ব্রয়লার মুরগির দামে রেকর্ড

খাদ্য ও বাচ্চার দাম বৃদ্ধি করে সিন্ডিকেট কারসাজির অভিযোগ খামারিদের

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৭ মার্চ, ২০২৩ at ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ

ব্রয়লার মুরগির দাম সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে একজন ক্রেতাকে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি কিনতে হচ্ছে ২৫০ টাকায়। অথচ এক সময় ব্রয়লার মুরগির দাম নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নাগালে ছিল। গত ছয় মাস ধরে অব্যাহত দাম বৃদ্ধির ফলে এখন অনেকের পাতে আর মুরগির মাংস স্থান পাচ্ছে না।

পোল্ট্রি খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত এক বছর ধরে খাদ্য ও বাচ্চার অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে মুরগির উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। এক বছর আগে যে খাদ্যের বস্তার দাম ছিল ২ হাজার ১০০ টাকা, এখন সেটি হয়ে গেছে ৩ হাজার ৬০০ টাকা। এছাড়া একটি একদিনের মুরগির বাচ্চার দাম ২০২৫ টাকা থেকে হয়েছে ৬০ টাকা। খাদ্যের মধ্যে গত ২০২০ সালের মাঝামাঝি প্রতি কেজি ভুট্টার দাম ছিল ১৭ দশমিক ৩০ টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি শুকনা ভুট্টার দাম ৩৮ টাকার বেশি। পোলট্রি খাদ্যে ভুট্টার ব্যবহার হয় ৬০ শতাংশ। এছাড়া সয়াবিন খইলের ব্যবহার শতকরা ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। যে সয়াবিন খইলের দাম ২০২০ সালে প্রতি কেজি ছিল ৩৫ টাকা বর্তমানে তা ৮৪ টাকার বেশি। বাড়তি এই ব্যয় সংকুলান করতে না পেলে অনেক ছোট খামারি ব্যবসা ঘুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন।

এদিকে জেলা প্রাণীসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর ও বিভিন্ন উপজেলায় নিবন্ধিত ব্রয়লার মুরগির খামার রয়েছে প্রায় ৫ হাজার। এরমধ্যে বর্তমানে ৩ হাজার ৮০০টি চালু হয়েছে। এছাড়া লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে ৪১৬টি।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে বর্তমানে প্রায় ৬৫৭০ হাজার ছোটবড় খামার আছে। ২০১৬ সালে ব্রয়লার মুরগির মাংসের বার্ষিক উৎপাদন ছিল ৫ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন, ২০১৭ সালে ৫ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন এবং ২০১৮ সালে ছিল ৫ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৯ সালে সেটি দাঁড়ায় ৫ লাখ ২ হাজার মেট্রিক টনে। এছাড়া ২০২০, ২০২১ এবং ২০২২ সালে উৎপাদন ছিল সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের জীবিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে জড়িত, যার প্রায় ৪০ শতাংশই নারী।

জানতে চাইলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রিটন প্রসাদ চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ব্রয়লার মুরগির বাজার এখন সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে। এক ইউক্রেনরাশিয়া যুদ্ধের অজুহাতে পোল্ট্রি খাদ্য আমদানিকারকরা কয়েক দফা খাদ্যের দাম বাড়িয়েছে। এছাড়া একদিনের মুরগির বাচ্চার দাম বেড়েছে দ্বিগুনেরও বেশি। খরচ যতই বাড়ুক, মুরগির বাচ্চার দাম কোনো অবস্থাতেই ৩০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এই খাতে দেখার এখন কেউ নেই। গ্রামে গঞ্জের অনেক গরীব লোকজন বিভিন্ন এনজিও থেকে ৫০ হাজার কিংবা ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে খামার চালু করে। সেই টাকা পরিশোধ করতে না পারলে তাদের খামারের টিন পর্যন্ত খুলে নিয়ে যায় তারা। অথচ এখন এক শ্রেণীর বড় বড় গ্রুপ চায়নিজেরাই মুরগির বাচ্চা ফুটাবে, নিজেরাই মুরগি বড় করে বিক্রি করবে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের প্রচুর যুবক বেকার হয়ে যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২৬ মার্চের অনুষ্ঠানও নতুন শহীদ মিনারে হচ্ছে না
পরবর্তী নিবন্ধ১৮ মার্চ থেকে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত মালিকদের