্রথাগত ধ্যান-ধারণা ও ফোকাসিং পয়েন্ট ও এই ভার্চুয়াল গ্রন্থাগারকে পরিবর্তন করেছে। এছাড়া তালিকা তৈরি এবং সাময়িকী যেমন তথ্য সম্পদ তালিকাভুক্তকরণ এবং ব্যবস্থাপনা। এসব বিষয়েও ভার্চুয়াল গ্রন্থাগার সম্পূর্ণ নতুন ধারণা নিয়ে এসেছে। এটি মূলত সময় নষ্ট না করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাটা Access এর বিষয়েই এ গ্রন্থাগার মূল গুরুত্ব দেয়। আর গ্রন্থাগার, পণ্ডিত, প্রকাশক এবং নথি বিতরণ বিক্রেতাদের এ গ্রন্থাগার তাদের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের সাথে আরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের জন্য অনুপ্রাণিত করে চলছে।
ভার্চুয়াল লাইব্রেরির ধারণা
সাধারণত ভার্চুয়াল লাইব্রেরির মূল কাজ হচ্ছে শিক্ষার আরও দৃঢ় একটি ভিত্তি গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা প্রদান এবং জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা করা। শিক্ষার এই দৃঢ় ভিত্তি জীবনযাত্রার মানোন্নয়নেও ব্যাপক ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে ডিজিটাল ও আইসিটি সম্পর্কে এবং সকল বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে ধারণা পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বই, ম্যাগাজিন ও পত্রিকা প্রভৃতি ভার্চুয়াল গ্রন্থাগারের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে ব্যবহার করা যায়। ভার্চুয়াল গ্রন্থাগার এ উপকরণগুলো সররবাহ করে শিক্ষার ক্ষেত্রকে আরও বিস্তৃত করে তুলছে। জনসাধারণের সেবায় কার্যকর শিক্ষামূলক হাতিয়ার হতে পারে। এটিকে অবশ্যই ব্যাখ্যাযোগ্য, ব্যবহারযোগ্য এবং সম্ভাব্য ব্যবহারকারীদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে Access এর সুবিধা প্রদান করতে হবে। যে সংগ্রহ নির্মাণের উপর গুরুত্ব দেয়া উচিত তা হলো পাবলিক ডোমেইন আর সে মাধ্যমে তা Access যোগ্য হবে।
ভার্চুয়াল লাইব্রেরি বৈশিষ্ট্যসমূহ
ভার্চুয়াল লাইব্রেরি কিছু বৈশিষ্ট্য নিম্নে বর্ণিত হলো-
১. ভার্চুয়াল গ্রন্থাগার একটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে আপডেট করা তথ্য দু্রত এবং ব্যাপকভাবে Access করতে পারে।
২. ভার্চুয়াল গ্রন্থাগার শুধুমাত্র বইয়ের উপকরণের ক্যাটালগিং এর ক্ষেত্রে ঐতিহ্যবাহী বা পুরোনো গ্রন্থাগার পদ্ধতি পরিবর্তন করছে।
৩. Document Access এর ক্ষেত্রেই বেশি জোর দেয়া হয়েছে এবং এর বৃহৎ সংগ্রহের উপর নয়।
৪. সময় সাশ্রয়ী
৫. এটি কেবলমাত্র উন্নত দেশগুলির সাথে ডিজিটাল ডিভাইস তৈরি করে। ভার্চুয়াল লাইব্রেরির জন্য অবকাঠামোগত প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে সেবা প্রদান করতে পারে।
ডিজিটাল গ্রন্থাগার এবং ভার্চুয়াল গ্রন্থাগার শব্দগুলি পরস্পর পরিবর্তনযোগ্যভাবে ব্যবহার করা হয়। তবে এটি সঠিক নয়। তাদের উভয়ের আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা তাদের আলাদা করে তোলে। একটি ডিজিটাল গ্রন্থাগার হলো একটি গ্রন্থাগার যা ডিজিটাল উপকরণ এবং পরিসেবাগুলি নিয়ে গঠিত। বিশেষ করে ভার্চুয়াল লাইব্রেরির ফাংশন মানে পদ্ধতিগত বিকাশ নিশ্চিত করা এবং ডিজিটাল ফর্ম তৈরি, তথ্য এবং জ্ঞান সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এবং প্রদান করা।
ভার্চুয়াল লাইব্রেরি পরিচালনায় বিদ্যমান কিছু কার্যক্রম
বৈদ্যুতিন গ্রন্থাগার বা ভার্চুয়াল লাইব্রেরিটিও মাঝে মধ্যে ব্যবহৃত হয়। যদিও “ইলেকট্রনিক গ্রন্থাগার” আজকাল প্রায়শই পোর্টালগুলিকে বুঝায়। যা প্রায়শই সরকারি সংস্থাগুলি সরবরাহ করে। যেমন-ফ্লোরিডা বৈদ্যুতিন গ্রন্থাগারের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। যা নিম্নে বর্ণিত হলো-ক. ডিজিটাল প্রকাশনা একটি পরিসীমা আইসিটি ভিত্তিক Access প্রদান পাবলিক ডোমেইন এবং অন্যান্য উৎস থেকে শিক্ষা গ্রহণ, খ. দূরত্ববর্তী শিক্ষার সমস্ত উপকরণ এর Access প্রদান, গ. ছাত্র, গবেষক এবং শিক্ষকের তথ্য দক্ষভাবে সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা, ঘ. বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, গ্রন্থাগার এবং শিক্ষিত সমাজের মধ্যে যোগাযোগ এবং সহযোগিতা জোরদার করে থাকে জাতীয়, আঞ্চলিক অথবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, ঙ. জীবনকাল ধরে শেখার সুযোগ থাকে এবং চ. বিষয়বস্তু সুপারিশ।
