মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেছেন মানুষকে হেদায়েতের জন্য। তিনি প্রথম ইসলাম প্রচার করেন আরবভূমি থেকে। সেসময় অনেকেই প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা শুনে ইসলাম গ্রহণ করেন আবার অনেকেই প্রিয় নবীজিকে কাছে পাওয়ার পরও ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আসেন নি। আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারায় সাত নম্বর আয়াতে বলেন, ‘আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন, কানকে করেছেন বধির আর চোখ ঢেকে দিয়েছেন পর্দায়। ওদের জন্য অপেক্ষা করছে কঠিন শাস্তি’। স্রষ্টার আলোয় আলোকিত হয়েছেন ভারতের কেরালা রাজ্যের (তৎকালীন মালাবার) অন্তর্ভুক্ত কোনডাংগালুর এর রাজা চেরামান পেরুমল। হিজরতের পূর্বে সম্ভবত ৬১৯–৬২০ খৃষ্টাব্দে, প্রিয়নবী রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। সেখানেই তিনি স্বয়ং রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। এবং তিনিই হলেন ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়া প্রথম ভারতীয় মুসলমান ব্যক্তি। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি তাজউদ্দীন নামে পরিচিত হয়ে উঠেন। সে সময় একদল আরব বণিক বাণিজ্য সফরে চীনে যাওয়ার পথে কেরালায় বিরতি নেন। এই আরব বণিকদের সম্পর্কে জানতে রাজা পেরুমল তাঁর লোকজনদের পাঠান। বণিকরা নিজেদেরকে আরব মুসলিম বলে পরিচয় দেন এবং বলেন, ‘আমরা শ্রীলঙ্কার যাওয়ার পথে এখানে যাত্রা বিরতি করছি। রাজা চেরামান পেরুমল এ খবর শুনে ইসলাম এবং মুসলমানদের সম্পর্কে জানার কৌতুহল প্রকাশ করেন। এবং বণিকদের সাথে সরাসরি কথা বলে ইসলাম সম্পর্কে অভিহিত হন। তিনি তাদের মাধ্যমে আরো জানতে পারেন তাদের নবী চাঁদ দু ভাগে বিভক্ত করার মত অলৌকিক ক্ষমতা প্রদর্শনকারী ব্যক্তি এবং আল্লাহর রাসূল।
এসব শোনার পর রাজা বলেন এক পূর্ণিমার রাতে প্রাসাদের ছাদে বিচরণকালে চাঁদ দু’ খণ্ড হবার ঘটনা তিনি নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করেছেন। তার পরপরই তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ ও মহানবী (সা🙂 এর সাথে দেখা করতে আরবের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান। তিনি মহানবী(সা🙂 হাতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় তাজউদ্দীন যার অর্থ হলো ‘বিশ্বাসের মুকুট’ ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর হজরত তাজউদ্দীন জেদ্দায় বাদশার ভগ্নিকে বিবাহ করে সেখানেই বসবাস শুরু করেন। কিছুকাল পরে মহানবী (সা🙂 এর নির্দেশে কেরালায় ফেরার পথে ইয়েমেনের জাফর (সালালাহ, ওমান) বন্দরে ইন্তেকাল করেন।
সেখানে এখনো তাঁর রওজা শরীফ বিদ্যমান। তিনি মৃত্যুর পূর্বে তৎকালীন কোনাডাংগালুর রাজাকে একটি চিঠি দিয়ে যান। এই রাজাই তাঁর কথামতো অরাথলি মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তরিত করেন। যা ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে তৈরি এ মসজিদ ভারতের প্রথম এবং সমগ্র উপমহাদেশের প্রাচীনতম। নবীজির সাহাবী হজরত মালিক ইবনে দিনার (রা🙂 ছিলেন এই মসজিদের প্রথম ইমাম। তাঁর মাযার শরীফ কেরালায় অবস্থিত।