ভারতকে উড়িয়ে সেমিতে বাংলার মেয়েরা

সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ২৪ অক্টোবর, ২০২৪ at ৭:৪১ পূর্বাহ্ণ

দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। তবে এই চ্যাম্পিয়নশিপের সবসময়ের সেরা দল কিন্তু ভারত। সাত আসরের পাঁচবারই শিরোপা জিতেছে তারা। কিন্তু এবারের আসরে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ নারী দল শুরুটা করেছিল কেমন যেন বিবর্ণভাবে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে দুর্বল পাকিস্তানের কাছে হারতে হারতে কোনোমতে এক পয়েন্ট আদায় করতে পেরেছিল। তাই শঙ্কা ছিল সেমিফাইনালে যেতে পারবে কিনা। কারণ গ্রুপ পর্বে পরের প্রতিপক্ষ যে প্রতাপশালী ভারত। তবে আগের আসরে ভারতকে হারানোর সুখ স্মৃতিকে সঙ্গী করে বাংলাদেশের নারীরা যেন প্রতিজ্ঞা করেই নেমেছিলেন মাঠে। ভারতের বিপক্ষে জয় ছাড়া তারা মাঠ ছাড়বে না। পাকিস্তান ম্যাচের ভুল শুধরে নতুন করেই যেন শুরু করতে চায় ভারতের বিপক্ষে। সে সংকল্প আর প্রতিজ্ঞার বাস্তবায়ন করলেন আফিদা, তহুরা, সাবিনারা। নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার পাশাপাশি প্রাপ্ত সুযোগকে দুর্দান্তভাবে কাজে লাগিয়ে দারুন এক জয় তুলে নিয়েছে বাংলার নারীরা। নেপালের রাজধানী কাঠমণ্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে গতকাল গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে ভারতকে ৩১ গোলে পরাজিত করে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। অথচ এই ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশ দলের জন্য একেবারে বাঁচামরার। দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েদের ফুটবলের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয়বার ভারতের বিপক্ষে জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। গত আসরে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে ভারতকে গ্রুপ পর্বে ৩০ ব্যবধানে হারিয়েছিল সাবিনারা। সাফে বাংলাদেশের মেয়েরা অজেয় রইল ৭ ম্যাচে। দুই ম্যাচে অপরাজিত থেকে ৪ পয়েন্ট নিয়ে হলো গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। অপরদিকে পাকিস্তানকে ৫২ গোলে হারিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করা ভারত দুই ম্যাচে একটি করে জয় ও হারে ৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হলো।

আগের ম্যাচের একাদশ থেকে দুই পরিবর্তন এনে ভারত ম্যাচের একাদশ সাজান কোচ বাটলার। রক্ষণে কোহাতির কিসকুর জায়গায় মাসুরা পারভীন ও মাঝমাঠে স্বপ্না রানীর জায়গায় মনিকা চাকমার সাথে ‘জুটি’ বাঁধেন মারিয়া মান্দা। আগের দিন সেরা একাদশে সব সিনিয়রকে খেলানোর কথা বললেও পরে মন বদলান কোচ বাটলার। গতবারের সাফ জয়ী নিলুফা আক্তার নীলাকে না নামিয়ে আফিদা খন্দকারকে রাখেন শুরু থেকে। আর সেই আফিদা খন্দকার চোখ জুড়ানো গোলে বেঁধে দিলেন সুর। তহুরা খাতুনের শুরু থেকে খেলা নিয়েও ছিল ঘোর অনিশ্চয়তা। সেই তিনিই কিনা উপহার দিলেন জোড়া গোল। তাতে উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত ও শিরোপাধারী বাংলাদেশের লড়াই প্রথমার্ধেই হয়ে গেল একপেশে। দ্বিতীয়ার্ধেও ছড়ি ঘুরিয়ে গ্রুপ সেরা হয়ে সেমিফাইনালে উঠল বাংলাদেশ। খেলার পঞ্চম মিনিটেই দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। বাম দিক থেকে ঋতুপর্না চাকমার বাড়ানো অসাধারণ ক্রসের নাগাল যদিও পাননি এই ফরোয়ার্ড। শুরু থেকে বেশিরভাগ সময় পজেশন ধরে রাখা বাংলাদেশ দশম মিনিটে হঠাৎ বিপদে পড়তে বসেছিল। আফিদার ব্যাকপাস ক্লিয়ার করতে বিলম্ব করেন গোলরক্ষক রূপনা চাকমা। সেই সুযোগে ছুটে যান ভারতের ফরোয়ার্ড মনিষা। বিপদ বুঝে রূপনা ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বল মনিষার বাড়ানো পায়ে লেগে পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। ১৮ মিনিটে আফিদার দৃষ্টিনন্দন গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। সাবিনার কর্নার প্রতিহত হওয়ার পর বল পেয়ে যান প্রথমবারের মতো সাফে খেলতে আসা আফিদা। নিখুঁত শটে লাফিয়ে ওঠা গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে জাল খুঁজে নেন এই ডিফেন্ডার। জাতীয় দলের জার্সিতে আফিদার প্রথম গোল। ব্যবধান দ্বিগুণ হতে পারত ২৬ মিনিটে। বাঁ দিক দিয়ে দ্রুত বঙে ঢুকে শট নেন ঋতুপর্না। বল পোস্টে লেগে চলে যায় মনিকা চাকমার দিকে। প্রাণপণ চেষ্টা করেও পাল্টা শট নিতে পারেননি এই মিডফিল্ডার। তিন মিনিট পর আবারও গোলের উচ্ছ্বাসে ভাসে বাংলাদেশ। সাবিনা ও শামসুন্নাহার দারুণ আক্রমণ শাণালেও ফিনিশিং দিতে পারেননি। সেই আক্রমণ থেকেই ঋতুপর্ণা ক্রস বাড়ান। দূরের পোস্টে তহুরা বুক দিয়ে বল ঠেলে দেন জালে। শঙ্কার মেঘ সরে যেতে থাকে বাংলাদেশের আকাশ থেকে।

