ভারত ও বাংলাদেশে ফের সংগঠিত হওয়ার চেষ্টায় আল-কায়েদা : জাতিসংঘ

তাদের লক্ষ্য বাংলাদেশ, জম্মু কাশ্মীর ও মিয়ানমারে কার্যক্রম বিস্তৃত করা

| সোমবার , ৩১ জুলাই, ২০২৩ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে সক্রিয় হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী দল আল কায়েদা তাদের আঞ্চলিক মিত্রদলগুলোকে আবারও সংগঠিত করছে বলে সতর্কবার্তা এসেছে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে। ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, গত সপ্তাহে প্রকাশিত দ্য অ্যানালিটিক্যাল সাপোর্ট অ্যান্ড স্যাংশন্স মনিটরিং টিম অব দ্য ১২৬৭ আইএসআইএল (দায়েশ) এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের আলকায়েদা স্যাংশন্স কমিটির ৩২তম প্রতিবেদনে ওই সতর্কবার্তা এসেছে। খবর বিডিনিউজের।

জাতিসংঘের একটি সদস্য রাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আল কায়েদা এখন একিউআইএসকে (আলকায়েদা ইন দ্য ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট) সংগঠিত করছে, তাদের লক্ষ্য বাংলাদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর এবং মিয়ানমারে কার্যক্রম বিস্তৃত করা। ওই সদস্য রাষ্ট্র এটাও মনে করছে, একিউআইএসের অল্প কিছু সদস্য ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্তখোরাসানের (আইএসআইএলকে) সঙ্গে যোগ দিতে বা তাদের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। খবর বিডিনিউজের।

আলকায়েদার মূল ঘাঁটি আফগানিস্তানে এখনো তাদের ৩০ থেকে ৬০ জন সদস্য এবং প্রায় ৪০০ যোদ্ধা রয়েছে। পরিবারের সদস্য ও সমর্থক মিলিয়ে এ সংখ্যা দুই হাজারে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়েছে, ভারতীয় উপমহাদেশে আলকায়েদার প্রায় ২০০ যোদ্ধা ছড়িয়েছিটিয়ে আছে, যাদের নেতা ওসামা মেহমুদ।

কয়েকটি সদস্য রাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণের বরাতে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, আলকায়েদা প্রধান আয়মান আলজাওয়াহিরির মৃত্যুর পর খুব সম্ভবত দলটির নেতৃত্ব পেয়েছেন সাইফ আলআদল, যিনি বর্তমানে ইরানে অবস্থান করছেন। আফগানিস্তানে সক্রিয় আরেক জঙ্গি দল আইএসআইএলকে কে এখন ওই অঞ্চলের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে। পরিবারের সদস্যদের মিলিয়ে আইএসআইএলকে এর ৪ থেকে ৬ হাজার সদস্য আফগানিস্তানে রয়েছে।

সানাউল্লাহ গাফারিকে আইএসআইএলকে এর সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী নেতা ধরা হয়। যদিও একটি সদস্য রাষ্ট্র বলেছে, সানাউল্লাহ গত জুনে আফগানিস্তানে নিহত হয়েছেন। তবে ওই তথ্যের সত্যতা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএসআইএলকে আফগানিস্তানে তালেবান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয়ের উপরই হামলা করছে এবং দিন দিন তাদের হামলার সক্ষমতা এবং সফলতা বাড়ছে। তারা হাই প্রোফাইল টার্গেটে হামলার কৌশল নিয়েছে, যাতে দেখানো যায় দেশটির বর্তমান তালেবান প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে কতটা ব্যর্থ।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলছে, আফগানিস্তান এখনো সন্ত্রাসী এবং জঙ্গি দলগুলোর চারণভূমি হয়ে আছে। দেশটিতে প্রায় ২০টি জঙ্গি দল সক্রিয়। তারা ওই অঞ্চলের পুরোটা জুড়ে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে এবং ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইছে। সেখানে তালেবান এবং আলকায়েদার মধ্যে সম্পর্ক এখনো ঘনিষ্ঠ এবং তাদের কার্যক্রমও একই ধরনের। দেশটির বেশিরভাগ অংশে আলকায়েদা গোপনে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে, যাতে তালেবান প্রশাসন ‘আফগানিস্তানের মাটিকে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে আর ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না’ বলে যে প্রচার চালাচ্ছে সেটা বাস্তব মনে হয়। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে এমন ধারণাই প্রকাশ করা হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, তালেবান প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় আলকায়েদার সদস্যরা দেশটির আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং প্রশাসনে অনুপ্রবেশ করে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা আলকায়েদা সেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। সেই সঙ্গে আলকায়েদা নতুন যোদ্ধা সংগ্রহ এবং তাদের জড়ো করতে আফগানিস্তানকে ব্যবহার করছে। সেখানে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশে তাদের জঙ্গি তৎপরতার সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। আফগানিস্তানের কুনার ও নুরিস্তান প্রদেশে নতুন নতুন প্রশিক্ষণ সেন্টার বানিয়ে আলকায়েদা নিজেদের ‘পুনর্গঠন’ করছে বলেও প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ২০১৩ সালের পর থেকে একের পর এক জঙ্গি হামলা ও হত্যার মধ্যে বেশ কিছু ঘটনার দায় স্বীকার করা হয়েছিল আলকায়েদার তরফ থেকে। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবশ্য দাবি করে আসছে, ওইসব ঘটনা ঘটিয়েছে দেশীয় উগ্রবাদীরাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবেতন-ভাতা ও পেনশনে যাবে ৭৮ ভাগ
পরবর্তী নিবন্ধপাকিস্তানে রাজনৈতিক সমাবেশে বোমা হামলা, নিহত ৪৪