ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য (১৯১৪–১৯৩৫)। ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী। তিনি ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ আগস্ট তৎকালীন ঢাকা জেলার জয়দেবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বসন্তকুমার ভট্টাচার্য। ছাত্রাবস্থায় গুপ্ত বিপ্লবী দলে যোগ দেন। বাংলার কুখ্যাত গভর্নর অ্যান্ডারসনকে হত্যার প্রতিজ্ঞা নিয়ে কলকাতা ও ঢাকা থেকে আগত অপর দুজন সঙ্গী নিয়ে ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে দার্জিলিং পৌঁছান। এই হত্যা পরিকল্পনায় ভবানীপ্রসাদের সংগে যুক্ত ছিলেন বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্সের সুকুমার ঘোষ, উজ্জ্বলা মজুমদার (রক্ষিত রায়) রবীন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, মনোরঞ্জন ব্যানার্জী প্রমুখ। লেবং রেস কোর্স গ্রাউন্ডে তারা ৮ মে ১৯৩৪ তারিখে ভবানীপ্রসাদ তাঁর রিভলভার থেকে সাহেবকে লক্ষ্য করে অ্যান্ডারসনকে গুলি করেন কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়, গভর্নরের দেহরক্ষী তৎক্ষণাৎ গুলিবর্ষণ করে ভবানীপ্রসাদকে লক্ষ্য করে। গুলির আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে ঢলে পড়েন ভবানীপ্রসাদ। রবি ব্যানার্জী সাথে সাথে তাঁর রিভলভার থেকে গুলি করতে শুরু করেন। তাঁর গুলিতে বিদ্ধ হয়ে পড়েন গভর্নরের স্টেনো মিস থর্টন এবং এক শ্বেতাঙ্গ সার্জেন্ট। এরপরই রবি ব্যানার্জীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এক দল দেহরক্ষী। গুরুতর আহত ভবানীপ্রসাদ এবং রবি ব্যানার্জীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বিচারে সঙ্গী সুকুমার ঘোষের ১৪ বছর কারাদণ্ড হয় ও দুঃখপ্রকাশ করায় অপরজনের অল্প শাস্তি এবং ভবানীপ্রসাদের মৃত্যুদণ্ড হয়। ভবানী তাঁর ছোট ভাই দূর্গা প্রসাদকে বলে এসেছিলেন সব বিপ্লবী বই, গ্রন্থ তালিকা পুড়িয়ে ফেলতে, তাঁর বন্ধু প্রবোধকে সব পত্রিকা দিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছিলেন। বাড়িতে বাবা মাকে বলেছিলেন, ম্যাট্রিক পাস করে কলকাতায় থাকবেন, তাই মেস দেখতে যাচ্ছেন। দু দিন পরই ফিরে আসবেন! কিন্তু ফেরা হয়নি আর! দুদিন পরে তাঁদের বাড়িতে পুলিশ এসেছিলো তল্লাশি করতে। পুরো পরিবারের জিজ্ঞাসাবাদ চলে! হবে না সে বাড়ির মেজো ছেলে যে ছোটলাটকে গুলি করেছে। পরিবারের আদরের সেই মেজো ছেলেটি ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।