ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে যোগ হোক নতুন মাত্রা

| মঙ্গলবার , ২৫ জুন, ২০২৪ at ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি বাণিজ্য ও সংযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারের মাধ্যমে বাংলাদেশভারত সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। শনিবার নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে একান্ত ও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন দুই নেতা। বৈঠকে দুই সরকারপ্রধান উভয় দেশের স্বার্থে একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে ডিজিটাল ও সবুজ অংশীদারত্বের জন্য যৌথ দৃষ্টিভঙ্গিতে সম্মত হয়েছেন। এর আগে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে একাধিক সমঝোতা স্মারক সই করে ঢাকা ও নয়াদিল্লি।

চট্টগ্রামকলকাতা বাস চালুসহ সফরে ১৩টি ঘোষণা এসেছে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকসহ বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষরের পর গণমাধ্যমের সামনে এসব ঘোষণা দেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা। সফরের ১৩ ঘোষণা হলো. রাজশাহী ও কলকাতার মধ্যে নতুন ট্রেন সার্ভিস চালু করা হবে। ২. চট্টগ্রাম ও কলকাতার মধ্যে নতুন বাস সেবা চালুর ঘোষণা। ৩. গেদেদর্শনা এবং হলদিবাড়িচিলাহাটির মধ্যে ডালগাঁও পর্যন্ত পণ্য ট্রেন সার্ভিস চালু করা হবে। ৪. অনুদান সহায়তায় সিরাজগঞ্জে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো নির্মাণ করা হবে। ৫. ভারতীয় গ্রিডের মাধ্যমে নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানি শুরু হবে। ৬. গঙ্গা পানি চুক্তির নবায়ন নিয়ে আলোচনার জন্য যৌথ কারিগরি কমিটি গঠিত হবে। ৭. বাংলাদেশ ভারতপ্রশান্ত মহাসাগরীয় উদ্যোগে যোগ দিয়েছে। ৮. বাংলাদেশিদের জন্য মেডিকেল ইভিসা চালু। ৯. তিস্তার পানি বণ্টনে টেকনিক্যাল টিম পাঠাবে ভারত। ১০. বাংলাদেশের ৩৫০ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ১১. মুক্তিযোদ্ধা স্কিমের আওতায় রোগীপ্রতি সর্বোচ্চ ৮ লাখ রুপি করে দেওয়া হবে। ১২. রংপুরে ভারতের নতুন সহকারী হাইকমিশন। ১৩. ইউপিআই (ইউনিফাইড পেমেন্ট ইন্টারফেস) চালু করার জন্য এনপিসিআই (ন্যাশনাল পেমেন্ট করপোরেশন অফ ইন্ডিয়া) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক মধ্যকার চুক্তি।

উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের পর ভারতে কোনো সরকারপ্রধানের এটিই প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। এ ছাড়া এই সফরটি ছিল ১৫ দিনেরও কম সময়ে ভারতের রাজধানীতে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় সফর। এর আগে গত ৯ জুন মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

যৌথ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজ আমাদের দুই পক্ষের মধ্যে অত্যন্ত ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আমরা অন্যান্য পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের মধ্যে রাজনীতি ও নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও সংযোগ, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, জ্বালানি ও শক্তি এবং আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেছি। তিনি বলেন, আমরা আমাদের দুদেশের এবং জনগণের কল্যাণের জন্য আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করার বিষয়ে সম্মত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, উভয় দেশই একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে আমাদের পথ দেখানোর জন্য ‘রূপকল্প ঘোষণা’ অনুমোদন করেছে। আমরা টেকসই ভবিষ্যতের জন্য ‘ডিজিটাল অংশীদারত্ব’ এবং ‘সবুজ অংশীদারত্ব’বিষয়ক দুটি সমন্বিত রূপকল্পকে সামনে রেখে কাজ করতে সম্মত হয়েছি।

ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী, বিশ্বস্ত বন্ধু এবং আঞ্চলিক অংশীদার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে সৃষ্ট সম্পর্ককে বাংলাদেশ সব সময়ই বিশেষ গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশভারত সম্পর্ক ক্রমাগত বিকশিত এবং দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। যেহেতু নতুন সরকার গঠনের মাধ্যমে ঢাকা ও দিল্লি নতুনভাবে পথচলা শুরু করেছে, সে প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সেই ধারাবাহিকতায় আমরা ‘রূপকল্প২০৪১’এর মাধ্যমে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা এবং ‘বিকশিত ভারত ২০৪৭’ অনুসরণ নিশ্চিত করার জন্য ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, তারা নতুন কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই প্রত্যক্ষ করেছেন। কিছু নবায়ন করেছেন এবং ভবিষ্যৎ কাজের ক্ষেত্র হিসাবে কিছু যৌথ কার্যক্রমের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, সামপ্রতিক বছরগুলোতে দুদেশই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়সহ উচ্চপর্যায়ের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।

বিশ্লেষকরা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত ব্যাপক, বিস্তৃত ও বহুমাত্রিক। অভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের ভাগাভাগি, গভীরতর বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের তিন ডোমেইনে দেশ দুটির সম্পর্ক সময় উত্তীর্ণ। তাঁরা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কে গভীরতা এসেছে, এসেছে নতুন নতুন মাত্রা। এ সময় চীন থেকে আমদানি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশের আমদানি বেড়েছে। ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি দ্বিগুণ বাড়লেও বাণিজ্য ব্যবধানও বেড়েছে দ্বিগুণ। বাংলাদেশে ভারতের কনজিউমার মার্কেট প্রসারের পাশাপাশি কাঁচামাল আমদানি, বাংলাদেশে ভারতীয়দের দক্ষ শ্রমবাজার তৈরি এবং ভারতে বাংলাদেশিদের চিকিৎসা ও মেডিক্যাল ট্যুরিজম ইত্যাদি খাত বিগত দশকে ব্যাপকভাবে সমপ্রসারিত হয়েছে। তাঁরা দুদেশের এ সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে