তিন বছর আগে এই জুলাই মাসেই বরিস জনসনের বৃহস্পতি ছিল তুঙ্গে, ব্রেক্সিট নিয়ে বেহাল দশায় টেরিজা মে-র পদত্যাগের পর নেতৃত্ব নির্বাচনে জিতে কনজারভেটিভ দলের প্রধানের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন জনসন। দেড় যুগের সাংবাদিকতা আর রাজনৈতিক জীবনের নানা উত্থান-পতন পেরোনো জনসন ২০১৯ সালের জুলাইয়ে ঠিকানা গেড়েছিলেন ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে। তিন বছর পর সেই জুলাই মাসেই ১০ ডাউনিং স্ট্রিট ছাড়ার ঘোষণা দিতে হচ্ছে তাকে।
অর্থনৈতিক সংকট, মূল্যস্ফীতি আর লকডাউনের বিধি লঙ্ঘন করে মদের পার্টির কেলেঙ্কারির জেরে সমর্থনের পড়তি দশা, দলে একা হয়ে পড়া জনসন এই কিছুদিন আগেও আস্থা ভোটে জিতে দলের ভেতর তার শক্ত অবস্থানের প্রমাণ দিয়েছিলেন। খবর বিডিনিউজের।
দলের ভেতর অনাস্থা : উদ্ভট কাণ্ড আর উল্টোপাল্টা মন্তব্য করে নিয়মিতই দলের নেতাদের বিব্রত করেছেন জনসন। তার দলের অনেক প্রভাবশালী নেতাই তার কট্টর সমালোচক হয়ে উঠেছিলেন। তারমধ্যে জনসন এ বছরের শুরুতে ক্রিস পিনচারকে দলের ডেপুটি চিফ হুইপের পদে নিয়োগ দিলে দলের অনেক নেতা তার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরাসরি আপত্তি জানান। পরে অবশ্য জনসন বলেছেন, তার ওই সিদ্ধান্ত ‘অত্যন্ত ভুল’ ছিল।
মহামারী, লকডাউন ও মদেরপার্টি : বিশ্ব যখন কোভিড-১৯ মহামারীর দখলে, জনসনের ভাগ্যেও যেন শনির দশা শুরু হয়। করোনা ভাইরাসকে শুরুতে গুরুত্ব না দেওয়া এবং এটি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা বিশ্বনেতাদের একজন জনসন।
উপ-নির্বাচনে ধরাশায়ী : দলের ভেতর আস্থাহীনতা, মদের পার্টির কেলেঙ্কারিতে নিজের ইমেজ নিয়ে দারুণ সংকটে পড়া জনসনের জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আসে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের দুটি আসনের উপ-নির্বাচন। যেখানে ধরাশায়ী হয় তার দল কনজারভেটিভ পার্টি। পরাজয়ের মুখে পদত্যাগ করেন দলের সহ-চেয়ারম্যান অলিভার ডাউডেন।
বরিস জনসনের জন্ম পরিচয় : পিতৃকুলের দিক থেকে জনসনের আছে একইসঙ্গে ব্রিটিশ ও তুর্কি উত্তরাধিকার। তার দাদার বাবা আলি কামাল ছিলেন অটোমান সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। উদারপন্থি সাংবাদিক সুলতানের গ্র্যান্ড উজির (প্রধানমন্ত্রী) ফরিদ পাশার মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
সাংবাদিকতা ও রাজনীতি : ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা হিসেবে কিছুদিন কাজ করার পর জনসনের সাংবাদিকজীবন শুরু হয়। ১৯৮৭ সালে টাইমসে প্রতিবেদক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর একজনের উদ্ধৃতি জাল করায় চাকরি হারাতে হয় তাকে। ডেইলি টেলিগ্রাফে জনসন ইউরোপ বিষয়ক সংবাদদাতা ছিলেন ৫ বছর।