বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস থেকে মানবজাতির মুক্তির প্রার্থনায় চট্টগ্রামে উদযাপিত হয়েছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। করোনা পরিস্থিতিতে উৎসবের আয়োজন কিছুটা ম্লান হলেও ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাসহ অন্যান্য অনুষঙ্গের তেমন কোনো কমতি ছিল না। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে নগরী ও জেলার ১৪টি গির্জায় ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বড়দিন উপলক্ষে গির্জাগুলোকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। এতে গোশালা স্থাপন, রঙিন কাগজ, ফুল ও আলোর বিন্দু দিয়ে ক্রিসমাস ট্রিসহ নানা আয়োজনে সাজানো হয়।
পাথরঘাটা রাণী জপমালা গির্জা : প্রতিবছরের মত এবছরও বড়দিনে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বড় আয়োজন হয়েছে নগরীর পাথরঘাটায় রাণী জপমালা গির্জা ও আর্চবিশপ ভবনে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় ওই গির্জায় মূল প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল আয়োজন। এসময় বাংলায় এই প্রার্থনায় পৌরহিত্য করেন জপমালা রাণী গির্জার পাল পুরোহিত ফাদার সুব্রত বনিফাস। শুক্রবার আর্চবিশপের অনুপস্থিতিতে দায়িত্বপালনরত চট্টগ্রাম ধর্মপ্রদেশের প্রশাসক ফাদার লেনার্ড সি. রিবেরু’কে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানাতে দিনভর আর্চবিশপ ভবনে জড়ো হয়েছিলেন বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ। সন্ধ্যা ৬.৩০টায় চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের প্রতিনিধি হিসেবে তার ব্যক্তিগত সহকারী রাহুল দাশ এবং বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু জিনবোধি ভিক্ষু উপস্থিত থেকে ফাদার লেনার্ডের সাথে বড়দিনের কেক কাটেন। বেলা ১১.৩০টায় সিএমপি কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর উপস্থিত হয়ে বড়দিনের কেক কাটেন এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
বান্দরবান : বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, নানা আয়োজনে বান্দরবানে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন পালিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। জেলা সদরে ব্যাপটিস্ট গীর্জা ও ফাতেমা রানী ক্যাথলিক গীর্জায় আয়োজন করা হয় সমবেত প্রার্থনা। সকাল থেকেই খ্রিস্টান ধর্মালম্বী শিশু নারী ও পুরুষেরা সমবেত প্রার্থনার মিলিত হয়ে আগামী দিনের অনাগত সুখের জন্য বিশেষ প্রার্থনা করে, প্রার্থনায় আত্মশুদ্বির মধ্য দিয়ে নতুন বছরের সুখ শান্তির প্রত্যাশা করে সকলে।
নাইক্ষ্যংছড়ি : নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি জানান, বড়দিন পালনে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সীমান্তবর্তী দুর্গম বাইসাং পাড়ার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ত্রিপুরা সম্প্রদায়। গতকাল শুক্রবার দিনটি উপলক্ষে তারা তাদের নব প্রতিষ্ঠিত গির্জায় প্রার্থনায় সারা দেশের মানুষের মঙ্গল কামনা করেন। এরপর তারা একে অপরকে নানা ধরনের উপহার দেয়ার পাশাপাশি করেন শুভেচ্ছা বিনিময়। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরের দুর্গম পাহাড়ে চলে এ উৎসব। এতে চাকমা, ত্রিপুরা, মার্মা, ম্রো এবং বাঙালি জনগোষ্ঠীর অনেক লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
বড়দিন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক শফিউল্লাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন, বান্দরবান জেলা পরিষদ সদস্য ক্যানোওয়ান চাক, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীমা আক্তার প্রমুখ।