বড় স্বপ্ন, নতুন পরিকল্পনা

এক হাজার কোটি টাকায় পাল্টে যাবে চিটাগাং ড্রাই ডক ।। ৬৯০ ফুট দীর্ঘ ও ১১৫ ফুট প্রস্থের জাহাজ ডকিং করা যাবে

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চিটাগাং ড্রাই ডক লিমিটেডের (সিডিডিএল) সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। সর্বাধুনিক প্রযুুক্তির নতুন ডক নির্মাণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশ্বের শিপিং সেক্টরের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক জাহাজ নির্মাণের বিষয়টি মাথায় রেখে এই পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে করে এখানে ৬৯০ ফুট দীর্ঘ এবং ১১৫ ফুট প্রস্থের জাহাজ ডকিং করে মেরামত বা নির্মাণ করা যাবে। ১ হাজার কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে নতুন ডক নির্মাণের এই পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে সিডিডিএল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পতেঙ্গা এলাকার সাগরপাড়ের ৫৪ একর জায়গায় ড্রাই ডক গড়ে তোলার কাজ শুরু হয় ১৯৬৬ সালে। ১৯৭৩ সালে যুগোস্লাভিয়ার কারিগরি সহায়তায় প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়। ১৯৮৫ সালে দেশের সমুদ্রগামী জাহাজের একমাত্র ড্রাই ডক হিসেবে সিডিডিএল বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে। বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশনের (বিএসইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানটি সর্বোচ্চ ১৮০ মিটার দীর্ঘ, সাড়ে আট মিটার ড্রাফট এবং ২৪ মিটার প্রস্থের জাহাজ ডকিং করে মেরামত করতে পারে। বিশ্বের শিপিং সেক্টরে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। একসময় মাঝারি সাইজের জাহাজে পণ্য পরিবহন করা হতো। এখন জাহাজের আকার আকৃতি বড় হচ্ছে। একই সাথে অধিক পণ্য পরিবহন করতে পারলে খরচ কমে যায়। এই অবস্থায় বিশ্বের শিপিং সেক্টর জাহাজের ড্রাফট কমিয়ে আকারে পরিবর্তন এনে নতুন ধাঁচের জাহাজ তৈরি করছে। এতে দৈর্ঘ্যের পাশাপাশি দুদিকে জাহাজ বিস্তৃত করা হচ্ছে। আগের জাহাজগুলো ২০/২১ হাজার টন পণ্য নিয়ে চলাচল করত। এখন নতুন ধাঁচের জাহাজগুলো ৫০ হাজার টনের কাছাকাছি পণ্য পরিবহনে সক্ষম হচ্ছে। প্রায় একই জ্বালানি এবং লোকবল ব্যবহার করে দ্বিগুণ পণ্য পরিবহন বিশ্বের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে। এতে খরচ কমছে এবং তৈরি হচ্ছে গণমুখী পণ্য পরিবহন নেটওয়ার্ক। শিপিং সেক্টরের নতুন এই ধারা থেকে পিছিয়ে রয়েছে চিটাগাং ড্রাই ডক। এখানে সর্বোচ্চ ১৮০ মিটার দীর্ঘ, ২৪ মিটার প্রস্থ এবং সাড়ে আট মিটার ড্রাফটের জাহাজ বার্থিং দিয়ে মেরামত করতে পারে। বর্তমানে এই ধরনের জাহাজের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। নতুন ধাঁচের যেসব জাহাজ গত কয়েক বছর ধরে তৈরি হচ্ছে, সেগুলো মেরামত করার সুযোগ এখানে থাকবে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চিটাগাং ড্রাই ডককে একটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তাই দ্বিতীয় একটি ডক নির্মাণ জরুরি। দ্বিতীয় ডক নির্মাণ করে ড্রাই ডকের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখে পুরনো ডক মেরামত করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
নতুন ডক নির্মাণের ক্ষেত্রে আধুনিক শিপিং সেক্টরের উন্নয়নের বিষয়টি মাথায় রাখা হচ্ছে। নতুন ডকে যাতে সহজে বড় আকৃতির জাহাজ বার্থিং দিয়ে মেরামত করা সম্ভব হয় বা নতুন জাহাজ নির্মাণের সময় বড় জাহাজ নির্মাণ করা যায় সেজন্য বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নতুন ডকে সর্বোচ্চ ১০ মিটার ড্রাফটের ২১০ মিটার দীর্ঘ এবং ৩৫ মিটার প্রস্থের জাহাজ ভিড়ানোর সুযোগ রাখা হবে। এই ডক ব্যবহার করে চিটাগাং ড্রাই ডক নতুন ধাঁচের বড় আকৃতির জাহাজ নির্মাণ করতে পারবে। এই পরিকল্পনা নিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
নতুন প্রকল্পের ব্যাপারে চিটাগাং ড্রাই ডক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর এম নাজমুল করিম কিছলু বলেন, চিটাগাং ড্রাই ডক লিমিটেডকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করার সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চারটি ভিশন আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছিলেন। এগুলো হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে উজ্জীবিতকরণ, অধিকতর লাভজনক ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালনা এবং দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে ড্রাই ডককে জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা।
তিনি বলেন, ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর চিটাগাং ড্রাই ডক আমাদের কাছে দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে আমরা তিনটি ভিশন সফলভাবে অর্জন করেছি। জাহাজ নির্মাণেও ভূমিকা রেখেছি। তবে আরো বড় পরিসরে বড় আকৃতির জাহাজ নির্মাণের মাধ্যমে বিশ্বের শিপিং সেক্টরে নিজেদের একটি অবস্থান তৈরি করার লক্ষ্যে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। নতুন ডক নির্মাণ ওই পরিকল্পনার অংশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে করোনায় আরও ৩ জনের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এইচএসসির ফল প্রকাশ!