ভাঙন প্রতিরোধে দেয়া নদীপাড়ের বালি নিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্ত

জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া | মঙ্গলবার , ২৩ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়ায় নদী ভাঙন প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে ভাঙন কবলিত এলাকায় ড্রেজিংয়ের বালি ফেলা হয়েছে। রাঙ্গুনিয়ার সাংসদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপির বিশেষ উদ্যোগে ব্যতিক্রমী এই কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে। এতে নদী পাড়ের সৌন্দর্য অনেকগুণ বেড়ে গেছে, পাড়ের বাসিন্দাদের মাঝে ফিরেছে স্বস্তি। কিন্তু নদীপাড়ে ড্রেজিং করে ফেলা বালিগুলো নৌকাযোগে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। গতকাল সোমবার ভোরে বেতাগী ইউনিয়নের গোলাম বেপারী হাট দিয়ে এভাবে বালি উত্তোলনের সময় স্থানীয়রা বেশ কয়েকটি বালির নৌকা জব্দ করে ফেলে। কয়েকঘণ্টা জব্দ করে রাখার পর আর আসবে না মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছাড়া পায় নৌকাগুলো। স্থানীয়দের দাবি, তীর রক্ষায় দেয়া বালিগুলো যেনো চুরি না হয় এবং ভাঙন প্রতিরোধে যেনো স্থায়ী ব্লক স্থাপন করা হয়।

সরেজমিনে বেতাগী ইউনিয়নের গোলাম বেপারী হাটে গিয়ে দেখা যায়, নদীপাড়ে বালি ফেলার পর বিস্তৃর্ণ এলাকায় দৃষ্টিনন্দন চর সৃষ্টি হয়েছে। এসময় নদীর মাঝখানে বেশ কয়েকটি নৌকা বালি উত্তোলনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। এগুলো পার্শ্ববর্তী বোয়ালখালী উপজেলার বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের মালিকানাধীন বলে জানান স্থানীয়রা। এগুলো মাঝ নদী থেকে বেপরোয়া বালি উত্তোলনের ফলে তীরে নদী ভাঙন দেখা দেয় বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। রাতের আঁধারে নৌকাগুলো নদী ভাঙন প্রতিরোধে তীরঘেঁষে ফেলা বালিগুলো তুলে নিয়ে যায় বলেও অভিযোগ করেন তারা। দীর্ঘদিন ধরে একাধিক নৌকাযোগে বেপরোয়াভাবে বালি তুলে নিয়ে যাচ্ছে এই দুর্বৃত্ত সিন্ডিকেট। তাদের বাধা দিয়েও থামানো যাচ্ছে না বলে জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাসিন্দা মাওলানা গোলামুর রহমান আশরাফ শাহ বলেন, বেপরোয়া বালি উত্তোলন সিন্ডিকেট রাতের আঁধারে বালিগুলো তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এতে তীরজুড়ে আবারও ভাঙন দেখা দিতে পারে। আমরা কয়েকটি নৌকা বালি উত্তোলনকালে জব্দ করে রাখি। পরে তারা আমাদের কাছে আর আসবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিলে ছেড়ে দেয়। এই বিষয়ে স্থায়ী পদক্ষেপের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

জানা যায়, এক সময় বর্ষা এলেই রাঙ্গুনিয়া জুড়ে ছিল ভাঙনের তীব্রতা। মানুষের মাঝে হাহাকার লেগে যেতো। তবে রাঙ্গুনিয়ার সাংসদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপির হাত ধরে প্রায় চারশত কোটি টাকার বৃহৎ প্রকল্পের মাধ্যমে কর্ণফুলীর বোয়ালখালী অংশ থেকে চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান পর্যন্ত দুই পাড়ে ব্লক স্থাপন করা হয়েছে। এতে পাল্টেছে নদীপাড়ের চিত্রপট, বদলেছে এসব এলাকার বাসিন্দাদের জীবনমান। এই ব্লক স্থাপনের পর প্রায় ১০০ কোটি টাকা বেঁচে গেলে তা ফেরত যাচ্ছিল। তবে হাছান মাহমুদ সেই টাকা ফেরত যেতে না দিয়ে তা দিয়ে রাঙ্গুনিয়ার অবশিষ্ট অংশে ভাঙন প্রতিরোধে প্রকল্প গ্রহণের ব্যবস্থা করেছেন। উক্ত প্রকল্পের ১১ ভাগের ৫ ভাগই বেতাগীর ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবহৃত হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি।

এই ব্যাপারে বেতাগী ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল আলম জানান, কর্ণফুলী নদী থেকে ড্রেজিং করা বালি ফেলে গুণগুনিয়া বেতাগী, কাউখালী আবুল বশর মাস্টার বাড়ি, গোলাম বেপারী হাট, বড়ুয়াপাড়ায় তাৎক্ষণিক ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা করেন হাছান মাহমুদ এমপি। এছাড়া ভাঙন প্রতিরোধে ব্লক স্থাপনের জন্য গুণগুনিয়া বেতাগীতে ৩৩০ মিটার, আবুল বশর মাস্টার বাড়িঘাটায় ৩২০ মিটার, কাউখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় ১০০ মিটার, হিরমাই আউলিয়া মাজার সংলগ্ন স্থানে ৫০ মিটার এবং গোলাম বেপারীহাট দিয়ে ৩৫০ মিটার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মোট ৫টি স্পটে ১১৫০ মিটার ব্লক স্থাপনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ইতিমধ্যেই টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যেই কাজ শুরু হবে। আরও অন্তত ২০০০ মিটার ব্লক স্থাপনের জন্য প্রস্তাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, একটি সিন্ডিকেট রাতের আঁধারে তীরজুড়ে ফেলা বালিগুলো উত্তোলন করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এসব প্রতিরোধে বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে কেউ এভাবে বালি উত্তোলনের চেষ্টা চালালে তাদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারজান হোসাইন এই ব্যাপারে বলেন, নদী থেকে অবৈধ বালি উত্তোলনের সাথে জড়িতদের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৫০০ শীতার্তকে শীতবস্ত্র দিলেন চসিক মেয়র রেজাউল
পরবর্তী নিবন্ধসিওসি’৮৬ এর সভা