ভারতে এক দিনে শনাক্ত প্রায় সাড়ে ৩ লাখ

হাসপাতালে খালি নেই শয্যা, অক্সিজেন সংকটে মারা যাচ্ছে রোগী, চলছে গণঅন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া

| রবিবার , ২৫ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:৫৩ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ভারতকে নিয়ে যাচ্ছে খাদের কিনারে; সংক্রমণ হু হু করে বাড়তে থাকায় প্রতিদিনই সেখানে শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় নতুন বিশ্ব রেকর্ড হচ্ছে। ভারত সরকার গতকাল শনিবার দেশটিতে রেকর্ড তিন লাখ ৪৬ হাজার ৭৮৬ জন নতুন রোগী শনাক্তের খবর দিয়েছে। এ নিয়ে টানা তৃতীয় দিন ভারতে তিন লাখের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হল। শনাক্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে রেকর্ড দুই হাজার ৬২৪ জন রোগীর মারা গেছেন বলে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ জনসংখ্যার এই দেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা এক লাখ ৮৯ হাজার ৫৪৪ জনে পৌঁছেছে। খবর বিডিনিউজের।
ভারতে হাসপাতালগুলোতে রোগী উপচে পড়ছে; খালি নেই কোনো শয্যা। অনেক হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন সরবরাহ শেষ হয়ে যাওয়ার খবর আসছে। মহারাষ্ট্রের নাসিকে কয়েকদিন আগে একটি হাসপাতালে আধাঘণ্টা অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ থাকায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত ২৫ রোগী অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছেন। মৃতের সংখ্যা এতই বেড়ে গেছে যে আলাদা করে নয় বরং গণ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হচ্ছে।
রাজধানী দিল্লির স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. অতুল যোগিয়া বিবিসিকে বলেন, রোগীর সংখ্যা এত বেড়ে গেছে যে জরুরি বিভাগে তিল ধারণের জায়গা নেই। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে যতগুলো অক্সিজেন পয়েন্ট আছে সবগুলো রোগীতে পূর্ণ। এখানে আর কোনো অক্সিজেন পয়েন্ট নেই। রোগীরা নিজেদের অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বা অক্সিজেন ছাড়াই হাসপাতালে আসছেন। আমরা তাদের সাহায্য করতে চাই। কিন্তু আমাদের কাছে যথেষ্ট শয্যা বা অক্সিজেন পয়েন্ট নেই। এমনকি পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহও নেই। রোগীর স্বজনদের ফোনের চাপে আমাদের টেলিফোন লাইনগুলো জ্যাম হয়ে গেছে। লোকজন ক্রামগত হেল্পলাইনে ফোন করে যাচ্ছেন। হাসপাতালের বাইরেও প্রচণ্ড ভিড়; অ্যাম্বুলেন্স পার্ক করা আছে, রোগীদের নিয়ে তাদের স্বজনরা হাসপাতালের ভেতরে ঢোকার সুযোগের অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমাদের এখানে আর কোনো জায়গা নেই।’
ভর্তি রোগীর অবস্থা একটু স্থিতিশীল হলেই তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে সেখানে গুরুতর রোগীদের ভর্তি করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও জানান এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘তারপরও বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। গত কয়েক দিনে ধরে প্রতিটি সকালে ফোনের শব্দে আমার ঘুম ভাঙছে। সব সময়ই কেউ না কেউ মরিয়া হয়ে সাহায্য কামনা করছেন।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এখন লোকজন আক্রান্ত বন্ধু ও স্বজনদের জন্য হাসপাতাল শয্যা, জীবনরক্ষাকারী ওষুধ, অঙিজেন এবং প্লাজমার জন্য আবেদন জানিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন। কয়েকদিন নিরবতার পর সেই ব্যক্তিই হয়তো তার বন্ধু বা স্বজনের মৃত্যুর খবর দিচ্ছেন।
ভারতের বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিকে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। বর্তমান পরিস্থিতিকে জাতীয় জরুরি অবস্থার চেয়েও ‘গুরুতর’ বলে মনে করেন দেশটির একজন শীর্ষ ভাইরোলোজিস্ট। তিনি বলেন, ‘এটা পুরো দেশের সব ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধসে পড়ার অবস্থা। দিল্লি ও মুম্বাইয়ের মত সংক্রমণের হটস্পটগুলোতে জীবন রক্ষা করতে পারা বা বেঁচে থাকতে পারাটাই এখন আশীর্বাদ।’
ভারতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত ধনী রাজ্য মহারাষ্ট্র। সেখানে বেশিরভাগ হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহে স্বল্পতা দেখা দিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউইকেট নিয়ে হতাশা তাসকিনের
পরবর্তী নিবন্ধরানা প্লাজা ট্র্যাজেডি স্মরণে শ্রমিক ফ্রন্টের সমাবেশ