ভাঙন প্রতিরোধে ব্লক বসছে কর্ণফুলী জুটমিলসহ ২১ স্পটে

কর্ণফুলী নদীর রাঙ্গুনিয়া অংশ

জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া | শনিবার , ২৭ জুলাই, ২০২৪ at ১০:২২ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়ায় অবস্থিত দেশের প্রাচীনতম ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী জুটমিল এলাকায় কর্ণফুলীর তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছিলো। এছাড়া রাঙ্গুনিয়ার আরও বিভিন্ন স্পটে ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমিসহ কর্ণফুলী পাড়ের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা। এই নিয়ে দৈনিক আজাদীতে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে ভাঙন প্রতিরোধে ব্লক স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, ভাঙন প্রতিরোধে কর্ণফুলী জুটমিল এলাকাসহ উপজেলার ২১টি স্পটে ১৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় সোয়া দুই কিলোমিটার এলাকায় ব্লক স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। ইতিপূর্বে কর্ণফুলী নদীর বোয়ালখালী থেকে রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা এলাকা পর্যন্ত প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী ড্রেজিংসহ ভাঙন প্রতিরোধে প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশে ব্লক বসানো হয়েছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের বিশেষ উদ্যোগে এই কাজের বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। কর্ণফুলী জুটমিল এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর ভাঙন প্রতিরোধে মিল মাঠে ব্লক বানানোর কাজ চলছে। পাড়ে জিও ব্যাগ ভরে নদীর তীর ঘেঁষে ফেলা হচ্ছে। মিলের পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে ২১০ মিটার অংশে ভাঙন প্রতিরোধে ব্লকগুলো বসানো হবে। এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন মিল সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে ইউনিটেঙের সহকারী পরিচালক রায়হান আহমেদ জানান, ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কর্ণফুলী জুট মিলস লিমিটেড বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের অধীন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল ছিল। ২০২২ সালে ৩০ বছরের জন্য বেসরকারি খাতে এর বরাদ্দ পায় ইউনিটেক্স জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। বরাদ্দের পর থেকে মিল থেকে প্রতিদিন ১৭ টন উৎপাদিত সুতা বিশ্বের ১২টি দেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, মিলটি লিজ নেয়ার পর নদী ভাঙনের কারণে ঝুঁকির মুখে পড়ে ৪৭ একর আয়তনের কর্ণফুলী পাটকলটি। পরে বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তা সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টিগোচর হয়। অবশেষে ভাঙন প্রতিরোধে ব্লক স্থাপিত হতে যাচ্ছে। এতে মিলের কোটি কোটি টাকার জমি রক্ষা পাবে বলে তিনি জানান।

ইউনিটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপক (লিগ্যাল অ্যান্ড এস্টেট) গোলাম মওলা বলেন, ভাঙন ঠেকাতে ব্লক স্থাপন হতে যাওয়ায় আমরা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ব্লক স্থাপনের মধ্যে দিয়ে পাটকলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বৃক্ষ সম্পদ রক্ষা পাবে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাঙামাটি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, ভাঙনের কবলে পড়া এলাকায় ইতোমধ্যে সিসি ব্লক স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। চারশো কোটি টাকার বৃহৎ প্রকল্প থেকে বেঁচে যাওয়া টাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ১৩৪ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে বর্তমানে কর্ণফুলী নদীর রাঙ্গুনিয়ার মরিয়মনগর, কোদালা ধোপাঘাট, শিলক ঢংখাল, সরফভাটা ভূমিরখীল, কর্ণফুলী জুটমিল, গুণগুনিয়া বেতাগী, বেতাগী বসর মাস্টার ঘাটা, কাউখালী, মিরাজপাড়া, পৌরসভার সৈয়দবাড়ি এলাকার ইছামতী নদীসহ সব মিলিয়ে ২১টি পয়েন্টে ব্লক বসানো হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, চলমান এই প্রকল্প থেকেও কিছু টাকা বেচে যাচ্ছে। এখন আবার এই টাকাও ফেরত যেতে না দিয়ে ড. হাছান মাহমুদ মহোদয়ের পরামর্শ অনুযায়ী পশ্চিম সরফভাটা এলাকায় ১৯০ মিটার এবং শিলক বুচক্র হাট এলাকায় ৬০ মিটার অংশে ব্লক স্থাপনের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।

উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম চিশতি জানান, রাঙ্গুনিয়ার সন্তান ড. হাছান মাহমুদের হাত ধরে উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে এক সময়ের অবহেলিত এই জনপদ। বর্ষার তীব্র ভাঙনে আগে যেখানে নদী পাড়জুড়ে হাহাকার ছিলো, এখন সেসব স্পটে ব্লক স্থাপনের পর সময় কাটাতে মানুষ বেড়াতে যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখাগড়াছড়িতে লোকসানের মুখে ফল ব্যবসায়ীরা
পরবর্তী নিবন্ধপুলিশকে দুর্বল করতে হত্যাকাণ্ড-ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয় : ডিবি