ভাঙছেই না ইয়াবা সিন্ডিকেট

অর্থের মোহে কেউ নিজেদের বিরত রাখতে পারছে না

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার ও টেকনাফে ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের পর চট্টগ্রামের মানুষ ধারণা করেছিলেন যে, এই সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্ক ভেঙে যাবে। বন্ধ হবে ইয়াবা পাচার। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। অ্যাম্বুলেন্স যোগে, মোটর সাইকেলের তেলের ট্যাঙ্কে ভরে, ট্রাকের টুলবক্সে, বাসের সিটের নিচে লুকিয়ে নানা কৌশলে পাচার হচ্ছে ইয়াবা। শুধু তাই নয়, পাকস্থলীতে ভরেও ইয়াবা পাচার হচ্ছে। সড়ক, পাহাড়, সাগর পথে আসছে ছোট বড় চালান। সর্বশেষ গত ২৩ ডিসেম্বর আনোয়ারা ও পটিয়া থানা পুরিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে ২১ কোটি ৯ লাখ টাকা মূল্যমানের ১ লাখ ৪৬ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত তিন পাচারকারী জানিয়েছেন টেকনাফ থেকে চালানটি চট্টগ্রাম পৌঁছে দিতে পারলে তিন লাখ টাকা পাওয়ার কথা। র‌্যাব-পুলিশের অভিযানেও চট্টগ্রামে থামছে না ইয়াবার কারবার। স্বামী-স্ত্রী, জামাই-শ্বশুর, ভাই-বোন, মামা-ভাগিনা, মা-ছেলে ইয়াবা পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়ছে। কিন্তু অর্থের মোহে অন্ধ হয়ে
ইয়াবা পাচার থেকে কেউই নিজেদের বিরত রাখতে পারছে না। মাদকাসক্তের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অপরাধ। পরিবার, সমাজে বাড়ছে অস্থিরতা। মূলত পাচারকারীদের সিন্ডিকেট ভাঙা যাচ্ছে না বলেই থামছে না ইয়াবার আগ্রাসন।
এ প্রসঙ্গে সিএমপির মিডিয়া উইং অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফ আজাদীকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ কোনো অভিযান না থাকলেও নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। এ অভিযানে প্রতিদিনই ইয়াবা ধরা পড়ছে। মিয়ানমার থেকে এসে ঢাকা-চট্টগ্রামে বাসা ভাড়া নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন মাদক কারবারিরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত শক্তিশালী অপরাধী সিন্ডিকেট। এর সাথে রাজনৈতিক দলের এক শ্রেণির নেতা ও সন্ত্রাসীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। আছে আইন-শৃক্সখলা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সিন্ডিকেট ভাঙা যাচ্ছে না বলেই মাদকের কারবার এবং আগ্রাসন থামছে না। মিয়ানমার থেকে নানা কৌশলে আসছে ইয়াবার চালান।
২০১৮ সালের মে মাস থেকে দেশব্যাপী মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হয়। এ অভিযানে কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে অসংখ্য মাদক কারবারি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। কয়েকশ’ মাদক কারবারি আত্মসমর্পণও করে। তবে আইনশৃক্সখলা বাহিনীর কাছে কোনোভাবেই যেন হার মানতে রাজি নয় ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। নির্বিঘ্নে এই মাদকের চালান আনতে তারা নিত্য নতুন রুট ব্যবহার করছে। ক’দিন পর চালান ধরা পড়লে পাল্টে ফেলছে রুট। পাশাপাশি বদল করছে রংও।
আইনশৃক্সখলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ধারণা, বিপণনের কৌশল হিসেবে তারা পাল্টে দিচ্ছে রঙ। তাছাড়া ইয়াবায় সাধারণত বিভিন্ন ধরণের ঘ্রাণ থাকে। সম্প্রতি জব্দ করা ইয়াবা ট্যাবলেটের রঙ গোলাপির পাশাপাশি সবুজ, কমলা, সাদাসহ বিভিন্ন রঙের হচ্ছে। সচরাচর ইয়াবার রঙ গোলাপি এবং প্রতি পিসের ওজন ০.১০ গ্রাম। নতুন ধরনের যে ইয়াবা ধরা পড়ছে সেগুলোর রঙ ভিন্ন এবং প্রচলিত ইয়াবার চেয়ে আকারে দ্বিগুণ। ওজন ০.২০ গ্রাম। পরীক্ষা করে দেখা যায়, গোলাপি ইয়াবায় যে ধরনের মিথাইল আ্যামফিটামিন থাকে অন্য রঙের ইয়াবায়ও সে ধরনের মিথাইল আ্যামফিটামিন রয়েছে। তবে এটা আকারে বড় ও গন্ধহীন।

সিএমপির বাকলিয়া থানার ওসি নেজামউদ্দিন আজাদীকে বলেন, মাদক বিক্রি বন্ধে ভিন্ন কৌশল নিয়ে কাজ করছেন তারা। তিনি বলেন, এখন হোম ডেলিভারি ও মোবাইল ফোনে প্রায় দ্বিগুণ দামে ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে মোবাইল নম্বর ও কণ্ঠস্বর অপরিচিত হলে তাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে না। অপরিচিত কারো কাছে মাদক বিক্রি করলেও কয়েকটি জায়গায় ঘুরিয়ে লোকজন দিয়ে যাচাই-বাছাই করে বিশ্বস্ত মনে হলে তারপর ওই গ্রাহকের কাছে মাদক বিক্রি করছে তারা। সাঁড়াশি অভিযানের কারণে তালিকাভুক্তরা গা ঢাকা দিয়েছে। তবে তাদেরই নিয়োগ করা কিছু নতুন লোক এসব মাদক বিক্রি করছে বলে জানান ওসি নেজামউদ্দিন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅপহৃত সিপিপি কর্মী উদ্ধার রোহিঙ্গা মাঝি আটক
পরবর্তী নিবন্ধ২১ কোটি টাকার ইয়াবা পৌঁছে দিলে মিলত তিন লাখ টাকা