ভার্চুয়াল লাইব্রেরির পরিবেশের নবযুগ
ভার্চুয়াল লাইব্রেরি পরিবেশের অর্থ হলো ভার্চুয়াল যোগাযোগ এবং একটি ইলেকট্রনিক পরিবেশ। এটি গ্রন্থাগারের জন্য একটি বড় বাস্তবতা। যা গ্রন্থাগারের ইন্টারনেট সাইট থেকে ইন্টারনেটে তথ্য খোঁজার মত করে ব্যবহারকারীদের দেখতে এবং ব্যবহার করতে পারে। এর ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও সাধারণ অনুসন্ধানের জন্য ফোন এবং ই-মেইল দ্বারা গ্রন্থাগার কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করা হয়। ভার্চুয়াল গ্রন্থাগারতে সেবা সম্পূর্ণভাবে ভার্চুয়ালই হবে। ভার্চুয়াল তথ্য সেবা প্রদান করা ভিন্ন নিম্নলিখিত এরিয়াতে ঐতিহ্যগত তথ্য পরিসেবা বিতরণ করা হয়ে থাকে। সদস্যরা সাধারণত গ্রন্থাগারের সম্পদগুলি আগে থেকে দেখতে পারে না। তবে ডাটাবেজ থেকে সেগুলি ব্যবহার এবং সংগ্রহও করতে পারে। আর সকল যোগাযোগ ই-মেইল, ফোন এবং ফ্যাক্স এর মাধ্যমে হয়ে থাকে। তথ্য স্বাক্ষরতার ট্রেনিংও দেওয়া হয়ে থাকে বিভিন্ন উদ্ভাবনীয় পন্থায়। যেহেতু সরাসরি এটি প্রদান করা সম্ভব নয়। এমনকি কিছু কিছু গ্রন্থাগার টেলি কমিউনিকেশন সেশনেরও ব্যবস্থা করেছে। যেখানে সেশনগুলি টেলিফোনের মাধ্যমে অথবা বিভিন্ন ইলেক্টনিক মিডিয়ার মাধ্যমে প্রদান করা হয়ে থাকে। তথ্য সম্পদ ব্যবহার করার জন্য তথ্য প্রযুক্তির একটি বড় ভূমিকা আছে এবং ক্রমান্বয়ে এর উপর নির্ভরতা বাড়ছে। ফলপ্রসূতে গ্রন্থাগারের ব্যবহারকারীগণ এখন প্রায়ই গ্রন্থাগার থেকে টেকনিক্যাল সাহায্যের আশা করে থাকেন। আর নেটওয়ার্ক অথবা রিসোর্স ব্যবহারের সমস্যাই এখন ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছে। এর মানে হচ্ছে যে, গ্রন্থাগারিকগণ এখন বর্তমান টেকনিক্যাল বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জ্ঞান থাকতে হবে এবং আপডেট তথ্য রাখতে হয়।
ভার্চুয়াল লাইব্রেরি সেবার উপকারিতা
ভার্চুয়াল লাইব্রেরি সেবার কিছু উপকারিতা জীবন ব্যাপী থাকবে। যা প্রতিনিয়তই এর সেবার মডিউলগুলি উন্নত হবে। নিম্নে কিছু সেবার উপকারিতা ব্যবহারকারীদের স্বার্থে আলোচনা করা হলো- ক. ভার্চুয়াল গ্রন্থাগারে কোনো ধরনের সরাসরি উপস্থিতি ছাড়াই যে কোনো সময়ে এবং যে কোনো জায়গায় থেকে সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করতে সক্ষম, খ. এ সেবার জন্য শুধুমাত্র ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন, গ. ভার্চুয়াল গ্রন্থাগারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বিষয়ের উপর একই সাথে অনেককে সেবা প্রদান করতে পারে এবং ঘ. এ সেবার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি যুগোপযোগী তথ্য রাখা সম্ভব।
ভার্চুয়াল লাইব্রেরি সমগ্র জীবনব্যাপী শিক্ষার একটি মাধ্যম। এটি প্রাতিষ্ঠানিক অথবা স্বশিক্ষা যাই হোক না কেন দু’টির জন্য খুবই মূল্যবান বিষয়। এ সেবার কার্যক্রমগুলি সংরক্ষণ করে সারা জীবন ধরে শুনতে এবং দেখতে পারে। তথ্য প্রযুক্তি দিন দিন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় এবং ভার্চুয়াল লাইব্রেরিতে। তাই জনপ্রিয়তা তরান্বিত হচ্ছে দক্ষ গ্রন্থাগার পেশাজীবীদের নিরলস প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষা, গবেষণা, উন্নয়নের প্রভাষক এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপকল্প বাস্তবায়নের নেতৃত্বের জন্য আন্তর্জাতিক মান সম্পূর্ণ গ্রন্থাগার হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
লেখক : গ্রন্থাগার বিভাগের প্রধান,
সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম

পূর্ববর্তী নিবন্ধজমিদারি প্রথা-আভিজাত্য থেকে অভিশাপে
পরবর্তী নিবন্ধমুক্তিযুদ্ধ ও বর্তমান বাংলাদেশ