তুষার মজুমদার (০৮) ও তনুশ্রী মজুমদার (০৬), দুই ভাই-বোন। বেড়ে উঠছিল একসাথে। পড়াশোনাও একই স্কুলে। প্রতিদিন একসাথে স্কুল যাওয়া, একসাথে ফেরা। গতকালও ফিরেছেন। তবে এবার ফেরার পর একেবারেই হারিয়ে গেছেন। গতকাল রোববার দুপুরে পুকুরে ডুবে তাদের মৃত্যু হয়। ঘটনাটি ঘটেছে আনোয়ারা থানার
দক্ষিণে নারায়ন দত্তের বাড়িতে। তারা বারখাইন ইউনিয়নের নৈদন্ডী গ্রামের পঞ্চ ফকিরের কালিবাড়ীর শ্যামল মজুমদারের সন্তান। শ্যামল পরিবার নিয়ে আনোয়ারা থানার দক্ষিণ পাশে ভাড়া বাসায় থাকেন।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শিশু দুজন আনোয়ারা সদর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তুষার ২য়, তনুশ্রী পড়ছিল শিশু শ্রেণীতে। গতকাল দুপুর একটায় বিদ্যালয় ছুটির পর মা শ্রাবনী তাদের বাসায় রেখে ন্যায্যমূল্যের চাল কিনতে আনোয়ারা সদরে আসেন। তার আগে পাশের বাসায় মাসী নুপুরকে ছেলে-মেয়েদের দেখে রাখতে বলেন। মাসী তাদের বাসা থেকে বের না হওয়ার কথা বললেও দুই ভাই-বোন সবার অজান্তে বাসার পাশের পুকুরে গোসল করতে যান। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর মাসী নুপুর তাদের বাসায় দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুজি শুরু করেন। এক পর্যায়ে পুকুরে অনুশ্রীকে ভাসতে দেখেন। এরপর স্থানীয়রা তাদের দুজনকে পুকুর থেকে উদ্ধার করে আনোয়ারা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
পরিবারের শেষ সম্বল দুই ছেলে-মেয়েকে একসাথে হারিয়ে তাদের মা-বাবা বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন। এ ঘটনার খবরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মাঝেও শোকের ছায়া নেমে আসে। গতকাল রাত সাড়ে ৮ টায় তাদের গ্রামের বাড়ি বারখাইনের পারিবারিক শ্মশানে সৎকার করা হয়।
তাদের বাবা শ্যামল মজুমদার বলেন, আমার আর কিছু নেই। বিধাতা দুই ছেলে মেয়েকে দিছে আবার একসাথে নিয়ে গেল। আমরা এখন কি নিয়ে বাঁচবো। আমাদের তো আর হারানোর কিছু নেই।
আনোয়ারা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রেজুয়ানা আহমেদ বলেন, পানিতে ডুবে যাওয়া দুই ভাই-বোনকে হাসপাতালে আনা হলেও তার আগেই তারা মারা যান।
আনোয়ারা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী এস.এম জয়নাল আবেদীন বলেন, আজও (রোববার) দুই ভাই-বোন একসাথে স্কুলে এসেছিল। কাল থেকে তারা আর আসবে না। এ বড় বেদনদায়ক!
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনী বলেন, প্রত্যেক পরিবারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের উচিৎ তাদের বাচ্চাদের সাঁতার শেখানো। এখন দেখা যায় ১০/১৫ বছরের বাচ্চারাও সাঁতার না জানার কারণে পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে। এ বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতনতা জরুরি।
এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, দুই ভাই-বোনকে আনোয়ারা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হলে তাদের ইসিজি করার জন্য হাসপাতালের ইসিজি স্পেশালিস্টকে পাওয়া যায়নি। তার আগেই ইসিজি রুম বন্ধ করে হাসপাতাল ছাড়েন ইসিজি স্পেশালিষ্ট কামরুল হাসান। পরে ইসিজি করার জন্য ডেকে নিয়ে আসা হয় ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোকজনকে। এ সময় জরুরি বিভাগের সেবার মান দেখে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ বলেন, গুরুতর রোগীদের হাসপাতালেই ইসিজি সেবা দেওয়া হয়। রোববার কেন ইসিজি বিভাগ বন্ধ ছিল তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।