গত এক দশক ধরে চট্টগ্রাম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার স্বর্ণলঙ্কারের দোকানে বোমা ফাটিয়ে ও গুলি চালিয়ে ডাকাতি করে আসা একটি চক্রের ‘হোতাসহ’ ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত বুধবার ঢাকার পশ্চিম রামপুরার হাজীপাড়া বৌ–বাজার এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তারের কথা জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. হাছান জমাদ্দার ওরফে ল্যাংড়া হাছান (৩৪), মো. আরিফ (২৬), মো. আইনুল হক ওরফে ভোলা (৪২), মো. সাইফুল ইসলাম মন্টু (৪৫), মো. আনসার আলী (৫০), মো. শাহীন (৩৫)। খবর বিডিনিউজের।
চক্রের ‘হোতা’ হাছান ২০০৮ সাল থেকে বোমা ফাটিয়ে ডাকাতি করে আসছেন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ডাকাতি করে পাওয়া মালামাল ভাগাভাগি শেষে আবারও ভারতে পালিয়ে যেতেন। ২০১২ সালে চট্টগ্রামে একটি দোকানে ডাকাতি করতে গিয়ে পায়ে গুলি লাগে হাছানের। তার বিরুদ্ধে ডিএমপিসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ১৭টি মামলা রয়েছে। ভারতে তার নাগরিক কার্ডও রয়েছে। তার পাসপোর্ট ইমিগ্রেশন থেকে ব্লক করে রাখা। ফলে কসবা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পালিয়ে যেতেন। একইভাবে ফিরেও আসতেন।
আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে হারুন অর রশীদ বলেন, খিলগাঁওয়ে এক স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির ঘটনায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই দলের নেতা হাছান জমাদ্দার। বোমা ফাটিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ১০ বছর ধরে তারা ডাকাতি করে আসছে। তিনি বলেন, ভারতে বসে সহযোগীদের সঙ্গে ডাকাতির পরিকল্পনা সারতেন হাছান। ডাকাতির সময়–তারিখ ঠিক হলে দেশে ফিরে দলে যোগ দিতেন। এরপর ডাকাতি শেষে ফের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কসবা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যেতেন। চক্রটি যে এলাকায় ডাকাতির করত, তার আশেপাশে বাসা ভাড়া নিত। দলের সদস্যরা স্বর্ণলঙ্কারের দোকান টার্গেট করে খোঁজখবর নিয়ে ঘুরে ফিরে দেখে প্রস্তুতি নিত। এরপর নির্দিষ্ট সময়ে সেখানে গিয়ে বোমা ফাটিয়ে এবং গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করত। ছয় থেকে সাত মিনিটের মধ্যে তারা স্বর্ণালঙ্কার লুট করে পালিয়ে যেত।
পুলিশ জানায়, চট্টগ্রাম ঢাকা, কেরানীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ফেনী, ময়মনসিংহের ভালুকা ও বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এভাবে ডাকাতি করে আসছিলো চক্রটি। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, পাঁচটি চাপাতি ও প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়। হাছানের নেতৃত্বে চক্রটি দেশে ২৫ থেকে ৩০টি ডাকাতির ঘটনায় হাজার হাজার ভরি স্বর্ণ লুট করেছে। সম্প্রতি কেরানীগঞ্জে ডাকাতি করার পরে ফেনীতে ডাকাতি করে। সেখানে ডাকাতির সময় একজনকে গুলি করলে পরে তিনি মারা যান।
ডাকাতির মালামাল পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারের কিছু দোকানে বিক্রি হয় জানিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, আমরা মালিক সমিতিকে অনুরোধ করব এই সকল অসাধু চক্রকে প্রশ্রয় দেবেন না। তারা এ সকল মালামাল কেনার কারণেই দুর্র্ধষ ডাকাতি হচ্ছে। লুট করা মালের অনেক ক্রেতার নাম আমরা পেয়েছি। আমরা তাদেরকেও আইনের আওতায় আনব।