৩৫ মিনিটে রূপনার দুর্দান্ত সেভে ব্যবধান কমাতে পারেনি ভারত। বাম প্রান্ত থেকে চানু সরোকাইবামের ক্রস গোলমুখে ফাঁকায় পেয়ে যান বালা দেবি। কিন্তু তার শট আটকে দেন রূপনা। একটু পর ভাগ্যের ছোঁয়া পায় বাংলাদেশ। এবার মনিষার ফ্রি কিক পোস্টে লেগে প্রতিহত হয়। ৪২ মিনিটে আবার গোল বাংলাদেশের। বল পেলেও শট নেওয়ার সুযোগ ছিল না শামসুন্নাহার জুনিয়রের সামনে। কিন্তু তিনি বল বাড়ান বঙের বাইরে তহুরাকে। দৃষ্টিনন্দন কোনাকুনি শটে স্কোরলাইন ৩০ করেন এই ফরোয়ার্ড। ম্যাচের ভাগ্য তখনই নির্ধারিত হয়ে যায় একরকম। পরের মিনিটেই ব্যবধান কমিয়ে আশা বাঁচিয়ে রাখে ভারত। রূপনা লাফিয়ে বলের নাগাল পেলেও গ্লাভসে জমাতে পারেননি। আলগা বল হেডে জালে পাঠান বালা দেবি। দ্বিতীয়ার্ধে ভারত ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠলেও শান্ত থেকে খেলতে থাকে বাংলাদেশ। পোস্টের নিচে পাহাড়সম দৃঢ়তা নিয়ে ছিলেন গোলরক্ষক রুপনা চাকমা। ৫৫ মিনিটে রিমপা হালদারের শট ঝাঁপিয়ে আটকান গত আসরের সেরা গোলরক্ষক রূপনা। তিন মিনিট পর মারিয়াকে তুলে স্বপ্না রানীকে নামান বাটলার। পোস্টে রূপনার দাপট দেখা যায় খেলার ৬২ মিনিটে। এবার জয়তি চৌহানের জোরাল শট ফিস্ট করে ফেরান রুপনা। ৮০ মিনিটে ব্যবধান বাড়াতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু স্বপ্না রানীর শট কোনোমতে আঙুলের টোকায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে বের করে দেন ভারত গোলরক্ষক। তখনো ম্যাচের লাগাম মুঠোয় রেখে শেষের বাঁশির অপেক্ষায় বাংলাদেশের মেয়েরা। আর তা বাজতেই সব শঙ্কা, সমালোচনা পেছনে ফেলে বাঁধনহারা উল্লাসে মেতে ওঠেন সাবিনাকৃষ্ণাআফিদারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় সন্ত্রাসীর গুলিতে কলেজ ছাত্র আহত