বঙ্গোসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টির নাম রাখা হয়েছে ‘জাওয়াদ’। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপের তালিকা অনুযায়ী এ ঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে জাওয়াদ। সৌদি আরব এসকাপে এ নাম প্রস্তাব করেছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ ও উড়িষ্যার দিকে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে এ ধরনের ঘূর্ণিঝড়গুলো যেকোনো মুহূর্তে বাঁক নিতে পারে বলেও জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা। ঘূর্ণিঝরের কারণে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ২নং দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টার স্থানীয় পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের আকাশ সাময়িকভাবে আংশিক মেঘলাসহ প্রধানত শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে। সেই সাথে ভোরের দিকে নদী অববাহিকায় হালকা থেকে মাঝারী ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। উত্তর উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০-১২ কি.মি. বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫.২ ডিগ্রি বেশি। অন্যদিকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৮.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সন্ধ্যা ৬টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আরও ঘণীভূত ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে প্রথমে নিম্নচাপ এবং পরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। পরবর্তীতে এটি আরও ঘণীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ এ পরিণত হয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
এর প্রভাবে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হওয়াসহ বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং দেশের অন্যত্র আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। শনিবার সকালের দিকে সারাদেশের কোথাও কোথাও হালকা কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ৩২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন ছিল তেঁতুলিয়ায় ১২.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের শুক্রবারের ৫ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ আরও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৮৫ কি.মি. দক্ষিণ পশ্চিমে, কঙবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৪০ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কি.মিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৬২ কি.মি. যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কঙবাজার, মংলা এবং পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারী সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং গভীর সাগরে অবস্থারনত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
এদিকে সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’। একইভাবে মে মাসেও ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ আঘাত হানে উড়িষ্যা উপকূলে। এরআগে করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর পর গত বছর মে মাসে বাংলাদেশে আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’।