ফ্রঁসোয়া–মারি আরুয়ে (১৬৯৪–১৭৭৮)। ছদ্মনাম ভলতেয়ার। লেখক, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক ও পথ প্রদর্শক। ১৬৯৪ সালের ২১ নভেম্বর ফ্রান্সের প্যারিসে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। লেখাপড়া শেষ করার পর তিনি সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। স্বপ্ন ছিল একজন নাট্যকার হবেন, কিন্তু পরিবারের ইচ্ছে অনুযায়ী প্যারিসে নোটারি অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এখানেই শুরু হয় তাঁর কাব্যচর্চা। পরে ফরাসি রাষ্ট্রদূতের সচিব হিসেবে নেদারল্যান্ডে চলে যান। তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রতিভাবান একজন সাহিত্যিক, যার অসাধারণ লেখনী শক্তি তার সময়ে তুমুল বিতর্কের ঝড় তুলে দিত। এমনও হয়েছে, সেই ঝড়ের আঘাতে কখনো কখনো অনেক প্রতিষ্ঠিত বিখ্যাত দার্শনিক মতবাদ কিংবা ধর্মীয় বিশ্বাসের ভীত নড়ে যেত। তার অধিকাংশ কর্মই ছিল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনাকে কেন্দ্র করে। ফলস্বরূপ তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে, জেল খাটতে হয়েছে, এমনকি নির্বাসনেও যেতে হয়েছে। ১৭৩৪ থেকে ১৭৪৯ সময়ে নির্বাসনে থাকাকালে তিনি প্রাকৃতিক বিজ্ঞান নিয়ে অধ্যয়ন করেন। একই সঙ্গে তিনি লেখালেখি চালিয়ে যেতে থাকেন। বিভিন্ন ধরনের দার্শনিক এবং তাত্ত্বিক বিষয়বস্তু তিনি তার লেখায় তুলে ধরেছেন। ১৭৪৯ সালে তিনি পটসড্যাম চলে যান। সেখানে তিনি বার্লিন অ্যাকাডেমি অব সাইন্সের সভাপতিকে আক্রমণ করে লেখা প্রকাশ করেন। ফলে আবারও তিনি জনরোষানলে পড়েন। গ্রেফতার এড়াতে তিনি এক শহর থেকে অন্য শহরে ঘুরতে থাকেন এবং একপর্যায়ে সুইজারল্যান্ডে গিয়ে আশ্রয় নেন। বিভিন্ন সময়ে নির্বাসনে থাকাকালে তিনি প্রায় ২১ হাজার বই সংগ্রহ করেছেন এবং অধ্যয়ন করেছেন। একজন দার্শনিক হিসেবে ১৭৬৪ সালে তিনি বিখ্যাত ‘Philosophical Dictionar’ গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এছাড়া ১৭৫১–১৭৭২ সালে লেখা তার প্রবন্ধগুলো তিনি ‘Encyclopedia’ শিরোনামে প্রকাশ করেন। এসব লেখায় তিনি অত্যন্ত খোলামেলাভাবে ফরাসি সমাজ, ধর্ম ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনা করেছেন। ইতিহাসবিদ হিসেবে ভলতেয়ারের অবদান অনস্বীকার্য করা যাবে না। তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে ধারাবাহিকভাবে ইতিহাসের ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ করেছিলেন। ২৫ বছর পর প্রথমবারের মতো ১৭৭৮ সালে তিনি তার প্রিয় জন্মভূমি প্যারিসে ফিরে যান। এক সময় যাকে বার বার প্যারিসবাসী তাড়িয়ে দিয়েছিল, আজ তারা তাকে বুকে আলিঙ্গন করে গ্রহণ করেন। ওই সময় বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের সঙ্গে দেখা হলে তিনি ভলতেয়ারকে একজন মুক্ত স্থপতি হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৭৭৮ সালের ৩০ মে এই মহান দার্শনিক মৃত্যুবরণ করেন।