ভারত ঘুরে ঢাকায় এসে ক্যান্সার চিকিৎসা

সুস্থ হয়ে নিজ দেশ ভুটানে ফিরছেন তরুণী

| রবিবার , ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:২৫ পূর্বাহ্ণ

এক দশক আগে নাকের গহ্বরে ক্যান্সার ধরা পড়ে কারমা দেমার; ভুটানে সেই চিকিৎসা না থাকায় যান ভারতে, কিন্তু সেখানেও কাজ না হওয়ায় মাস দুই আগে ভর্তি হন ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। গত মাসে এই হাসপাতালে সফল অস্ত্রোপচারের পর এখন সুস্থ ২৩ বছরের এ ভুটানি তরুণী। অপেক্ষায় আছেন নিজ দেশে ফেরার। বার্ন ইনস্টিটিউটে গতকাল শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে কারমা দেমার চিকিৎসার পেছনের গল্প আর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি তুলে ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

কারমার চিকিৎসা বোর্ডের নেতৃত্বে থাকা বার্ন ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক প্রদীপ চন্দ্র দাস বলেন, ১০ বছর আগে কারমার নাকের গহ্বরে ক্যানসার শনাক্ত হয়। সেই চিকিৎসা ভুটানে সম্ভব ছিল না। পরে তিনি ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। ওই হাসপাতালে তাকে কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তার নাকের ভেতরে পচন দেখা দেয় এবং নাকের আকারআকৃতি অস্বাভাবিক হয়ে যায়। নাকের আকার ঠিক করার জন্য নতুন করে টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে কারমা ভর্তি হন জানিয়ে প্রদীপ চন্দ্র বলেন, সেখানে তার নাকে দুইবার অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু তিনি আর আগের স্বাভাবিক চেহারা ফিরে পাননি। পরে ভুটান চলে যান। টাটা মেমোরিয়ালে গিয়েও কাজ না হওয়ায় বাংলাদেশে আসেন কারমা। এ দেশের চিকিৎসকরা তিনটি বোর্ড গঠন করে তার ক্ষতিগ্রস্ত নাক ঠিক করার চেষ্টা শুরু করেন। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে নিজের সুস্থতার কথা তুলে ধরে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানান সেই তরুণী। তিনি বলেন, আমি আজ এখানে এসেছি সবাইকে ধন্যবাদ দিতে। সার্জারির আগে অনেক টেনশন ছিলাম আমার কন্ডিশন নিয়ে। এখন সার্জারির পর আমি অনেক ভালো অনুভব করছি। এখানে চিকিৎসা অনেক ভালো ছিল। আমি সুস্থ অনুভব করছি। আমি এজন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ও ভুটান সরকার যৌথভাবে থিম্পুতে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের মাধ্যমে একটি প্লাস্টিক সার্জারি ক্যাম্পের আয়োজন করে। বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন ছিলেন সেই ১৪ সদস্যদের চিকিৎসক দলের নেতৃত্বে। তিনি বার্ন ইনস্টিটিউটগুলোর জাতীয় প্রধান সমন্বয়কও।

কারমার অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেওয়া চিকিৎসক প্রদীপ চন্দ্র দাস জানান, সাত দিনব্যাপী ক্যাম্পে ১৬টি জটিল অস্ত্রোপচার হয়। আর সেই ক্যাম্পেই নাকের চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন কারমা দেমা। এ চিকিৎসক বলেন, বিদেশি নাগরিককে জাতীয় প্রতিষ্ঠানে এনে চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু আইনি জটিলতা আছে। এরপর ভুটান ও বাংলাদেশ সরকার কারমার চিকিৎসা শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে করার বিষয়ে একমত হয়। গত ১৪ ডিসেম্বর তাকে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

কারমার অস্ত্রোপচার হয় ৯ জানুয়ারি। বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের তিনটি টিম যৌথভাবে প্রায় ৯ ঘণ্টা ধরে নাক পুনর্গঠনের সার্জারি করে। তার শরীরের তরুণাস্থি ও হাতের চামড়া নিয়ে নাক পুনর্গঠন করা হয়।

কারমার বাংলাদেশে আসার গল্প তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেন, ভুটানে আমরা যখন গিয়েছিলাম, তখন আমি কিন্তু সবগুলো আউটডোরেই ছিলাম। এই মেয়েটা সম্পর্কে আমাদের যখন আলাপ হয়, আমরা চিন্তা করলাম মেয়েটাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে হবে। আমি তাৎক্ষণিকভাবে ভুটানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বললাম এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও একটা মেসেজ দিলাম যে, আমরা একজন রোগী নিয়ে আসছি। তো উনি বললেন, ঠিক আছে, তুমি নিয়ে আসো।

কারমার আরও অস্ত্রোপচার করতে হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা তাকে এখন ছেড়ে দেব। পরে সে আবার আসবে এবং আমরা তার নাকটাকে সুন্দর করে একটা পর্যায়ে নিয়ে যাব।

সংবাদ সম্মেলনে ভুটানের রাষ্ট্রদূত রিনচেন কুয়েনসিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ ও ভুটান বন্ধুরাষ্ট্র। ভুটানের মেডিসিন খাত নিয়েও বাংলাদেশ কাজ করছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজেও ভুটানের অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। আমি ভবিষ্যতেও ভুটানবাংলাদেশের বন্ধুত্ব অটুট থাকবে বলে বিশ্বাস করি।

কারমার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হাসিব রহমান এবং কারমার বড় ভাই কারমা ফুঁনথো সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরামুতে দুই কোটি টাকার স্বর্ণের চুড়ি জব্দ, তরুণী আটক
পরবর্তী নিবন্ধ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হজ নিবন্ধনের অবশিষ্ট টাকা জমার নির্দেশ