উপকূলে ড্রেজারের কারণে জেলেদের জাল নষ্ট হচ্ছে। মীরসরাই উপজেলার সাহেরখালী ও ডোমখালী জেলেপল্লীতে সরেজমিনে গিয়ে এই তথ্য জানা যায়। এখানে সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। বর্ষার মৌসুমে জেলে বাড়িতে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা ও নেই। নেই কোন স্যানিটেশন ব্যবস্থা। তাই জেলে পল্লীর লোকজন সারা বছর পানি বাহিত রোগসহ বিভিন্ন রোগ শোকে আক্রান্ত থাকে। জেলে পল্লীর লোকজনের জীর্ণ শরীর, রোগাক্রান্ত দেহ, হতাশাগ্রস্ত মন, তবুও থেমে নেই তাদের জীবন।
জেলে পল্লী থেকে সাগরে যাওয়ার তেমন কোন রাস্তা নেই। আগে তারা পুরাতন স্লুুইচগেইট থেকে নৌকায় করে সাগরে গিয়ে মাছ ধরে আবার নৌকায় করে সু্লইচগেইট পর্যন্ত ফিরে দ্রুত যে কোনো জায়গায় মাছ পরিবহন করতে পারত। কিন্তু বর্তমানে পুরাতন সু্লইচগেইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে বন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে কাদা মাড়িয়ে সাগরে যেতে হয়। হাজারো কষ্ট উপেক্ষা করে ঝড় তুফান ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাথায় নিয়ে মৃত্যুকে তুচ্ছ করে গভীর সাগরে গিয়ে মাছ ধরে। তাদের দুঃখ কষ্টে আহরিত মাছ দিয়ে এই জনপদের লক্ষ মানুষের মাছের চাহিদা মেটায়। অথচ সাগরে মাছ ধরার ক্ষেত্রে তাদের সমস্যার অন্ত নেই। স্থানীয় জেলে কমল জলদাস, অনাথ জলদাস এবং রামচরণ জলদাস বলেন, সমুদ্রের গভীরতা কমে যাওয়া এবং মীরসরাই শিল্প জোনের উন্নয়ন কাজে যাতায়াত করা বড় বড় জাহাজের আওয়াজের কারণে সমুদ্রে মাছের বিচরণ অনেক কমে গেছে। গুরুচরণ দাস এবং শিরোমনি দাস বলেন, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বছরে বেশিরভাগ সময় সাগরে মাছ ধরা নিষেধ থাকে। সে সময়ে তাদের তিন বেলা খেয়ে পরে বেঁচে থাকা অনেক কষ্টসাধ্য হয়।
বাদল চন্দ্র দাস বলেন, সাগরে নিষেধাজ্ঞার সময় সরকার অনুদান হিসেবে নামে মাত্র কিছু চাল দিয়ে থাকেন, সে চাল দিয়ে তাদের জীবনধারণের কিছুই হয় না। তারা আরো বলেন, সাগর পাড়ে জাল শুকাতে দিলে এলাকার কিছু চিহ্নিত চোর তাদের জাল চুরি করে নিয়ে যায়। তারা ভয়ে এসব চোর চক্রের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক জেলে অভিযোগ করেন, ডোমখালী ও সাহেরখালী মৎস্য আহরণ এলাকায় সাগরে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে ভোলগেট/ট্রাক দিয়ে সেই বালি দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে থাকে। ভলগেট এবং ড্রেজার চলাচলের কারণে তাদের লক্ষ লক্ষ টাকার জাল ছিঁড়ে যায়। এসব ড্রেজার মালিকদের ভয়ে তারা সবসময় আতংকগ্রস্ত থাকে। মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের উনয়ন কাজে ব্যবহারের জন্য বালি উত্তোলন করতে বেজা কর্তৃপক্ষ কিছু ড্রেজার অনুমোদন দিয়েছে। ওইসব ড্রেজার দিয়ে উত্তোলিত বালি শুধুমাত্র মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজে ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু স্থানীয় জেলেরা অভিযোগ করে কিছু ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন করে বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি ও করে থাকে। যাহা সম্পূর্ণ বেআইনি।জেলে পল্লীতে ঘুরে জানা যায় উপকূলীয় অঞ্চলে কয়েক হাজার জেলের বসবাস। প্রায়ই সামুদ্রিক মাছের সুষ্ঠু প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সাগরের মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে মৎস্য অধিদপ্তর।এ সময়ে জেলেদের সরকারি অনুদান দেওয়ার কথা থাকলেও যা চাহিদার তুলনায় খুবই সামাস্য। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে মোট নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২৫৬৮ জন। তার মধ্যে এই মৌসুমে ২১২৬ জন জেলে দুই কিস্তিতে মোট ৮৬ কেজি চাল পায়। প্রথম কিস্তিতে ৫৬ কেজি এবং দ্বিতীয় কিস্তিতে ৩০ কেজি হারে। তবে আগামীতে এর পরিমাণ বৃদ্ধির বিষয়ে প্রস্তাবনা দেয়া হবে। বালি উত্তোলনের ড্রেজার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজে ব্যবহারের জন্য বেজা কর্তৃক অনুমোদিত কিছু ড্রেজারের বিষয়ে আমি জানি। তবে জেলেদের জাল বিনষ্ট হওয়ার বিষয়ে অবগত নই।
জেলেদের সাগরে যাওয়ার রাস্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক মাস আগে সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে বেজা কর্তৃক আয়োাজিত মিটিংয়ে জেলেদের যাতায়াতের রাস্তা, নৌঘাটে সুপেয় পানির ব্যবস্থা, নৌঘাটে জেলেদের জন্য যাত্রী ছাউনিসহ বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করেন। জেলেদের জালের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে জানানো হবে।