ভারতের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ স্থানীয় কমান্ডারদের বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। ‘ভারত একটি শান্তিপ্রিয় দেশ’ দাবি করে একই সঙ্গে ‘অপ্রত্যাশিত’ ঘটনার মুখোমুখি হলে শান্তি রক্ষার স্বার্থে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, গত বৃহস্পতিবার ভারতের উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌয়ে তিন বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডারদের যৌথ সম্মেলনে রাজনাথ সিং এই নির্দেশ দেন। এই নির্দেশের বিষয়ে গতকাল শুক্রবার ভারতের সংবাদমাধ্যম জানতে চাইলে রাজনাথ তার বক্তব্যের পক্ষে অনঢ় থেকেই বলেছেন, ভারতীয় সামরিক বাহিনীর যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকা দরকার। খবর বিডিনিউজের।
এমন সময় রাজনাথ তার দেশের যুদ্ধের প্রস্তুতির কথা বলছেন, যখন বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে। অবশ্য প্রতিবেশী সব দেশ ও বৈশ্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতির দিকেও ইঙ্গিত করেছেন তিনি। প্রবল গণআন্দোলনের হাত ধরে ৫ অগাস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী ভারতের আশ্রয়ে রয়েছেন।
টাইমস ইন্ডিয়া বলছে, জাতীয় স্বার্থ রক্ষা ও ‘আত্মনির্ভর ভারত’ ভিশন এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখায় তিন বাহিনীর কমান্ডারদের সাধুবাদ জানিয়ে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ হিসেবে যুদ্ধের দরকার পড়লে, সে জন্য তড়িত ও আনুপাতিক জবাব দিতে প্রস্তুত থাকতে তাদের প্রতি আহ্বান রেখেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ।
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ, হামাস–ইসরায়েল যুদ্ধ এবং বাংলাদেশে বর্তমান অস্থির অবস্থার প্রসঙ্গ টেনে এসব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ বা পর্যালোচনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন লিখেছে, চীন সীমান্ত ও অন্যান্য প্রতিবেশীদের পরিস্থিতির ওপর ‘বিস্তৃত ও গভীর পর্যালোচনা’ করতে কমান্ডারদের প্রতি আহ্বান রেখেছেন রাজনাথ। বাংলাদেশের তিন দিকের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত। ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের সীমান্তে মিয়ানমার। কাশ্মীর সীমান্তে চিরবৈরী পাকিস্তান, লাদাখে চীন সীমান্ত। এসব সীমান্তে প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভারতের প্রায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।
রাজনাথ বলেন, বৈশ্বিক অস্থির পরিস্থিতিতেও নজিরবিহীনভাবে শান্তি বজায় রেখে এগিয়ে চলছে ভারত। তারপরও কিছু চ্যালেঞ্জ বাড়ছে, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ভারতের চারপাশে বর্তমানে কী ঘটছে, তার ওপর নজর রাখতে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন রাজনাথ। তিনি বলেছেন, আমাদের বর্তমান অবস্থার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে; আমাদের চারপাশে কী ঘটছে, তার ওপর নজর দিতে হবে এবং ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই তা করতে হবে। এর জন্য আমাদের শক্তিশালী ও সুদৃঢ় নিরাপত্তা ঐক্য থাকতে হবে। আমাদের একটি অব্যর্থ প্রতিরোধ শক্তি থাকতে হবে। প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশাপাশি উত্তর–পূর্ব সীমান্ত পরিস্থিতির ওপরও নজর রাখতে বলেছেন রাজনাথ। আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য এসব দেশ হুমকি হয়ে উঠছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সামরিক বাহিনীর অস্ত্র ভাণ্ডারে প্রচলতি ও প্রযুক্তিনির্ভর অস্ত্রের মিশেল ঘটাতে শীর্ষ কমান্ডারদের প্রতি তাগিদ দিয়েছেন রাজনাথ। আধুনিক সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মহাকাশ ও ইলেক্ট্রনিক যুদ্ধ কৌশল উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেছেন, সামরিক বাহিনীতে ডেটা ব্যবস্থাপনা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটাতে হবে। ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের এই যৌথ সামরিক সম্মেলনে তিন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। সেখানে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হয় এবং সেগুলো মোকাবেলার কৌশল নিয়ে কথা হয়।
ওই সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে গতকাল শুক্রবার রাজনাথের কাছে জানতে চান ভারতের সাংবাদিকরা। এ ব্যাপারে টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, রাজনাথ বলেছেন, তার ওই বক্তব্য দেওয়ার কারণ হল যাতে কোনো অবস্থাতেই ভারতের শান্তি নষ্ট না হয়। ভারতের ‘পুরো বিশ্ব এক পরিবার’ নীতি মেনে চলার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ভারতের প্রতিরক্ষা বলেছেন, ভারত সবসময় শান্তির পক্ষে কাজ করে। তবে বর্তমান ভূরাজনৈতিক অবস্থা মনে রাখতে হবে। ভারত ও বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতকে সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে।