বাংলাদেশ–আয়ারল্যান্ডের সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটি এক তরফাই হয়ে গেল। ৩৮ বল বাকি থাকতেই আয়ারল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজ ২–১ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ড ৩৯ রানে এবং দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জিতেছিল। এতে করে টি–টোয়েন্টিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক সিরিজ জয়ের স্বাদ নিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এর আগে ২০১২ সালে তিন ম্যাচের সিরিজ ৩–০ ব্যবধানে এবং ২০২৩ সালে ২–১ ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ। এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ৫টি ক্যাচ ধরে বিশ্ব রেকর্ড ছুঁয়েছেন তানজিদ হাসান। পরে ব্যাট হাতেও তিনি ছিলেন দারুণ। দলকে অপরাজিত ফিফটি উপহার দেন এই বাঁহাতি ওপেনার।
গতকাল বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৪ ওভারে ৩৮ রান তুলে নেয় আয়ারল্যান্ড। এরমধ্যে স্পিনার মেহেদি হাসানের করা ইনিংসের প্রথম ওভারে ৩টি চারে ১৩ রান নেন আইরিশ ওপেনার ও অধিনায়ক পল স্ট্রার্লিং। চতুর্থ ওভারে আয়ারল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন বাংলাদেশ পেসার শরিফুল ইসলাম। ঐ ওভারের শেষ বলে শরিফুলের বলে বোল্ড হন ওপেনার টিম টেক্টর। ১০ বলে ১৭ রান করেন তিনি। পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় উইকেট এনে দেন বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। ৫ রান করে তার বলে বোল্ড হন হ্যারি টেক্টর। ষষ্ঠ ওভারে দ্বিতীয়বারের মতো আক্রমণে এসেই উইকেট তুলে নেন মেহেদি। ওভারের প্রথম ডেলিভারিতে উইকেটরক্ষক লরকান টাকারকে ১ রানে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি।
মোস্তাফিজ ও মেহেদির আঘাতের পর ম্যাচে প্রথম উইকেটের দেখা পান আরেক স্পিনার রিশাদ হোসেন। দারুণ এক ডেলিভারিতে ১৬ বলে ৯ রান করা কার্টিস ক্যাম্ফারকে বোল্ড করেন রিশাদ। সতীর্থদের যাওয়া–আসার মাঝে একপ্রান্ত আগলে আয়ারল্যান্ডের রানের চাকা সচল রেখেছিলেন ব্যক্তিগত ১৫ রানে জীবন পাওয়া স্টার্লিং। ১২তম ওভারে দলীয় ৭৩ রানে স্টার্লিংকে থামান রিশাদ। সাইফকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৭ বলে ৩৮ রান করা স্টার্লিং। দলীয় স্কোর ১শ হবার আগেই আয়ারল্যান্ডের ষষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটান রিশাদ। গ্যারেথ ডেলানিকে ১০ রানে থামিয়ে তৃতীয় উইকেটের দেখা পান তিনি।
১৬তম ওভারে ৯৩ রানে ৬ উইকেট হারায় আইরিশরা। ১৮তম ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নেন মোস্তাফিজ। এতে টি–টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় তৃতীয় স্থানে উঠেন তিনি। ইনিংসের শেষ দুই ওভারে রিশাদ ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ১টি করে উইকেট নিলে, ১৯.৫ ওভারে ১১৭ রানে অলআউট হয়ে যায় আয়ারল্যান্ড। মোস্তাফিজ ৩ ওভারে ১১ রানে এবং রিশাদ ৪ ওভারে ২১ রানে ৩টি করে উইকেট শিকার করেন। এছাড়া শরিফুল ২টি এবং মেহেদি–সাইফুদ্দিন ১টি করে উইকেট নেন।
এই ম্যাচে ৫টি ক্যাচ নেন তানজিদ হাসান। ফলে টি–টোয়েন্টি ফরমেটে তৃতীয় ফিল্ডার হিসেবে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ক্যাচ নেওয়ার ক্ষেত্রে যৌথভাবে শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। তবে পূর্ণ সদস্যের দেশগুলোর মধ্যে এক ম্যাচে ৫টি ক্যাচ নেওয়া প্রথম ফিল্ডার তানজিদ হাসান। তানজিদ পরে ব্যাট হাতেও ছিলেন দলের সেরা। অপরাজিত ফিফটি উপহার দেন বাঁহাতি ওপেনার।
১১৮ রান তাড়া করতে নেমে ৪ ওভারে ৩৮ রান তোলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তানজিদ হাসান ও সাইফ হাসান। ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৪ বলে ১৯ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরেন সাইফ। সাইফের বিদায়ে ক্রিজে এসে সুবিধা করতে পারেননি অধিনায়ক লিটন দাস। ৬ বলে মাত্র ৭ রান করে আউট হন তিনি। ৪৬ রানে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর পারভেজ হোসেন ইমনকে নিয়ে আয়ারল্যান্ড বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তানজিদ। ১২তম ওভারে বাংলাদেশের রান ১০০তে নিয়ে যান তারা। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মেরে টি–টোয়েন্টিতে ১১তম হাফ–সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তানজিদ। ঐ ওভারের চতুর্থ বলে বাউন্ডারি মেরে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন ইমন। ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩৬ বলে ৫৫ রানে অপরাজিত থাকেন তানজিদ। ইমনের ২৬ বলে ৩৩ রানের অনবদ্য ইনিংসে ১টি বাউন্ডারি ও ৩টি ওভার বাউন্ডারি ছিল।
ম্যাচ সেরা হন তানজিদ হাসান এবং সিরিজ সেরা হয়েছেন মেহেদি হাসান। এই সিরিজ দিয়ে টি–টোয়েন্টিতে সফলতম বছর শেষ হলো বাংলাদেশের। ৩০ ম্যাচ খেলে এ বছর ১৫টি ম্যাচ জিতেছে তারা। এই সংস্করণে লিটনদের পরের ম্যাচ আগামী ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বকাপে।











