ভারি বর্ষণে নিম্নাঞ্চলে প্লাবন বহু মানুষ পানিবন্দি

বিভিন্ন উপজেলায় গ্রামীণ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হারবাংয়ে পাহাড় ধসে ঘুমন্ত নারীর মৃত্যু

আজাদী ডেস্ক | শুক্রবার , ২ জুলাই, ২০২১ at ৬:৪০ পূর্বাহ্ণ

একদিনের ভারি বর্ষণে বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পেকুয়ায় প্রায় অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় ১০হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চকরিয়ায় বিভিন্নস্থানে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে গ্রামীণ অবকাঠামো, বেড়িবাঁধসহ ছোট-বড় অনেক সড়ক। লোহাগাড়ায় এলাকার নদী, খাল ও ছড়ায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাঁশখালীতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে বাঁশখালীর পশ্চিমাংশের ইউনিয়নগুলোর নিম্নাঞ্চলে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে মাছের ঘের, পুকুর ও বসতঘর, গ্রামীণ সড়কগুলো।
আমাদের পেকুয়া প্রতিনিধি জানান, উপজেলার টৈটং, উজানটিয়া, রাজাখালী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামীণ সড়ক পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় স্থানীয়দের চলাচলে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, টানা দুইদিনের বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার টৈটং ইউনিয়নের ১৫টি, শিলখালী ইউনিয়নের ১০টি, উজানটিয়ায় ১২টি, রাজাখালীতে ৮ টি, বারবাকিয়ার ৪ টি, পেকুয়া সদরের ৩ টি ও মগনামার ৯ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও বেশ কিছু মৎস্য ঘের, কাঁচা ঘরবাড়ি পানির নীচে তলিয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এতে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
প্লাবিত ও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোর মধ্যে টেটং ইউনিয়নের দরগামুড়া, রমিজ পাড়া, হাজির পাড়া, বটতলি, জুম পাড়া, বাজার পাড়া, ঢালার মুখ, মাঝের পাড়া, হিরাবুনিয়া পাড়া, হারকিলার ধারা, নতুন পাড়া, শের আলী মাস্টার পাড়া, ভিলেজার পাড়া, পশ্চিম টৈটং, রাজাখালী ইউনিয়নের সিকদার পাড়া, রায় বাপের পাড়া, মিয়ার পাড়া, লালজান পাড়া, সুন্দরী পাড়া, বখশিয়া ঘোনা, বামুলা পাড়া, উজানটিয়ার মিয়া পাড়া, ফেরাসিংগা পাড়া, ঘোষাল পাড়া, পেকুয়ার চর, করিমদাদ মিয়ার ঘাট এলাকা, বারবাকিয়ার কাদিমাকাটা, জালিয়াকাটা, পাহাড়িয়া খালীর একাংশ, ভারুয়াখালী, মগনামার বাইন্যাঘোনা, শরৎঘোনা, কাজী মার্কেট, সদরের মেহেরনামা, হরিনাফাড়ি, সিরাদিয়াসহ উপজেলার প্রায় অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
টৈটং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পাহাড়ি ঢলের কারণে তার ইউনিয়নের বেশিরভাগ গ্রাম পানির নীচে তলিয়ে গেছে। গতকাল প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করে পানিবন্দি মানুষদের দ্রুত সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন পেকুয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিকি মারমা।
এদিকে লোহাগাড়ায় খাল পাড়ের মানুষ আতংকের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। বহু বসতঘর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। গতকাল স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানান।
চুনতি ইউপি চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন জানান, ভারী বর্ষণে ইউনিয়নের সাতগড় ছড়া ও হাতিয়ার খালের ভাঙ্গনে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্রীজ-কালভার্ড ও চলাচলের রাস্তা। এছাড়া রহমানিয়া পাড়া, পাঠিয়াল পাড়া ও সাতগড় এলাকায় ৭টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আধুনগর ইউপি চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন জানান, টানা বৃষ্টিতে ডলুখাল ও হাতিয়ার খালের পানি বেড়ে ইউনিয়নের সিপাহি পাড়া, মিয়া পাড়া, সর্দানী পাড়া, চৌধুরী পাড়া, মরা ডলুকুল, ক্যামেলিয়া পাড়া, পাল পাড়া ও উজা পাড়াসহ প্রায় ১০টি এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া সিপাহি পাড়ায় শাহ মজিদিয়া-রশিদিয়া সড়ক, মিয়া পাড়া সড়ক ও রোস্তমের পাড়া সড়ক ভেঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। লোহাগাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাহবুব আলম শাওন জানান, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার সংবাদ পেয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

