২০১৩ সালে ডেনমার্ক প্রবাসী জামাল ভূঁইয়া যখন বাংলাদেশের জার্সি গায়ে তুলেছিলেন, তখনও তাকে নিয়ে গণমাধ্যমে উচ্ছ্বাস ছিল বেশ। তবে হামজা চৌধুরীকে নিয়ে যতটা, জামালকে নিয়ে ততটা ছিল না। হামজাকে পাশে নিয়ে গতকাল বুধবার সেই সময়ে ফিরে গেলেন জামাল। আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুললেন। ইংল্যান্ড প্রবাসী হামজাকে নিয়ে উচ্চাশার কথাও জানালেন। এতকিছুর ফাঁকে ভারত ম্যাচ নিয়ে লক্ষ্য জানাতেও ভোলেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। শিলংয়ে আগামী ২৫ মার্চ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। সব ঠিক থাকলে এ ম্যাচেই লাল–সবুজের জার্সিতে খেলতে নামবেন শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলা হামজা। ভারত ম্যাচ সামনে রেখে গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলনে নিজের শুরুর দিকে ফিরে গেলেন জামাল। ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ হলে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের প্রত্যাশার পারদ যে সপ্তম আকাশে ওঠে, সে অতীতও রোমন্থন করলেন।
অবশ্যই হামজার উপস্থিতিতে অনুপ্রাণিত দল। পরের ম্যাচ ভারতের সাথে। সবার মধ্যে প্রচুর উন্মাদনা থাকবে। হামজার অন্তর্ভুক্তিতে সে উন্মাদনা আরও বেশি। কেননা সবাই চায় বাংলাদেশ জিতুক। আমি মনে করি, ভারতের বিপক্ষে সব ম্যাচই এমন উন্মাদনার হয়। সবাই এই ম্যাচ নিয়ে আগ্রহী। এমনকি আমি মনে করি, যখন আমরা ভারতে যাব, ভারতের সাংবাদিকদের দ্বিগুণ উপস্থিতি থাকবে। আমি মনে করি, এটা স্বাভাবিক। এমনকি যদি পাকিস্তানের বিপক্ষেও ম্যাচ হয়, বিষয়গুলো এমনই হবে। কেননা, বাংলাদেশ–ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে সবসময় একটা লড়াই আছে। তাই এই ম্যাচটিও ‘হাই ভোল্টেজ’ ম্যাচ হতে যাচ্ছে। আমি মনে করি, ফুটবলের এটা দক্ষিণ এশিয়ায়, এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় লড়াই। এই সব বিষয় স্বাভাবিক। আজকে আপনারা সবাই একটু বেশি খুশি, কেননা, হামজা এসেছে, এজন্য আমারও ভালো লাগছে। কিন্তু আমাদের মনোযোগ দিতে হবে ম্যাচে। আপনারা যেটা করছেন বা মিডিয়ার প্রতি আমাদের মনোযোগ নেই, আমাদের মনোযোগ দিতে হবে ২৫ মার্চের ম্যাচটি জয়ের দিকে। এটাই আমাদের লক্ষ্য।
বাংলাদেশের হয়ে প্রবাসীদের খেলার শুরুর পথটা যারা দেখিয়ে দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে জামাল অন্যতম। তার দেখানো পথ ধরে এবার এসেছেন হামজা। ইতালির সেরি ডিতে খেলা ফরোয়ার্ড ফাহামিদুল ইসলামও থাকতে পারবেন দলে, কিন্তু এই তরুণকে আপাতত বিবেচনায় রাখেননি হাভিয়ের কাবরেরা। এ নিয়ে কদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে চলছে বিতর্ক। জামাল মনে করেন ফাহামিদুল ইস্যুতে প্রবাসী খেলোয়াড়দের বাংলাদেশের হয়ে খেলার ক্ষেত্রে আগামীতে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না। আমার দেখানো পথে প্রবাসীদের আসা দেখে অবশ্যই ভালো লাগে। যেভাবে হামজাকে স্বাগত জানানো হয়েছে, সেটা অসাধারণ। আমি আগে শুরু করেছি। আমি মনে করি, এটা বিশ্বের নানা প্রান্তের ফুটবলারদের বাংলাদেশের হয়ে খেলার জন্য অনুপ্রাণিত করেছে। একজন ফুটবলার হিসেবে সর্বোচ্চ প্রাপ্তি আপনি দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেই পেতে পারেন। আমি মনে করি, ২৫ মার্চে সে যখন জাতীয় সঙ্গীত শুনবে, তখন তার রোম কাঁটা দিয়ে উঠবে। এটা আমারও হয়েছিল, আমি মনে করি, হামজারও একই অনুভূতি হবে। প্রতিটি মানুষই ভিন্ন। প্রবাসী যারা আসবে, তাদের মধ্যে একজন খেলোয়াড় ভালো করতে পারে, একজন খারাপ করতে পারে। কোচ যেটা উল্লেখ করেছেন ফাহামিদুল আসলেই ভালো অনুশীলন করেছে। কিন্তু কোচ বলেছেন সে এ মুহূর্তে প্রস্তুত নয়। আমাদেরকে কোচের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করতে হবে। পরের খেলোয়াড় সে হয়তো আরও ভালো করবে। দলেও থাকবে, আমি এটা বলতে চাচ্ছি। প্রশ্ন উঠল অবসর ভেঙে ভারত দলে ফেরা সুনিল ছেত্রিকে নিয়েও। বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচ সামনে রেখে আন্তর্জাতিক ফুটবলের চতুর্থ সর্বোচ্চ গোলদাতা সুনিল ফিরেছেন ভারতের আক্রমণভাগে। ভারত–বাংলাদেশ ম্যাচে সুনিল বনাম হামজা দ্বৈরথ কিনা, এমন প্রশ্নে কোনো তুলনায় যেতে রাজি নন জামাল। আমি মনে করি না, সুনিল ও হামজার তুলনা করা ঠিক। সুনিল খুবই ভালো খেলোয়াড় এবং তার দেশের জন্য সে অসাধারণ কিছু করেছে। কিন্তু লেটস বি অনেস্ট, হামজাও প্রিমিয়ার লিগের খেলোয়াড়।