বয়স্ক জনগোষ্ঠী যেন সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকেন, তার পরিকল্পনা নিতে হবে

| শুক্রবার , ১৬ জুন, ২০২৩ at ৫:০৪ পূর্বাহ্ণ

দৈনিক আজাদীসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, কোভিড মহামারীর অভিঘাত পেরিয়ে দেশের মানুষের গড় আয়ু আবারও বাড়ার খবর দিল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। সর্বশেষ বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস অনুযায়ী ২০২২ সালে দেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু বেড়ে ৭২ দশমিক ৪ বছর হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষ এখন গড়ে ৭২ বছর ৫ মাস বেঁচে থাকছে। তার আগের বছর ২০২১ সালে কোভিড মহামারীর ধাক্কায় প্রত্যাশিত গড় আয়ু কমে ৭২ দশমিক ৩ বছর হয়েছিল। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে গড় আয়ু ছিল ৭২ দশমিক ৮ বছর।

অন্যদিকে, আরেক খবরে বলা হয়েছে, দেশে জন্মহার আবারও বাড়ছে। জন্ম নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা পদক্ষেপের মধ্যেও এই হার বেড়ে যাওয়ার জন্য কোভিড মহামারীকালে সবার ঘরবন্দি থাকাকে কারণ মনে করছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২’ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২ সালে দেশে স্থুল জন্মহার বেড়ে ১৯ দশমিক ৩ জন হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে গত এক বছরে ১৯ দশমিক ৩টি শিশু জন্ম নিয়েছে। এই স্থুল জন্মহার ২০২১ সালের তুলনায় কিছুটা বেশি। ওই বছর দেশে স্থুল জন্মহার ছিল ১৮ দশমিক ৮ জন। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সাল থেকে টানা চার বছর দেশে স্থুল জন্মহার বৃদ্ধি ঘটেছে। গত বছরের জন্মহার ছিল প্রতি হাজারে ১৮ দশমিক ৮ জন। ২০২০ ও ২০১৯ সালে জন্মহার ছিল ১৮ দশমিক ১ জন এবং ২০১৮ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৩ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের গড় আয়ু বাড়ার কারণ হলো, স্বাস্থ্য খাতে অগ্রগতি, সরকারি বেসরকারি খাতে সারা দেশের বিভাগীয় এবং জেলা শহরগুলোতে গড়ে ওঠা সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, ক্লিনিক, রোগ পরীক্ষা কেন্দ্র, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও প্রাইভেট সেক্টরের বিকাশ লাভ। যাতে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সামর্থ্য বৃদ্ধি পায়। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন হওয়ার কারণে কেবল গড় আয়ু নয়, শিশুমৃত্যু হার এবং মাতৃমৃত্যু হারও অনেক কমে যায় বাংলাদেশে। ডায়রিয়ায় ও পানিশূন্যতার চিকিৎসা এবং প্রতিরোধে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারণা ও তৎপরতায় দেশের শিশুমৃত্যু হার অনেক কমে যায়।

গড় আয়ু বাড়লেও দেশে শিশুমৃত্যুর হার বেড়েছে। ২০২১ সালে দেশে এক বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার ছিল হাজারে ২২ জন, ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২৫ জন। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার ২০২১ সালে ছিল প্রতি হাজারে ২৮ জন, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে।

জরিপে আরও দেখা গেছে, ২০২২ সালে দেশে প্রতি হাজারে মৃত্যুহার কিছুটা বেড়েছে। ২০২১ সালে দেশে প্রতি হাজারে মৃত্যুহার ছিল ৫ দশমিক ৭, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮। ২০১৯ সালে প্রতি হাজারে মৃত্যুহার ছিল ৪ দশমিক ৯, ২০১৮ সালে যা ছিল ৫। সেই তুলনায় ২০২২ সালে প্রতি হাজারে মৃত্যুহার বেড়েছে অনেকখানি।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম এ বিষয়ে নিজে স্বীকার করে বলেছেন, ‘দেশে শিশুমৃত্যুর হার বৃদ্ধি কাম্য নয়। এর পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। এটা কমাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

বিশেষজ্ঞরা বলেন, গড় আয়ু বাড়া উন্নয়নের লক্ষণ, তবে বিশাল বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে যদি কর্মক্ষম না করা হয় তবে এর পরিণাম হবে ভয়াবহ। তাঁরা বলেন, গড় আয়ু বাড়া একদিকে যেমন সম্ভাবনার অন্য দিকে শঙ্কার। গড় আয়ু বেড়েছে ঠিকই কিন্তু এ দীর্ঘ সময় একজন মানুষ কতটা সুস্থভাবে জীবনযাপন করছে সেটাই বড় প্রশ্ন। একজন মানুষ ৭২ বছর বাঁচলেন, ভালো কথা কিন্তু এই ৭২ বছরে যাপিত জীবনে তিনি কতটা সময় স্বাস্থ্যবান কর্মক্ষম হয়ে বেঁচেছেন সেটা মূল কথা। সে জন্য কেবল গড় আয়ু বাড়লে হবে না, প্রয়োজন মানুষের কর্মমুখর সুস্থ জীবন। কারণ, দীর্ঘদিন বেঁচে থাকায় কর্মক্ষমতা না থাকলে সেটার অর্থনীতির ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। এই বিশাল বয়স্ক জনগোষ্ঠী যেন সুস্থ থাকেন, কর্মক্ষম থাকেন, এখন থেকেই সে পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে