ভারত থেকে জিটুজি ভিত্তিতে আরও এক লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। এছাড়া আগে আমদানির অনুমোদন পাওয়া চালের মধ্যে এদিন ভারতের একটি বেসরকারি কোম্পানি থেকে প্রতিকেজি ৩৫ টাকা দরে ৫০ হাজার টন কেনার প্রস্তাবও অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, খাদ্য অধিদপ্তরের প্রস্তাবে ভারতের ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফার্মার্স প্রকিউরমেন্ট প্রসেসিং অ্যান্ড রিটেইলিং কো-অপারেশনের কাছ থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এক লাখ টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
এছাড়া খাদ্য অধিদপ্তরকে ভারতের বেসরকারি পিকে এগ্রি লিংক লিমিটেডের কাছ থেকে ১৭৪ কোটি ৬৫ লাখ ৮৩ হাজার ২০০ টাকায় ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় সংক্রান্ত কমিটি। এ হিসাবে প্রতি টন চালের দাম পড়বে ৪১১ দশমিক ৯৩ ডলার। অর্থাৎ প্রতিকেজির প্রায় ৩৫ টাকা করে। ধান কাটার ভরা মওসুমে চাল আমদানির নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা এমন এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় তথ্য উপাত্তের সমন্বয় করে প্রয়োজন অনুযায়ী চাল আমদানি করছে। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই আমদানি হচ্ছে, ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই। চলতি এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে দেশের হাওর অঞ্চলে বোরো মওসুমের ধান কাটা শুরু হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। আগাম বন্যা কিংবা ঢলের শঙ্কা এড়াতে সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জেসহ নিম্নাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে বেশ তাড়াহুড়ো করে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণে গত চার মাস ধরে সরকার চাল আমদানির প্রচেষ্টা চালালেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়নি। ফলে এই সময়ে ঊর্ধমুখী চালের দামও খুব একটা কমেনি। অর্থমন্ত্রী জানান, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটির সভায় বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানিকে তৃতীয় সবামেরিন ক্যাবল স্থাপন সংশ্লিষ্ট অংশের কাজ এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৬ কনসোর্টিয়ামের নিজস্ব ক্রয় প্রক্রিয়া অনুযায়ী কেনার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহিদা আক্তার বলেন, ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় গতকাল বুধবার আটটি প্রস্তাব আসলেও অনুমোদন দেওয়া হয় সাতটি। এর মধ্যে পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে সুইজাল্যান্ডের এওটি ট্রেডিংয়ের কাছ থেকে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি কেনার একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে খরচ হচ্ছে ২৪৩ কোটি ৩০ লাখ ৩২ হাজার ৩৫৮ টাকা।
অনুমোদন পাওয়া অন্যান্য প্রকল্পের দরপ্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে, শরীয়তপুর (মনোহর বাজার)-ইব্রাহিমপুর ফেরি ঘাট পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প’ আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ককে চার লেনে জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ প্রকল্প, খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প, চাঁদপুর ও শরীয়তপুর জেলার মধ্যবর্তী মেঘনা নদীর উপর শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কে ও গজারিয়া মুন্সিগঞ্জ সড়কে সেতু নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা এবং মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানান হয়, ক্রয় কমিটির অনুমোদিত সাতটি প্রস্তাবে মোট ব্যয় হবে এক হাজার ৭৫৫ কোটি ৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এতে সরকারি কোষাগার থেকে দিতে হবে এক হাজার ৮২ কোটি ৫৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। ভারতীয় এঙ্মি ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে পাওয়া ৬৭২ কোটি ৪৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকা দেওয়া হবে বাকি ব্যয় মেটাতে।