ছাত্র–জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে যাওয়ার আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি বলে দাবি করেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। বাংলাদেশ সময় গতকাল শনিবার প্রথম প্রহরে ওয়াশিংটন থেকে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, আমার মা কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেননি। সেই সময়ই তিনি পাননি।
সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলন আগস্টের শুরুতে সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়। জেলায় জেলায় সহিংসতায় মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রায় তিনশ মানুষের প্রাণ যায়। ৫ আগস্ট আন্দোলনারীদের ঢাকামুখী লংমার্চের মধ্যে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর আসে। সেদিন বিকালে সেনাপ্রধান ওয়াকার–উজ–জামান সাংবাদিকদের বলেন, পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খবর বিডিনিউজের।
প্রথমে হেলিকপ্টর ও পরে সামরিক বিমানে চড়ে আগরতলা হয়ে সেদিন রাতেই দিল্লি পৌঁছান বাংলাদেশের টানা ১৫ বছরের প্রধানমন্ত্রী। এখনও তিনি সেখানেই আছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স। তার দীর্ঘদিনের তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা জয় বলেন, মা চেয়েছিলেন যাওয়ার আগে একটি বার্তা দিয়ে যেতে, তারপর পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তাদের লংমার্চ নিয়ে গণভবনের দিকে রওনা হয়। হাতে একদম সময় ছিল না। এমনকি তার জিনিসপত্রও গোছানো যায়নি। সংবিধান যেহেতু আছে, তিনি এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
জয় বলছেন, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যদিও সেনাপ্রধান এবং বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ছাড়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়টি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা সম্ভব।
শেখ হাসিনার ছেলের আশা, তাদের দল আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে। আর সেই নির্বাচন হতে হবে তিন মাসের মধ্যে। আমি নিশ্চিত, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। যদি তা না হয়, আমরা বিরোধী দল হব।
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের দুদিনের মাথায় ঢাকায় বিএনপির প্রথম সমাবেশে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, প্রতিশোধ–প্রতিহিংসা নয়, দেশ হোক শান্তির। সেই প্রসঙ্গ ধরে জয় বলেন, খালেদা জিয়ার ওই কথায় আমি খুবই সন্তুষ্ট, তিনি ভুলে যাওয়ার কথা বলছেন, ক্ষমার কথা বলছেন। আসুন আমরা ওই অতীতটা ভুলে যাই। আমরা প্রতিশোধের রাজনীতি না করি। আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে, সেটা ঐক্য সরকার হোক বা যাই হোক।
জয় এখন বলছেন, বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজনের জন্য, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি বিএনপির সঙ্গে কাজ করতেও রাজি। আমি বিশ্বাস করি, রাজনীতি আর আলোচনাটা খুব জরুরি। আমরা যুক্তি পাল্টা যুক্তি দিতে পারি, ভিন্নমত পোষণ করতে পারি, আবার তর্ক করা থামাতে পারি। কারণ তাতে আমাদের মত বদলাবে না। আর একটা না একটা সমঝোতায় পৌঁছানো সব সময়ই সম্ভব।
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে গেলে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী হতে চান কিনা, সেই প্রশ্নে জয় বলেন, আমার মা এই মেয়াদের পর এমনিতেই অবসরে যেতেন। তখন যদি আমার দল চায়, রাজি হতেও পারি। আমি অবশ্যই সেটা বিবেচনা করব। গণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্ররা শেখ হাসিনার বিচার চাইছে। তিনি ‘দেশে ফিরে বিচারের মুখোমুখি হতেও প্রস্তুত’ বলে দাবি করছেন তার ছেলে জয়। গ্রেপ্তার করার হুমকিতে আমার মা কখনোই ভয় পাননি। কোনো অন্যায়ও তিনি করেননি। তার সরকারের লোকজন যদি অবৈধ কিছু করে থাকে, তার মানে এই না যে তিনিই সেসব করার নির্দেশ দিয়েছেন। তার মানে এই না যে আমার মা সেসব অপরাধের জন্য দায়ী।
আন্দোলন দমাতে মানুষের ওপর গুলি করার নির্দেশ সরকারের কে দিয়েছিল, সেই প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট জবাব জয় দেননি। তিনি বলেছেন, সরকার যন্ত্র বিরাট এক ব্যাপার। যারাই দায়ী হোক না কেন, তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত। আন্দোলনকারীদের ওপর সহিংস হওয়ার নির্দেশ আমার মা কখনোই কাউকে দেননি। পুলিশ সহিংসতা থামানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু কিছু পুলিশ কর্মকর্তা অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে। আমাদের সরকার তাৎক্ষণিকভাবে এটা বন্ধ করতে বলেছে। আমিও সেই আলোচনায় ছিলাম। আমি আমার মাকে বলেছি, তারা (ছাত্রলীগ) যেন কোনো হামলা না করে, কোনো সহিংসতা না করে, সেই নির্দেশ আমাদের এখনই দিতে হবে। যে পুলিশ কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়েছে, সরকার তাদের বরখাস্ত করেছে বলেও দাবি করেন জয়।
তিনি বলেন, সরকারের তরফ থেকে যা যা করার সুযোগ ছিল, আওয়ামী লীগ সরকার তা করেছে। আরেক প্রশ্নে জয় বলেছেন, যখন ইচ্ছা তিনি দেশে ফিরতে পারেন। কখনো কোনো অন্যায় তো আমি করিনি। তাহলে আমি দেশে ফিরতে চাইলে কেউ ঠেকাতে যাবে কেন?
জয় বলেন, একটা রাজনৈতিক দল তো উবে যায় না। আপনি তাদের মুছে ফেলতে পারেন না। আমাদের সহযোগিতা ছাড়া, আমাদের সমর্থকদের বাদ দিয়ে বাংলাদেশে আপনারা স্থিতিশীলতা আনতে পারবেন না।