চকরিয়া প্রতিনিধি জানান, চকরিয়ার নিম্নাঞ্চলে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার বিভিন্নস্থানে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে গ্রামীণ অবকাঠামো, বেড়িবাঁধসহ ছোট-বড় অনেক সড়ক। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।
এদিকে ভারী বর্ষণে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোররাতে চকরিয়া হারবাং মৎস্যঘোনায় পাহাড় ধসে পড়ে সংরক্ষিত বনে নির্মিত টিনশেড বাড়িতে। এতে ঘুমন্ত অবস্থায় এক নারী নিহত হয়েছেন।
তাঁর নাম রাবেয়া খাতুন (৫০)। তিনি পেকুয়ার রাজাখালীর বকশীঘোনা গ্রামের ফিরোজ আহমদের স্ত্রী।
হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। কয়েকবছর আগে রাজাখালী থেকে ফিরোজ আহমদ সপরিবারে হারবাং মৎস্যঘোনায় বসবাস করে আসছিল।
চেয়ারম্যান মিরান জানান, বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। নিহতের লাশ উদ্ধার করে পরিবারের সদস্যরা নিজ গ্রাম পেকুয়ায় নিয়ে যায়।
চকরিয়া পৌর মেয়র আলমগীর চৌধুরী জানান, ভারী বর্ষণে বিভিন্ন সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গতকাল থেকে এসব সড়ক চলাচলের জন্য মেরামত করা হচ্ছে।
এদিকে চকরিয়ার হারবাং, বরইতলী, কৈয়ারবিল, চিরিঙ্গা, কাকারা, লক্ষ্যারচর, বিএমচর, কোনাখালী, ঢেমুশিয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
এর মধ্যে মাতামুহুরীর উজান থেকে নেমে আসছে পাহাড়ি ঢল। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে এখানে বন্যা দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন ছড়াখাল ভরাট, দখলসহ বিভিন্ন কারণে ভারী বর্ষণে পানি ভাটির দিকে নামতে না পেরে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
সাংসদ জাফর আলম বলেন, জলাবদ্ধতার কারণ শনাক্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
বাঁশখালী প্রতিনিধি জানান, পৌরসভার নালা নর্দমায় পানি চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় অধিকাংশ এলাকার বসতভিটায় পানি উঠেছে। উপজেলার অফিসপাড়াও জলমগ্ন হয়েছে। বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার সকালে প্রবল বর্ষণে উপকূলীয় এলাকা সরল, গন্ডামারা, ছনুয়া, পুইছড়ি, চাম্বল, কাথরিয়া, বাহারছড়া, পুকুরিয়া, খানখানাবাদ, শিলকূপ ও বাঁশখালী পৌরসভার অধিকাংশ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সালেক বলেন- প্রবল বর্ষণে সবজি চাষীদের কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে পানি জমে না থাকলে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হবে না। বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, প্রবল বর্ষণে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিদর্শন এবং চেয়ারম্যানদের সাথে কথা বলে প্রকৃত তথ্য জানার চেষ্টা করছি। বেশ কিছু এলাকায় প্রবল বর্ষণে পানি উঠলেও তা ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে যাত্রী, চালককে জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধবিদেশগামী কর্মীদের করোনা টিকার প্রি-রেজিস্ট্রেশন আজ শুরু