বৃষ্টিই বাঁচাতে পারে বাংলাদেশকে। এমন একটি ধারণা হয়তো ছিল টাইগারদের মাঝে। কিন্তু তাদের সে প্রত্যাশা মাঠের লড়াইয়ের মতোই ছিল অপ্রত্যাশিত। বৃষ্টি হয়নি। আর মাঠে বাংলাদেশকে খুব একটা লড়াই করতেও দেয়নি শ্রীলংকান স্পিন। স্পিনার প্রাভিন জয়াবিক্রমার অভিষেকে রেকর্ড গড়া বোলিংয়ে পঞ্চম দিনের সকালেই ছত্রখান হয়ে যায় বাংলাদেশ দলের বাকি অংশ। সফরকারীদের গুঁড়িয়ে দেন তরুণ ওই বাঁহাতি স্পিনার। তাতে করে বড় হার দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ করল বাংলাদেশ। পাল্লেকেলেতে প্রথম টেস্ট ড্র হওয়ার পর দ্বিতীয় টেস্ট ২০৯ রানে জিতে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ ঘরে তুলেছে শ্রীলংকা। ৪৩৭ রানের প্রায় অসম্ভব লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশ থেমে গেছে ২২৭ রানে। এদিনও তিনটি উইকেট নিয়েছেন জয়াবিক্রমা। ম্যাচে সব মিলিয়ে ১৭৮ রানে পেয়েছেন ১১ উইকেট। ক্রিকেট ইতিহাসে অভিষেকে তার চেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন কেবল চার জন। অভিষেকে দুই ইনিংসেই পাঁচ উইকেটের স্বাদ পেলেন জয়াবিক্রমা। শ্রীলংকার প্রথম বোলার হিসেবে নিজের প্রথম টেস্টে নিয়েছেন ১০ উইকেট। পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে গতকাল সোমবার ৫ উইকেটে ১৭৭ রান নিয়ে দিন শুরু করে বাংলাদেশ। জয়ের জন্য শেষ দিনে তাদের প্রয়োজন ছিল ২৬০ রান। আগের দিন প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারানোয় এই রান তাড়ার বাস্তবিক সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ ছিল। তবে বাকি ব্যাটসম্যানরা কতটুকু লড়াই করতে পারে সেটিই ছিল দেখার বিষয়। কিন্তু কি দেখবে। লড়াইয়ের মানসিকতাটাই দেখা যায়নি বাকিদের মাঝে। শেষ দিনে লড়াইয়ের জন্য যার দিকে তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ সেই লিটন দাসই ফেরেন সবার আগে। জয়াবিক্রমার আগের বলটি বিশাল টার্ন করে বেরিয়ে যায়। পরের বলটিও টার্ন করবে ভেবে ডিফেন্স করার চেষ্টা করেন লিটন। সোজা আসা বল ব্যাটের কানা এড়িয়ে আঘাত হানে প্যাডে। আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দিলে রিভিউ নেন লিটন। কিন্তু সিদ্ধান্ত আউটের পক্ষেই যায়। এরপর তাইজুলকে নিয়ে মেহেদী মিরাজ চেষ্টা করেন। কিন্তু বোলিং করতে এসেই উইকেট নেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। জায়গায় দাঁড়িয়ে থার্ড ম্যানে স্টিয়ার করার চেষ্টায় তাইজুল ইসলাম ধরা পড়েন কিপারের গ্লাভসে। প্রথম ঘণ্টায় ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশ পানি পানের বিরতির পর ভেঙে পড়ে করে। রমেশ মেন্ডিসকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় উইকেট বিলিয়ে আসেন তাসকিন আহমেদ।
পরের ওভারে এক প্রান্ত আগলে রাখা মেহেদী হাসান মিরাজকে ফিরিয়ে দেন জয়াবিক্রমা। মিরাজের উইকেটের পেছনে দারুণ অবদান আছে পাথুম নিসানকার। বাঁহাতি স্পিনারের বলে সুইপ করেছিলেন ব্যাটসম্যান, তার মুভমেন্ট বুঝে আগেই শর্ট লেগের ফিল্ডার ডানে সরে যান এবং ঠিক সেখানেই ক্যাচটা পান। দুই বল পর আবু জায়েদ চৌধুরিকে এলবিডব্লিউ করে বাংলাদেশকে গুটিয়ে দেন জয়াবিক্রমা। সঙ্গে গড়েন অভিষেকে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড। সেই ১৯৫০ সালে ম্যানচেস্টারে ২০৪ রানে ১১ উইকেট নিয়ে এত দিন রেকর্ডটা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের অ্যালফ ভ্যালেন্টাইনের অধিকারে।
প্রথম ইনিংসে ৯২ রানে ৬ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৮৬ রানে ৫ উইকেট নেওয়া জয়াবিক্রমা জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৪ রানে ৪ উইকেট নেন অফ স্পিনার মেন্ডিস। বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেকে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডও এখন জয়াবিক্রমার। আগের সেরা ছিল শ্রীলংকারই আকিলা দনাঞ্জয়ার। ২০১৮ সালে ঢাকা টেস্টে ৪৪ রানে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন এই অফ স্পিনার। একটি করে ফিফটি, সেঞ্চুরি ও ডাবল সেঞ্চুরিতে ৪২৮ রান করা লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে জেতেন সিরিজ সেরার পুরস্কার।