উপহার হিসেবে পাঠানো করোনাভাইরাসের ২০ লাখ ডোজ কোভিশিল্ড টিকা আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের হাতে তুলে দিয়েছে ভারত। এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইটে টিকার এই চালান নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের হাতে টিকার দুটি বক্স তুলে দিয়ে হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা সারেন ভারতের হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী। বাংলাদেশ সরকারিভাবেও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ টিকা কিনছে, যার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ টিকা ২৫ জানুয়ারির মধ্যে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। শুরুতে ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগে টিকাদান শুরুর পরিকল্পনা হলেও উপহারের টিকা আগে আগে পাওয়ায় প্রয়োগের সময়ও এগিয়ে আনা হয়েছে। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. রওশন জাহান আক্তার আলো জানান, এগুলো অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার আবিষ্কৃত কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন, যা তৈরি করেছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। মোট ১৬৭টি কার্টনে ২০ লাখ চার হাজার ডোজ টিকা এসেছে ভারত থেকে।
টিকা হস্তান্তর অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুসম্পর্কের কারণেই ২০ লাখ টিকা এসেছে। তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে যেভাবে সহায়তা করেছিল, করোনা মহামারির এই বিপদেও তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এই টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হলো। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, ভারত প্রতিবেশী দেশের পাশে দাঁড়াতে চায়। ভারতে টিকা বিতরণের মাত্র চার দিনের মধ্যেই বাংলাদেশ টিকা পেয়েছে। দুই দেশ একযোগে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করবে।
এদিকে গতকাল তেজগাঁওয়ে ভ্যাকসিন সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ভ্যাকসিন নিলেই যে করোনা সঙ্গে সঙ্গে দূর হয়ে যাবে, বিষয়টি এমনটা নয়। ভ্যাকসিন দিতেও বছরখানেক লেগে যাবে। এরমধ্যে আমাদের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। ভ্যাকসিন আমরা যেভাবে পাবো, সেভাবে মানুষদের দিতে থাকবো। তিনি বলেন, একটি ট্রায়াল রানের (পরীক্ষামূলক) ব্যবস্থা করছি, তবে সেটির তারিখ এখনও নির্ধারণ হয়নি। খুব শিগগিরই একটি তারিখ আমরা পেয়ে যাবো। সে অনুযায়ী ট্রায়াল রানে যাবো। এরপর সারাদেশে ভ্যাকসিন বিতরণ করা হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ট্রায়াল রানে আমরা সব ক্যাটগরির ব্যক্তি রাখবো। সেখানে চিকিৎসক, নার্স, অন্য স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, আর্মি, সাংবাদিক ও শিক্ষকরা থাকবেন। সেখাসে বয়স্ক লোকরাও থাকবেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশে আরও ৫০ লাখ ডোজ করোনা ভ্যাকসিন আসার কথা রয়েছে। আশাকরি আগামী সপ্তাহে সেটি দেশে চলে আসবে। সেগুলো এলে মোট ৭০ লাখ ডোজ আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেবো। এগুলো সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন গোডাউন তৈরি করা হয়েছে। আমাদের লোকজনও ইতোমধ্যে বিদেশে চলে গেছে। তাদের প্রশিক্ষণও প্রায় শেষের পথে। আমরা এখন মোটামুটি প্রস্তুত।
ঢাকা জেলার ইপিআই স্টোরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মাওলা বঙ চৌধুরী বলেছেন, করোনার ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য আমাদের কোল্ড বঙ আছে, সেখানে ২৪টি আইস প্যাক দিয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সেই কোল্ড বঙে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত ভ্যাকসিন রাখা যায়। দেশের যেকোনো জায়গায় যদি এই ভ্যাকসিনটি পরিবহন করি, তবে ১২-১৮ ঘণ্টার মধ্যে সবচেয়ে দূরে যে জেলাটি আছে পঞ্চগড় অথবা কঙবাজারে যাওয়া যাবে। যদিও আমাদের হাতে আছে ৭২ ঘণ্টা। তিনি বলেন, এই ভ্যাকসিন পরিবহনের ক্ষেত্রে সড়কের সব স্থানে ইনফরমেশন দেওয়া থাকে। যদি ফেরি পারাপারের বিষয় থাকে তবে সেখানেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের (পুলিশ, জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন) ইনফরমেশন দেওয়া থাকবে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর এক টুইটে বলেন, ভারতের ভ্যাকসিন ঢাকায় পৌঁছেছে। ভ্যাকসিন মৈত্রীর মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সর্বাধিক অগ্রাধিকার পুনর্ব্যক্ত করেছে ভারত। বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ উপহার হিসেবে পাচ্ছে ভারতের ভ্যাকসিন।